জমি রেজিস্ট্রির যে দলিল লেখা হয় তা পড়তে গেলে অনেক সময় মাথার চুল পড়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এজন্য দলিল লেখকদের স্পষ্ট করে লেখার আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রী। এছাড়া তাদের কাজটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার কথা বলেছেন তিনি। তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাসও দেন মন্ত্রী।
শনিবার দুপুরে (৪ মার্চ) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল-২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দলিল লেখদের স্পষ্ট করে লেখার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বাস করেন, মাঝে মাঝে দলিল পড়তে গেলে মাথায় যা চুল আছে তাও পড়ে যায়। এরকম হাতের লেখা। দলিল লেখকদের সবচেয়ে বড় পুঁজি হাতের লেখা, তাদের সবচেয়ে বড় সম্পত্তি হচ্ছে হাতের লেখা, এটা হচ্ছে তাদের সবচেয়ে বড় পুঁজি। আপনাদের হাতের লেখা যার ভালো না, তার লেখাটা চেষ্টা করলেই ভালো হয়। আইনটা জানা, আইনও জানতে হয়। স্ট্যাম্পট অ্যাক্ট জানতে হয়, সিভিল প্রসিডিউর জানতে হয়। সবকিছু জানতে হয়, এর জন্য প্রশিক্ষণ দরকার। এটার ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু প্রশিক্ষণটা কীভাবে হবে, এটা আমাকে একটু সময় দেন, আমি আগামী নির্বাচনের পর নূরে আলমসহ (দলিল লেখক সভাপতি) আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই একটা ছক তৈরি করব, এরপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবো।
আনিসুল হক বলেন, দলিল লেখকরা অন্যায় করলে আসামি হবেন, অন্যায় না করলে হয়রানিমূলকভাবে আসামি করা যাবে না। দলিল লেখকরা অত্যন্ত বিবেচেক, দেশের উন্নয়ন জনগণের কাছে পৌঁছে দেন। দেশে কী হচ্ছে সেটা জনগণকে জানান।
দলিল লেখকদের প্রশিক্ষণ ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, দেখুন এটা অর্থের ব্যাপার, তাই না? আমি আপনাদের মন জয় করার জন্য আর আপনারা আমাকে বাহবা দেবেন, এ কারণে এখন একটা ওয়াদা দিলাম- আমি এই ক্যাটাগরির না। আমি আপনাদের দাবিটা আমাদের সবার অবিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছাবো। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সবকিছু বিবেচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবো।
মন্ত্রী বলেন, দলিল লেখকদের অপকার হয় এমন কোনো আইন এখনো করা হয়নি। দলিল লেখাটা অত্যন্ত প্রয়োজন, সাবরেজিস্ট্রার অফিস অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমি যখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেলাম, এককথায় তিনি রাজি হয়ে গেলেন যে, প্রত্যেকটা উপজেলায় একটা করে সাবরেজিস্ট্রি অফিস হবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটা উপজেলায় একটা করে সাবরেজস্ট্রি অফিস হবে। এটাকে বলা হবে সাবরেজিস্ট্রি কমপ্লেক্স। এটাকে কমপ্লেক্স বলা হবে এ কারণে যে, এখানে যারা জমি বিক্রি করতে আসবেন এবং যারা কিনতে আসবেন তারা বসতে পারবেন। সেই সঙ্গে যারা দলিল লিখবেন তাদেরও বসার জায়গা হবে।
আনিসুল হক বলেন, আপনারা দাবি করছেন, আমরা বসার ব্যবস্থা করছি। এই বিল্ডিং হলে আপনাদের বসার জায়গা হয়ে যায়। শেখ হাসিনার সরকারের আমলে কি আপনাদের আকাশের নিচে বসাতে পারি? আপনারা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও সম্পাদককে স্বীকৃতি দিতে বলেছেন, আমি এটা দিলাম।
আইনমন্ত্রী বলেন, যুক্তির কথা বললে আপনারাও শোনেন, আমিও শুনি। এখন কথা হচ্ছে যে, দাবি-দাওয়ার কথাও শেষ করলাম, আরও কিছু আছে, এগুলো পড়বো। আপনাদের পরিষ্কার করতে চাই, যেটা যুক্তিসঙ্গত হবে, ইনশাআল্লাহ্ সেটা মেনে নেব। যেটা যুক্তিসঙ্গত হবে না সেটা আবার আপনাদের কাছে নিয়ে আসবো। এটা আপনাদের সঙ্গে আলোচনায় থাক। আপনাদের তো মনে আছে, আমারও মনে রাখতে হবে, আমরা কখনোই কাউকে আমাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করতে দেব না।
আইনমন্ত্রী বলেন, আপনাদের দায়িত্ব কিন্তু অপরিসীম। আপনারা জনগণের পরম বন্ধু। আপনারা অত্যন্ত বিচক্ষণভাবে, অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গে জনগণের এই দায়িত্ব পালন করে থাকেন। আপনাদের কাজটা অত্যন্ত পবিত্র। তার অত্যন্ত কষ্টের টাকা দিয়ে একটা সম্পত্তি কেনেন, আর একজন তার কষ্টের সময় সম্পত্তিটা বিক্রি করে টাকা লেনদেন করে থাকেন, আপনারা সেই কাজটা সহজ করে দেন।
বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মো. নূর আলম ভূ্ঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতির উপদেষ্টা কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. নজরুল ইসলাম বাবু, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব ও নিবন্ধন অধিদফতরের সাবেক মহাপরিদর্শক ড. খান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান।
ইবাংলা/এসআরএস
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.