উন্নত বিশ্বে নার্সিং পেশা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ সেবামূলক কাজ। আধুনিক বিশ্বে এ পেশা সব চেয়ে বিশ্বস্থ সেবা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বাংলাদেশে এ পেশার মর্যাদা অনেক। বাংলাদেশ সরকার এ পেশার মর্যাদা দিতে গিয়ে এর নিয়োগ প্রক্রিয়া সরাসরি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের উপর ন্যস্ত করেছে। নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মাধ্যমে এদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
সরাসরি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের নিয়ন্ত্রানাধীন তবে অধিদপ্তর এদের কাজের তদারকির দায়িত্বে রয়েছে। সারা বাংলাদেশে সরকারি নিয়োগ প্রাপ্ত প্রায় ৪৬ হাজার নার্স। সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োজিত রয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে হাজার হাজার নার্স এ পেশায় নিয়োজিত আছে।
আরও পড়ুন…জাতিসংঘের খাদ্যবিষয়ক সম্মেলনে ৫ প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর
নার্সদের রয়েছে রেজিস্টার্ড সংগঠন যার নাম বাংলাদেশ নার্স এসোসিয়েশন। সরকার এদের নানা সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করেছে তারপরও নার্সদের থেকে আশাব্যঞ্জক সেবা জনগন পাচ্ছে না। নানা ভাবে প্রতারিত হচ্ছে এবং কতিপয় নার্স টাকা পয়সা ছাড়া কাজ করে না।
অন্যদের মত এরাও স্বপ্ন বিলাসী। গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। অথচ আধুনিক নার্সিং সেবার অগ্রদূত সারা বিশ্বের নার্সিং সেবার অনুপ্রেরণা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলকে এই সেবার আদর্শ হিসাবে ভাবার চিন্তাই করে না।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ৬৫০ জন নার্স কাজ করে বিভিন্ন বিভাগে। এ ছয় শতাধিক সেবিকার প্রধান হলেন শহিদা খাতুন। কিশোরগঞ্জ থেকে বদলি হয়ে এবং কাঙ্খিত প্রমোশন নিয়ে বর্তমানে সুপারেন্টেন্ড (তত্ত্বাবধায়ক) এর দায়িত্ব পালন করছেন।
মেডিকেল কলেজ হাপাতালের নার্স পরিচালনার প্রধান হয়ে কোন সুযোগ সুবিধাই হাত ছাড়া করছেন না। কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কাই করেন না। নিজের স্বার্থ সিদ্বির জন্যে নার্সদের এবং হাসপাতালের ক্ষতি করতে কোন দ্বিধাবোধ করেন না। রোগিদের সুযোগ সুবিধা দেয়ার নাম করে রোগীদের কাজ থেকে বাড়তি টাকা আদায়, রোগীদের ঔষধ পথ্য না দিয়ে তা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিক্রি করে বিক্রিত টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়া, রোগীদের ভর্তি ও সিট বাণিজ্য করে দরিদ্র অসহায় ও প্রতিবন্ধী রোগীদের থেকে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ, নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত সুন্দরী নার্সদের সাথে ডাক্তার ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন বলে হাপাতাল সূত্রে জানা যায়।
আরও পড়ুন…ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৯, হাসপাতালে ২২৯৩
অনেকের মতে তার সকল অপকর্ম ধামা-চাপা দেয়ার জন্যে এই সব কূটকৌশল মাত্র। অনৈতিক সম্পর্কের কারনে তাকেও একবার বদলি করা হয় বলে ফাইল পত্র থেকে জানা যায়। কিন্তু উর্ধ্বতন মহলের সাথে সখ্যতার কারনে সকল অপকর্ম মাপ পেয়ে যায়। যার ফলে অল্প সময়ে নার্সের চাকরি করেও বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়ে যান। ফ্লাট ও প্লটের মালিক হয়ে বেশভূষায় ও চলাফেরা অনেক পরিবর্তন চলে আসে।
তার অবসর যাওয়ার সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই সে সতর্ক হয়ে তার অপকর্মের ফাইল পত্র গুলো গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করছে বলে সূত্র জানায়।
এবিষয়ের সত্যতা জানতে শহীদার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার কর্মস্থলে গিয়েও সাক্ষাত পাওয়া যায় নি।
এ সেবিকা সেন্ডিকেটের আরেকজন তিনি হলেন, ফাহিমা খাতুন। গাইনী অপারেশন থিয়েটারের ইনচার্জ। তার বিরুদ্ধেও ঔষধ ব্যান্ডেজ ও ওটির যন্ত্রপাতির বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। ঔষধের ব্যাগসহ ধরা পরার কারনে তাকে বদলীও করা হয়। কিন্তু টাকার জোরে আবার ফিরে আসেন। ইনচার্জ হিসাবে দীর্ঘদিন ওটির দায়িত্ব পালন করেন। তার স্বামী নার্সদের থেকে গজ ব্যান্ডেজ ও দামী ঔষধ বিক্রি করে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করতেন।
এমনকি করোনাকালে পিপি বিক্রি করেও অবৈধপন্থায় আয় করতেন। তার অপকর্মের কারনে তাকে নাসির নগর ও মহাখালীতে বদলী করা হয়। ড্রাগলিস্ট অনুযায়ী ঔষধ দেয়ার নাম করে রোগী থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। স্বল্প সময়ে অবৈধ উপার্জনে মোহাম্মাদপুরে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ফ্লাট কিনেন, দেশের বাড়ি জামালপুরে ৯ তলা ভবনের মার্কেট করেন এবং পৈত্রিক ভূমিতে দেখার মত আলিশান বাড়ি করেন।
আরও পড়ুন…ফরিদপুরে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড
সে এবং শহিদা খাতুন (তত্ত্বাবধায়ক) ২ জনেই মিলে টাকা পয়সা নিয়ে অনেক জুনিয়র নার্সকে ইনচার্জ বানিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তার সাথে মুঠোফোনে এই অভিযোগের ব্যপারে জানতে চাইলে সে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন এগুলো দুষ্ট চক্রের কারসাজি।
এ সেন্ডিকেটের আরেকজন তিনি হলেন মঞ্জুয়ারা বেগম। যিনি ডায়ালাইসিসের ইনচার্জ। ঔষধ বিক্রি ও চারিত্রিক অভিযোগের কারনে ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হলেও চেষ্টা তদবিরের মাধ্যমে ভ্যাকসিনের দায়িত্বে চলে আসেন একই সাথে ডায়ালাইসিসের দায়িত্ব পালন করছেন। মঞ্জুয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে ঔষধ, ব্যান্ডেজ ও ডায়ালাইসিসের যন্ত্রপাতি বিক্রির অভিযোগ ওঠে। মৃত রোগী থেকে ও ২৬ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছে বলে সূত্র জানায়।
এই সিন্ডিকেটের আরেকজন সদস্য সিনিয়র স্টাফ নার্স আলেয়া খাতুন। দীর্ঘদিন গাইনী ওয়ার্ডের দায়িত্বে ছিলেন বর্তমানে সেবা তত্ত্বাবধায়ক কে ম্যানেজ করে বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ওয়ার্ডের দায়িত্ব পালন করছে। তার বিরুদ্ধে ও ওষুধ বিক্রি ও সীট বানিজ্যের অভিযোগ রয়েছে এবং কমিশন বানিজ্য খুব পারদর্শী বলে বিভিন্নে সূত্রে জানা যায়।
তত্ত্বাবধায়ক শহিদা বেগমের ছত্রছায়া এবং তার সহযোগিতায় ফাহিমা খাতুন, মঞ্জুয়ারা বেগম,আলেয়া খাতুন এরা একাধিক বার এবং অনেক বছর ইনচার্জ এর দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পায়। এতে নার্সিং বিভাগের সেবা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে এবং সাধারণ নার্সদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
নার্সিং অধিদফতরের নীতিমালা অনুযায়ী একজন নার্স ২ বছরের বেশি চার্জে থাকতে পারবে না এবং একাধিকবার চার্জে না থাকার নিয়ম থাকলে থাকলেও বর্তমান সেবা তত্ত্বাবধায়ক তার পছন্দনীয় নার্সদের কাছ থেকে বিভিন্ন উপটৌকন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে বার বার ইচার্জের দায়িত্ব প্রদান করেন। যাহা নীতিমালা বহির্ভুত।
আরও পড়ুন…রাজধানীতে আ.লীগের তিন সংগঠনের সমাবেশ ২৭ জুলাই
এছাড়াও সেবা তত্ত্বাবধায়ক শহীদার স্বামী সুবিধাভোগি নার্সদের বাসায় বাসায় গিয়ে বিভিন্ন ধরণের উপহার গ্রহণ করেন। আর সেবা তত্ত্বাবধায়ক শহীদার অপছন্দনীয় নার্সদের সঙ্গে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ অশালীন ও অসৌজন্যমুলক আচরণ করেন।
কিন্তু এদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। নার্সিং সিস্টেম অনুযায়ী রাত্রিকালীন ডিউটি সমান হারে থাকলেও ফাহিমা খাতুন ও মঞ্জুয়ারা বেগম বিগত ১ বছর যাবৎ রাত্রিকালীন ডিউটি করে না বলে অনুসন্ধানে জানা যায়। জরুরি বিভাগের নার্স খালেক, উজ্জ্বল, কাটাছেঁড়া রোগীর কাছ থেকে ৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা না পেলে রোগী টাচ করে না বলে রোগীর আত্মীয় স্বজন এ প্রতিবেদককে জানায়।
এবিষয়ের সত্যতা জানতে অভিযুক্ত উপরোক্ত ব্যক্তিদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তাদেরকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার কর্মস্থলে গিয়ে সাক্ষাত চাইলে, তারা মিডিয়ার সামনে কোন ধরণের সাক্ষাত দিতে বাধ্য নন বলে প্রতিবেদককে জানান।
দীর্ঘদিন থেকে সেবার নামে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নার্সদের একটি সংঘবদ্ধ অবৈধ চক্র গড়ে ওঠেছে। এ দুষ্ট চক্রটি হাপাতালের পরিবেশ নষ্ট করছে এবং রোগীদের সেবার নামে অহেতুক হয়রানী ও ভোগান্তি সৃষ্টি করছে। এ সেন্ডিকেটদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সদের সেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং ত্যাগী ও কর্ম উদ্যোগী নার্সদের প্রনোদনার ব্যবস্থা করে নার্সদের সেবার মান অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।
চলবে…
ইবাংলা /আইএস
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.