বিদায় ২০২৩, স্বাগত ২০২৪

বিদায়ী বছরে না পাওয়ার কষ্টগুলো যেমন মনকে ভারাক্রান্ত করে, তেমনি পুরো বছরে ধরা দেওয়া সফলতাও আমাদের হৃদয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে।

তাইতো পুরোনো সব অনিশ্চয়তা, ব্যর্থতা ভুলে নতুন করে আশায় বুক বাঁধে মানুষ। নতুন করে স্বপ্ন দেখে, পরিকল্পনা প্রণয়ন, আর সুন্দর আগামীর প্রত্যাশা করেন সবাই।

দেখতে দেখতে চলে গেল খ্রিস্টীয় আরও একটি বছর। বিদায় ২০২৩। স্বাগত ২০২৪। ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’। গেল বছরে প্রত্যাশা-প্রাপ্তি, পাওয়া না পাওয়ার হিসেব ভুলে নতুন বছরকে বরণ করতে প্রস্তুত বিশ্ববাসী।

নানা রঙের আলোর ঝলকানি, আতশ বাজি আর ফানুস উড়িয়ে শান্তির আহ্বান সর্বত্র। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো ইংরেজি নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

রোববার (৩১ ডিসেম্বর) সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে রাত ১২টা ১ মিনিটে শুরু হলো নতুন বছর ২০২৪। সময়ের পরিক্রমায় মহাকালে হারিয়ে গেল আরেকটি বছর। শুরু হলো নতুন বছরের পরিক্রমা। বিগত বছরের সব ভুলে নতুনকে স্বাগত জানিয়ে নতুন করে স্বপ্ন বুনন।

বাঙালি জাতির কাছে বাংলা নববর্ষ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তবে ইংরেজি সাল গণনা করেই চলে আমাদের অধিকাংশ কর্মকাণ্ড। ব্যক্তিগত জীবন থেকে রাষ্ট্রীয় কাজে সর্বত্র ইংরেজি সালের উপর নির্ভর করি আমরা। তাই খ্রিস্টীয় বছর আমাদের জীবনে অনেক গুরুত্ব বহন করে।

ইংরেজি নববর্ষ ২০২৪ উপলক্ষ্যে পৃথক বার্তায় দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া মানুষ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য বার্তা পাঠিয়ে তাদের প্রিয়জনন ও বন্ধু-বান্ধবদের ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২০২৩ ছিল ঘটনাবহুল। বিশ্বজুড়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ফিলিস্তিনে ইসরাইলি নির্বিচারে বোমা হামলায় নারীও শিশুসহ হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এত কিছুর পরেও জীবনযাত্রা থেমে নেই, এগিয়ে চলছে বিশ্ব। এখন জড়তা, ভয়কে পাশে ঠেলে আবার জাগছে মানুষ। সব বিদায়ের সঙ্গেই লুকিয়ে থাকে কিছু আনন্দ-বেদনার কাব্য, আশা আর অপরিমেয় প্রত্যাশা।

তবে আগামীতে সব অনিশ্চয়তা কেটে যাওয়ার আশায় বুক বাঁধে মানুষ। নেতিবাচক বিষয়গুলো দূরে ঠেলে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশা করেন সবাই। দুঃখ-বেদনা ভুলে ভাল কিছুর আশায় স্বাগত জানান ২০২৪ সালকে। ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার-২০২৪’।

ইংরেজি নববর্ষের শুরু যেভাবে: পৃথিবীর সব দেশ ও জাতির মধ্যেই নববর্ষ পালনের রীতি বিদ্যমান। বিশ্বব্যাপী পালিত নানা জাতিগোষ্ঠীর উৎসবগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন বর্ষবরণ উৎসব। তাই বর্ষবরণের এই প্রাচীনতা ঐতিহ্যের ধারক।

আধুনিক গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ও জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে শুরু হয় নতুন বছর। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দে ইংরেজি নতুন বছর উদ্‌যাপনের ধারণাটি আসে। তখন মেসোপটেমিয় সভ্যতার (বর্তমান ইরাক) লোকেরা নতুন বছর উদ্‌যাপন শুরু করে। তারা নিজস্ব গণনায় নববর্ষ উদ্‌যাপন করত।

খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৩ সালে নতুন বছর পালনের প্রচলন শুরু হয় রোমে। পরে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সম্রাট জুলিয়াস সিজার নতুন বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন করেন। যা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। রোমে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের অন্তর্গত বছরের প্রথম দিনটি উৎসর্গ করা হয় জানুস দেবতার উদ্দেশ্যে। জানুস হলো প্রবেশপথ বা সূচনার দেবতা। তার নাম অনুসারেই বছরের প্রথম মাসের নাম করা হয় জানুয়ারি।

তবে যিশুখ্রিষ্টের জন্মের পর ১৫৮২ সালে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি ক্যালেন্ডারের নতুন সংস্কার করেন। যা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই দিনপঞ্জি হিসেবে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে। তবে ১৯ শতক থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন বছর পালন শুরু হয়।

বিশ্বে ইংরেজি নতুন বর্ষ পালনে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করলেও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না ইসরায়েল। তবে কিছু দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে গ্রহণ করেনি। এসব দেশও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না। এদের মধ্যে আছে সৌদি আরব, ইরান, আফগানিস্তান, ইথিওপিয়া ও নেপাল।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us