পদোন্নতিতে উচ্চ মানের গবেষণা-প্রকাশনার শর্ত দেয়ায় কুবি ভিসির প্রতি শিক্ষকদের ক্ষোভ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শিক্ষকদের পদোন্নিততে শর্ত হিসেবে মানসম্পন্ন জার্নালে প্রকাশনা করতে বলা হয় শিক্ষকদের। কিন্তু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ‘গবেষণা সংস্কৃতি’ নেই দাবি করে ভিসি অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে শিক্ষকদের একটি অংশ। তবে উপাচার্য বলছেন উচ্চতর পদে পিএইচডি ডিগ্রি, গবেষণা ও মানসম্পন্ন প্রকাশনা ব্যতীত শিক্ষক পদোন্নতি কাম্য নয় বিধায় পদোন্নতি বোর্ড কোন কোন শিক্ষকের পদোন্নতিতে ভালো মানের প্রকাশনার শর্ত প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়, এবং পরবর্তীতে এই সব সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এখানে ভিসির একার সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন>> টেকনাফ সীমান্ত রেখায় বৃষ্টির মতো গুলি

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ম ভিসি হিসেবে যোগদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও অস্ট্রেলিয়ার দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসম্পন অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন। শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গবেষণার সংস্কৃতি তৈরি করতে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের গবেষণামুখী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তারই অংশ হিসেবে ভালো মানের গবেষণা-প্রকাশনায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য শিক্ষকদের জন্য মর্যাদাসম্পন্ন ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড, আর্টিকেল প্রকাশনায় এডিটোরিয়াল সহায়তা সহ পদোন্নতির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের ও ইমপ্যাক্টফুল জার্নালে পাবলিকেশন করা, নকল জার্নালের পাবলিকেশন্স বন্ধ করা, উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম মানাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর ফলে এই উপাচার্যের দুই বছর মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও প্রকাশনায় ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে ।কিন্তু বেশ কিছু শিক্ষক ভালো মানের গবেষণা ও প্রকাশনা পদোন্নতির জন্য আবশ্যকীয় হিসেবে মানতে নারাজ। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষা ও গবেষণাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে মানসম্মত প্রকাশনার কোনো বিকল্প নেই।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড, পদোন্নতি বোর্ড ও সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান শিক্ষাবিদগণ। এই সকল পদোন্নতি বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রমোশনের ক্ষেত্রে শর্ত প্রদানকে ভালভাবে নিতে পারেনি শিক্ষকরা। তাদের দাবি ভিসি একক সিদ্ধান্তে তাদের উপর এমন শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছেন।

শিক্ষকরা জানান, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আপগ্রেশনের ক্ষেত্রে এমন শর্ত দেওয়া হয়না। আমাদের এখানে যে শর্ত দেওয়া হচ্ছে সেটা কখনো সম্ভব নয়। কারণ আমাদের পর্যাপ্ত বাজেট থাকে না, গবেষণার সুযোগ-সুবিধা থাকে না। আমরা চাইলে বড় জার্নালে পাবলিকেশন্স করতে পারিনা। অনেকের দাবি ভিসি বোর্ড সদস্যদের নিয়ে ওনার অপছন্দের শিক্ষকদেরকে এমন শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছেন। এটির চাপে শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাসে নিতে পারছেন না। তাই শিক্ষকরা এর প্রতিবাদ করছে।

এবিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মঈন বলেন, আমি শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গবেষণাধর্মী পরিবেশ সৃষ্টি করতে কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় একটি জ্ঞান সৃষ্টির জায়গা। শিক্ষকগণ ভালো মানের গবেষণা করে নুতন নুতন জ্ঞান সৃষ্টি করবে এবং উন্নতমানের জার্নালে তাদের সৃষ্ট জ্ঞান প্রকাশনার মাধ্যমে তারা তাদের ফিল্ড, পলিসি, ও মানবকল্যাণে ইমপ্যাক্ট সৃষ্টি করবে, তাই কাম্য। এই জায়গায় সঙ্কট সৃষ্টি হলে বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্বতা ও ভূমিকা ধরে রাখতে পারবে না। কিন্তু শিক্ষকরা মনে করছেন এটি আমার চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত। এটি কোনভাবে আমার একার সিদ্ধান্ত নয় এবং এক্ষেত্রে কোন পক্ষপাতিত্ব করা হয়না। প্রতিটি বোর্ডের জন্য আলাদা আলাদা সাবজেক্টের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি বোর্ড থাকে। আমি সে সভার সভাপতি কিন্তু আমি কোন সিদ্ধান্ত একা নিতে পারিনা। বোর্ডের সবার মতামতের ভিত্তিতে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। আমি দেখতে পাচ্ছি এটি নিয়ে শিক্ষকদের অনেকে অসন্তুষ্ট।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পড়াশুনা, গবেষণা করলেই না একজন ভাল শিক্ষক হয়ে উঠতে পারবেন। ওনারা কাজ করবেন এবং প্রমোশন পাবেন। এখানে আমি বাধা দেওয়ার কেউ না। কিন্তু আমাকেও তো বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত পরিবর্তন নিয়ে ভাবতে হবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুণগত পরিবর্তনের জন্য যে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন আমি শুধু তা করছি।

ইবাংলা/এসআরএস

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us