ইসলামে গালি দেওয়া সম্পূর্ণ হারাম

ইসলাম ডেস্ক

রাগের বশীভূত হয়ে মানুষ একে অন্যকে গালি দেয়। মন্দ কথাবার্তা বলে। একে অন্যের সঙ্গে সীমালংঘন করে। যার পরিণাম ভয়াবহ। এতে সামাজিক অশান্তি ও মারামারির সৃষ্টি হয়। ইসলামি শরিয়তে এসব কথাবার্তা বলা হারাম তথা নিষিদ্ধ।ইসলামে অন্যকে গালি দেওয়া সম্পূর্ণ হারাম। যেকোনো কারণেই হোক, কাউকে গালি দেওয়ার অনুমতি নেই।
হাসি-কৌতুক ও ঠাট্টাচ্ছলেও অন্যকে গালি দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে অশোভনীয়।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা বিনা অপরাধে ঈমানদার পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা অবশ্যই মিথ্যা অপবাদ এবং স্পষ্ট অপরাধের বোঝা বহন করে। (সুরা আহযাব, আয়াত: ৫৮)

যার মধ্যে চারটি অভ্যাস আছে তাকে হাদিসে মুনাফিক বলা হয়েছে। এগুলোর কোনো একটি পাওয়া গেলেও সে মুনাফিক হিসেবে ধর্তব্য হবে। হাদিসের আলোকে সেগুলো হলো, ‘যখন তাকে বিশ্বাস করা হয়, সে বিশ্বাস ভঙ্গ করে। কথা বললে, মিথ্যা বলে। অঙ্গিকার করলে ভঙ্গ করে এবং বিবাদ-বিতর্কে উপনীত হলে অন্যায় পথ অবলম্বন করে। (বুখারি, হাদিস নং : ৩৪; মুসলিম, হাদিস নং : ১০৬)

অন্য হাদিসে আছে, মুমিন কখনো দোষারোপকারী, অভিশাপদাতা, অশ্লীলভাষী ও গালিগালাজকারী হয় না। (তিরমিজি, হাদিস নং : ২০৪৩)

গালিগালাজ, অশালীন ও অশ্লীল কথাবার্তা ইসলামি শরিয়তে নিষিদ্ধ। এ কথাগুলো বদ বা খারাপ চরিত্রের অন্তর্ভূক্ত। কাম-প্রবৃত্তি তাড়িত হয়ে মানুষ অশ্লীল কথাবার্তা বলে থাকে। আবার রাগের বশিভূত হয়ে অশালীন কথাবার্তা বলে থাকে। কোনো অবস্থাতেই অশ্লীল কথাবার্তা ও গালিগালাজ করা বৈধ নয়। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ প্রসঙ্গে বলেছেন-

سِبَابُ الْمُؤمِنِ فُسُوْقٌ قِتَالُهُ كُفْرٌ

কোনো মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসেকি এবং তার সঙ্গে লড়াই করা কুফরি।’ (কিতাবুল আদব, বুখারি)

ইসলামি শরিয়তে গালিগালাজ, অশালীন ও অশ্লীল কথাবার্তা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হলো- গালিগালাজ, অশ্লীল কথাবার্তা বলার সময় মানুষ সীমা লংঘন হয়ে যায়। কেউ যদি কারো বাবাকে গালি দেয় তো অপরজন তার বাবা-মাসহ সবাইকে গালি দিয়ে বসে। এভাবে সীমালংঘন হয়ে যায়। যার ফলে মারামারি ও ঝগড়াঝাটি ও রক্তপাতের মুখোমুখি হয় মানুষ।

পক্ষান্তরে প্রকৃত ঈমানদার ব্যক্তি কখনো এসব কথাবার্তায় নিজেকে জড়িত করে না। হাদিসে পাকে এসেছে-

لَيْسَ الُمُؤمِنُ بِالطَّعَانِ وَ لَا بِاللَّعَانِ وَ لَا الْفَاحِشِ وَ لَا الْبَذِىُّ

‘প্রকৃত ঈমানদার ব্যক্তি কারো প্রতি ভৎসনা ও লানত করে না এবং সে কোনো অশালীন এবং অশ্লীল কথাও বলে না।’ (তিরমিজি, মিশকাত)

যারা অশালীন ও অশ্লীল কথাবার্তা বলতে অভ্যস্ত, লোকেরা তাদের ঘৃণা করে। কেউ তাদের সঙ্গে মেলামেশা করতে চায় না। গালমন্দ করা অভদ্রতা ও সভ্যতার পরিপন্থী কাজ। এতে অন্য মানুষ কষ্ট পায়। আর কোনো মানুষকে কথা বা কাজ দ্বারা কষ্ট দেওয়াও নিষিদ্ধ। হাদিসে পাকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারেও সতর্ক করেছেন এভাবে-

اَلْمَسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُوْنَ مِنْ لِّسَانِهِ وَ يَدِهِ

প্রকৃত মুসলমান তো সেই ব্যক্তি, যার কথা ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপাদ থাকে।’ (বুখারি, মিশকাত)

মনে রাখতে হবে

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদর্শ। তিনি কেমন ছিলেন। তিনি কখনো কাউকে মন্দ বা কটু কথা বলেননি। কারো প্রতি রাগ হনননি। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গালিগালাজকারী, অশালীনভাষী এবং অভিসম্পাতকারী ছিলেন না। আমাদের কারো উপর তিনি নারাজ হলে শুধু এটুকু বলতেন যে, তার কি হল! তার কপাল ধুলিময় হোক।’ (বুখারি, কিতাবুল আদব)

মন্দ ও কটু কথার ব্যাপারে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবাইক এ মর্মে উপদেশ দিতেন যে, ‘তুমি রুঢ়-ব্যবহার এবং অশালীন আচরণ বা কথা বর্জন করবে।’ (বুখারি, কিতাবুল আদব)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, অশালীন ও অশ্লীল কথাবার্তা বলে কাউকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা। যে কোনো ধরনের মন্দ বা কটু কথা এবং গালিগালাজ করা সম্পূর্ণ অনুচিত।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অশালীন ও অশ্লীল কথাবার্তা এবং গালালিগালাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। সমাজ থেকে এ ধরনের মন্দ কথার চর্চা বন্ধ করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ইবাংলা/ জেএন

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us