বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানি বিল পরিশোধে ব্যাংকগুলোকে সহায়তা অব্যাহত রাখায় এমনটি হয়েছে বলে জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থার (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী বিপিএম-৬ নিয়মে রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি বছরের ১৩ জুলাই। তখন বিপিএম-৬ অনুযায়ী, দেশে রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন (২ হাজার ৩৫৬ কোটি) ডলার। তবে গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে রিজার্ভের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন (২ হাজার ৯৫ কোটি ৭৮ লাখ) ডলার। তার মানে, তিন মাসের ব্যবধানে রিজার্ভ কমেছে ২৬০ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
আরও পড়ুন>> হারের হ্যাটট্রিক টাইগারদের
২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি বা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেই রিজার্ভ ১৮ অক্টোবর কমে হয়েছে ২ হাজার ৬৬৮ কোটি (২৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন) ডলার। আইএমএফ হিসাব পদ্ধতি ‘ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম ৬)’ অনুযায়ী, রিজার্ভ বর্তমানে ২ হাজার ৯৫ কোটি ডলার। এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। প্রকাশ করা হয় না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৭ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এখন যে পরিমাণ প্রকৃত রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে শুধু তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানো যাবে। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন শেষ প্রান্তে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচকই হলো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ।
নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ কত জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানান, প্রকৃত রিজার্ভ কত আছে এটা জানা নেই। তবে আমরা যেটা প্রকাশ করি সেই তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী বিপিএম-৬ হিসাবে এখন ২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে।
রিজার্ভের সংকট মেটাতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে আইএমএফ। এই ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার গত ফেব্রুয়ারিতে পায় বাংলাদেশ। আইএমএফ এর ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল চলতি বছরের জুনে প্রকৃত রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ৫৩০ ডলার এবং ডিসেম্বরে ২ হাজার ৬৮০ ডলারে রাখতে হবে। কিন্তু গত দুই প্রান্তিকে তা অর্জন করতে পারেনি, ডিসেম্বরেও তা পারবে না।
এমন বাস্তবতায়, কেন রিজার্ভ রাখতে পারেনি সেই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে আইএমএফের কাছে। এবং আইএমএফ সেই বিষয়ে আস্বস্ত হয়েছে। সেইসাথে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে আইএমএফের পর্ষদ সভায় ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৮১ মিলিয়ন (৬৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার) ডলার ছাড়ের বিষয়টি অনুমোদন হতে পারে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমান বাস্তবতায় আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়া দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইবাংলা/এসআরএস
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.