আফগানিস্তানকে গুঁড়িয়ে রেকর্ড জয় টাইগারদের

বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজ ২০২৩

তৃতীয় দিনেই জয়ের স্বপ্নটা দেখেছিল বাংলাদেশ দল। ওই দিনে কিছু কাজ করে রেখেছিল লিটন-মমিনুলরা। বাকি কাজ করে চতুর্থদিন। পাহাড়সমান রানের লক্ষ্যে আফগানিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে তাসকিন আহমেদের বোলিয়েং প্রথম সেশনেই সব কয়েকটি উইকেট হারায় সফরকারী আফগানরা। ৬৬২ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে আফগানিস্তানের ইনিংস গুটিয়ে যায় ১১৫ রানে। তাতেই ৫৪৫ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। যা টেস্ট ইতিহাসে টাইগারদের সবচেয়ে বড় জয়। সেই সঙ্গে টেস্ট অধিনায়কত্বের অভিষেকেই রাঙালেন লিটন দাস।

একটি টেস্টে কত ঘটনা ঘটে গেল, নিজাত মাসুদের অভিষেক বলে উইকেট, এরপর পাঁচ উইকেট, শান্ত-জয়ের রেকর্ড দ্বিতীয় উইকেট জুটি, দেশের মাঠে নাজমুল হোসেন শান্তর প্রথম সেঞ্চুরি, পরের ইনিংসেও সেঞ্চুরি করে গড়েন কীর্তি, মুমিনুল হক ২৬ ইনিংস পর পেলেন শতরানের দেখা, রেকর্ডসংখ্যক লিড, ইনিংসের প্রথম বলেই শরিফুলের উইকেট, ফাইফার হয়েও হল না তাসকিনের; তবে সব ছাপিয়ে বাংলাদেশ পেল টেস্ট ইতিহাসের সবচেয় বড় জয়। মিরপুরের টেস্টে যেন এক রেকর্ড ভাঙা-গড়ার।

আরও পড়ুন>> বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজ: বড় জয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ

সিরিজের একমাত্র টেস্টে আফগানিস্তানকে শুরুর দিন থেকেই চাপে রেখেছিল বাংলাদেশ। যে চিত্র বহাল ছিল চতুর্থ দিন সকালেও। টস হেরে শুরুতে ব্যাটিং করতে নেমে ৩৮২ রান করেছিল বাংলাদেশ দল। জবাবে ১৪৬ রানে অলআউট হয় আফগানরা। ২৩৬ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে ৪ উইকেটে হারিয়ে ৪২৫ রান ইনিংস ঘোষণা করে টাইগার বাহিনী। ৬৬২ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সফরকারী আফগানরা থামে ১১৫ রানে। ফলে সিরিজের একমাত্র টেস্টে ৫৪৬ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

আগের দিন ২ উইকেট আজকের দিন শুরু করেছিল আফগানিস্তান চতুর্থ দিন ব্যাটিংয়ে নেমে দিনের শুরুতেই উইকেট হারিয়ে বসে সফরকারীরা। এবাদত হোসেনের করা প্রথম ওভারের পর বল হাতে নেন শরিফুল ইসলাম। দুটি সিঙ্গেলস নিলেও এই ওভারে ক্রমাগত ডিফেন্স করে যায় ব্যাটাররা।

তবে দিনের তৃতীয় ওভারেই বাংলাদেশকে খুশির সংসবাদ এনে দেন এবাদত। নাসির জামালকে ছয় রানে সাজঘরে ফেরান তিনি। দলীয় ৪৮ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় আফগানিস্তান। নাসির ফেরার পর রহমত শাহকে সঙ্গ দিতে থাকেন আফসার জাজাই। যদিও বেশীক্ষণ তাকে সঙ্গ দেয়া হয়নি আফসারের।

দারুণ বোলিং করতে থাকা শরিফুল ইসলামের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়ার আগে ছয় রান আসে তার ব্যাটে। আউটসাইড অফে শরিফুলের লেংথ ডেলিভারিটি গালি অঞ্চলে তুলে দেন আফসার জাজাই। সহজ ক্যাচটি লুফে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দলীয় ৬৫ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় আফগানিস্তান।

এরপর হাশমতউল্লাহ শাহিদির জায়গায় কনকাশন সাব হিসেবে নামা বাহির শাহও ফেরেন দ্রুত। তার উইকেটটি নেন শরিফুল। খানিক পর তাসকিন আহমেদের গতি সামলাতে না পেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বসেন রহমত শাহ। এর এক ওভার পর তাসকিনের বিপক্ষে বোল্ড হন করিম জানাত।

২ উইকেট তুলে নেয়া তাসকিন আরও দুইবার আঘাত হানেন লাঞ্চ সেশনের ঠিক আগে। ফলে লাঞ্চের বিরতি পিছিয়ে দেয়া হয় আধা-ঘন্টা। যদিও শেষ উইকেটে একবার রিভিউ নিয়ে ও একবার নো বলে বেঁচে যান জহির খান। ৪ উইকেট নেয়া তাসকিনকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় সেখানেই।

যদিও তাসকিনের ওভারের শেষ বলে জহির খানের হাতে বল লাগায় রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। ৯ উইকেট হারালেও ইনিংস শেষ হয়ে যায় আফগানিস্তানের। ৫৪৬ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদের শিকার ৪ উইকেট।

আরও পড়ুন>> ৩ দিনের সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী

এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩৮২ রান তোলে বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরি এবিং মাহমুদুল হাসান জয়ের ৭৬ রানের ইনিংসে এই সংগ্রহ পায় তারা। জবাবে ১৪৬ রানেই অলআউট হয় আফগানিস্তান।

বাংলাদেশের হয়ে চারটি উইকেট নেন এবাদত। দুটি করে উইকেট নেন শরিফুল, তাইজুল ইসলাম এবং মেহেদী হাসান মিরাজ। তারপর আফগানিস্তানকে ফলোঅনে না পাঠিয়ে আবারও ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। এবারও সেঞ্চুরি আসে শান্তর ব্যাটে।

তার ১২৪ এবং মুমিনুল হকের অপরাজিত ১২১ রানের ইনিংসে ৪ উইকেটে ৪২৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। আফগানদের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৬৬২ রানের। টেস্ট ক্রিকেটে এটিই বাংলাদেশের দেয়া সর্বোচ্চ রানের লক্ষ্য। ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে টেস্টে ৪৭৭ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর-

বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস): ৩৮২/১০ (শান্ত ১৪৬, জয় ৭৬; মাসুদ ৫/৭৯)

আফগানিস্তান (প্রথম ইনিংস): ১৪৬ (৩৯ ওভার) (নাসির ৩৫, আফসার ৩৬; এবাদত ৪/৪৭)

বাংলাদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস): ৪২৫/৪ (ইনিংস ঘোষণা) (৮০ ওভার) (শান্ত ১২৪, মুমিনুল ১২১*, জাকির ৭১, লিটন ৬৬*; জহির ২/১১২)

আফগানিস্তান (দ্বিতীয় ইনিংস): ১১৫ অল আউট (রহমত ৩০) (তাসকিন ৪/৩৭)

ইবাংলা/এসআরএস 

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us