১৭ লক্ষাধিক আফগান শরণার্থীকে পাকিস্তানে ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার। মঙ্গলবার তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আনওয়ার উল হক কাকার এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তত্ত্বাবধায়ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি।
সংবাদ সম্মেলনে বুগতি বলেন, তাদের কাছে যে কোনো দেশ বা তার নীতির চাইতে পাকিস্তানের নাগরিকদের নিরাপত্তা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের নাগরিকদের জান-মালের নিরাপত্তা রক্ষার্থে এই প্রথম ইসলামাবাদ এমন আল্টিমেটাম দিচ্ছে।
তত্ত্বাবধায়ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি বলেন, আগামী ১ নভেম্বরের মধ্যে সব অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে। ১ নভেম্বরের পর থেকে অভিযানে নামবে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সে সময় যদি কোনো অবৈধ অনুপ্রবেশাকারী ধরা পড়েন, তাহলে তাদের জোর করে নিজেদের দেশে পাঠানো হবে।
আরও পড়ুন>> রিজার্ভ এখন ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে: জাহিদ হোসেন
সরফরাজ বুগতি সরাসরি কোনো নাম উল্লেখ না করলেও ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে তিনি যে নিবন্ধনহীন আফগান শরণার্থীদের বুঝিয়েছেন, তা স্পষ্ট। কারণ পাকিস্তানে আফগানিস্তান ব্যতীত অন্য কোনো দেশের লোকজন শরণার্থী হিসেবে বাস করেন না।
হামলা বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ ইসলামাবাদ মঙ্গলবার ‘অবৈধ’ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন ঘোষণা করেছে। তবে তালেবান সরকার পাকিস্তানকে তাদের ‘অগ্রহণযোগ্য’ পদক্ষেপ পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে। আফগানিস্তানের শাসকরা বারবার পাকিস্তানে হামলাকারী জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, যেসব আফগান শরণার্থী সাধারণ পাকিস্তানিদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার জন্য ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহার করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাঠে নামবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী- বর্তমানে পাকিস্তানের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে নিবন্ধিত শরণার্থীর সংখ্যা ৮ লাখ ৮০ হাজার। অনিবন্ধিত শরণার্থী রয়েছেন ১৭ লাখের বেশি। যাদের কাছে কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এই শরণার্থীদেরই ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পাকিস্তান।
কাবুলে তালেবান প্রশাসনের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, আফগান শরণার্থীরা পাকিস্তানের নিরাপত্তা সমস্যার সঙ্গে জড়িত নয়। যতদিন তারা স্বেচ্ছায় পাকিস্তান ত্যাগ করছে ততদিন সেই দেশের উচিত তাদের আশ্রয় দেওয়া।
পাকিস্তানে আফগান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই আফগানদের ধরতে শুরু করেছে বিশেষ করে যাদের আইনি মর্যাদা আছে এবং থাকবে না। গত দুই সপ্তাহে এক হাজারের বেশি আফগানকে আটক করা হয়েছে।
পাকিস্তানের সীমান্তের কাছে বেলুচিস্তান প্রদেশটি প্রায়ই তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) বা পাকিস্তানি তালেবান এবং ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠীসহ সশস্ত্র বিদ্রোহিদের হামলার শিকার হয়।
গত সপ্তাহে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের মাস্তুংয়ে একটি মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আত্মঘাতী এ বোমা হামলায় ৫৫ জন নিহত হন। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শোভাযাত্রা করার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এই হামলা হয়। মাস্তুং আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের একটি জেলা।
ইবাংলা/এসআরএস
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.