ইসলাম যে স্বভাবগুলোকে ক্ষতিকর বলেছে

র্ধম ডেস্ক

ভালো এবং মন্দ স্বভাব নিয়েই মানুষের জীবন। ভালো স্বভাব যেমন মানুষকে ভালোর দিকে টানে তেমনি মানুষের এমন কিছু চারিত্রিক স্বভাব রয়েছে, যেগুলো খুবই নিকৃষ্ট ও অপছন্দনীয়। মন্দ স্বভাব তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।

ইসলাম মানুষকে ভালো স্বভাব গড়ার শিক্ষা দেয়, সেই সঙ্গে মন্দ স্বভাব থেকে ফিরে আসতে উৎসাহ প্রদান করে। প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য মন্দ স্বভাবকে পরিত্যাগ করা।কোরআন-হাদিসে এসব স্বভাবের ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই স্বভাবগুলো দুনিয়ার সফলতার পাশাপাশি মানুষের পরকালকে বরবাদ করে দেয়।

ইসলাম যে সব মন্দ স্বভাবকে ক্ষতিকর বলেছে সেগুলো হলো-

অহংকার:-
অন্যকে দুর্বল মনে করা, সত্যকে অস্বীকার করা এবং মানুষকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা অহংকারের বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত নিয়ে অহংকার করা থেকে ইসলাম বিরত থাকতে বলেছে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, মানুষ চায় যে তার পোশাক সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, এটাও কি অহংকার? হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ সুন্দর, তিনি সুন্দর ভালোবাসেন। প্রকৃতপক্ষে অহংকার হচ্ছে দম্ভভরে সত্য ও ন্যায় অস্বীকার করা এবং মানুষকে ঘৃণা করা। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ১৬৬)

কৃপণতা:-
কৃপণ মানুষের প্রতি কোরআন ও হাদিসে নিন্দা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ প্রদত্ত অনুগ্রহ পেয়ে যারা কৃপণতা করে তারা যেন কিছুতেই মনে না করে যে এটা তাদের জন্য ভালো কিছু করবে। বরং এটা তাদের জন্য অতি মন্দ কাজ। যে সম্পদ নিয়ে তারা কৃপণতা করে কেয়ামতের দিন সে সম্পদ তাদের গলায় বেড়ি বানিয়ে দেওয়া হবে। আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর মিরাস কেবল আল্লাহরই জন্য। তোমরা যা কিছুই করো আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবগত। সুরা : আল ইমরান, আয়াত : ১৮০।

লোক দেখানো ইবাদত:-
লোক দেখানো ইবাদত করাকে লৌকিকতা বলা হয়। এটা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। আরবিতে এটিকে রিয়া বলে। শয়তান মানুষের ভেতরে ছলে বলে কৌশলে এই লৌকিকতা ঢুকিয়ে দেয়। আল্লাহ লৌকিকতার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি করে বলেছেন- অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাজির জন্য যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে উদাসীন। যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অন্যকে দেয় না। সুরা : মাউন, আয়াত : ৪ থেকে ৮।

অতিরিক্ত রাগ:
অতিরিক্ত রাগ মানুষের জন্য ক্ষতিকর। রাগের মাধ্যমে অপ্রত্যাশিত অনেক কিছু ঘটে যায়। কিছু মানুষ সামান্য কিছুতেই প্রচণ্ড রেগে যায়। এই রাগ তার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে একজন লোক এসে বলল, আমাকে কিছু শিখিয়ে দিন, তবে আমাকে বেশি বলবেন না, যাতে আমি তা মুখস্থ করতে পারি। তিনি বললেন, ক্রোধ প্রকাশ করো না, উত্তেজিত হইয়ো না। লোকটি তার কথার পুনরাবৃত্তি করলে প্রতিবারই তিনি বললেন, ক্রোধ প্রকাশ করো না, উত্তেজিত হইয়ো না। জামে তিরমিজি, হাদিস : ২০২০।

হিংসা করা:-
হিংসা হচ্ছে আত্মিক এক ধ্বংসাত্মক ব্যাধি। এটি মানুষকে তিলে তিলে ক্ষয় করে দেয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, তোমরা ধারণা করা থেকে বিরত থাকো। ধারণা বড় মিথ্যা ব্যাপার। তোমরা দোষ তালাশ করো না, গোয়েন্দাগিরি করো না, পরস্পর হিংসা পোষণ করো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করো না এবং পরস্পর বিরোধে লিপ্ত হইয়ো না। তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৬৪)

যশ-খ্যাতির মোহ:
এক ভয়ংকর ব্যাধির নাম যশ-খ্যাতির মোহ। এটি মানুষের ভেতরকে অন্তঃসারশূন্য করে দেয়। তখন ভালো কাজগুলো হয়ে যায় একদম প্রাণশূন্য। কাব ইবনে মালিক আল-আনসারি (রা.) বলেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগলের পালে ছেড়ে দেওয়া হলে তা যতটুকু না ক্ষতিসাধন করে, কারো সম্পদ ও প্রতিপত্তির লোভ এর চেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন করে। জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৬।

সম্পদের মোহ:-
মানুষের জীবনে ধনসম্পদ আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামত। তবে এর প্রতি অতিরিক্ত লোভ-লালসা ক্ষতিকর। অর্থের প্রতি অতিরিক্ত লালসা মানুষকে পশুর স্তরে নামিয়ে আনে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কসম আমি তোমাদের জন্য দরিদ্রতার আশঙ্কা করি না; বরং আমি আশঙ্কা করি যে তোমাদের কাছে দুনিয়ার প্রাচুর্য আসবে যেমন তোমাদের আগের লোকদের কাছে এসেছিল, তখন তোমরা সেটা পাওয়ার জন্য পরস্পর প্রতিযোগিতা করবে যেমন তারা করেছিল। আর তা তাদের যেভাবে ধ্বংস করেছিল তোমাদেরও ধ্বংস করে দেবে। সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪০১৫।

ইবাংলা/ জেএন

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us