বাজারে সঙ্কট থাকুক বা না থাকুক, প্রতিবছর রমজানকে সামনে রেখে যেভাবে নিত্য পণ্যের দাম বাড়ে এবারও তেমনটি হচ্ছে। সিয়াম সাধনার এ মাসে বাঙালি মুসলমানদের কাছে ইফতারির অন্যতম প্রধান পণ্য ছোলা, যার প্রায় শতভাগই আমদানি নির্ভর। রমজান দু’সপ্তাহের বেশি বাকি থাকলেও বেড়ে গেছে ছোলা, ডাবলি, খেসাড়িসহ সব ধরনের ডালের দাম। অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানো হচ্ছে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময়মূল্য বেড়ে যাওয়া এবং এলসি সংকটকে। এমন পরিস্থিতিতে বাজার মনিটরিং জোরদার না করা গেলে শবে বরাতের পর আরও বাড়তে পারে এসকল পণ্যের দাম বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
গেলো একমাস আগেও পাইকারিতে যে ছোলার দাম কেজিতে ছিলো ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, সেই ছোলা এখন পাইকারিতেই বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়। বাজারে মটর ডালের দামও বেড়েছে কেজিতে ৮ টাকা। বেসম তৈরিতে ব্যবহৃত অ্যাংকর ডাল এখন ৭২ টাকা। যেখানে কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা।
ডালের বাজারের এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা বলছেন ডলার এবং এলসি সঙ্কটের বাড়ছে এসকল পণ্যের দাম। যদিও এ সময়ে এসে কতটা পূর্বের থেকে অস্থিতিশীলতা এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা বলছেন: বড় কিছু গ্রুপ অব কোম্পানি ডালের আমদানি বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের স্বদঃইচ্ছার অভাবেই ডালের দাম বাড়ছে। বছরের এসময়টাতে দাম বাড়িয়ে দেওয়ার যে প্রবণতা দেখা যায় তার প্রতিফলনই দেখা যাচ্ছে বাজারে।
জানা গেছে: দেশে সীমিত পরিসরে ছোলার উৎপাদন হয়। আর চাহিদার সিংহভাগই আসে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, মিয়ানমার ও তানজানিয়া থেকে। চলতি বছর চাহিদার তুলনায় আমদানি কম হওয়ায় রোজায় পণ্যটির দাম বেশি হবে বলেই ধরে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে আগে থেকেই মজুদের পাশাপাশি বিক্রির ক্ষেত্রে বাড়তি দাম হাঁকিয়ে পণ্যমূল্য বাড়ানো হয়েছে কৌশলে। এক মাসের ব্যবধানে ছোলার দাম বেড়েছে তাই রেকর্ড পরিমাণ।
দেশের সব থেকে বড় পাইকারি পণ্যের আড়ত চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে: বর্তমানে আড়তগুলোতে এখন যে ছোলা রয়েছে তা অস্ট্রেলিয়ান। মানভেদে প্রতিমণ ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫৫০ থেকে ৩ হাজার ৬৫০ টাকায়। প্রতিমণে ৩৭.৩২ কেজি হিসাবে প্রতিকেজির পাইকারি মূল্য ৯৫ টাকা (৯৫.১২ পয়সা) থেকে ৯৮ টাকা (৯৭.৮০ পয়সা) পড়ছে। তবে চলতি সপ্তাহ থেকেই পণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করে। গেল সপ্তাহে পাইকারিতে প্রতিকেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮৭ থেকে ৯৪ টাকায়। এর আগের সপ্তাহে ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা।
খাতুনগঞ্জের উফশী ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী দীপন মহাজন জানিয়েছেন: বর্তমানে ছোলার দাম বাড়তি। গত সপ্তাহের চেয়ে চলতি সপ্তাহে বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা বেড়েছে। তবে জানুয়ারিতে মানভেদে প্রতি মণ ছোলা বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ৫৪৫ থেকে তিন হাজার ৬৫৭ টাকায়। প্রতিমণে ৩৭.৩২ কেজি হিসাবে প্রতি কেজির পাইকারি মূল্য পড়েছিল ৯৫ থেকে ৯৮ টাকা। পরে এ দাম কমতে কমতে বস্তাপ্রতি ৩ হাজার ৬০০ টাকায় আসে। এখন আবার বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন: শুধু ছোলার দাম না, বর্তমানে মটরডালের দামও বেড়েছে। কেজিপ্রতি মটর ডালের দাম ৭-৮ টাকা বেড়েছে। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রাজধানীসহ সারাদেশের বাজারে।
কারওয়ান বাজারের মুদি ব্যবসায়ী কবির হোসেন বলেন: গতদিন মটর ডাল পাইকারি কিনে এনেছিলাম ১০২ টাকা প্রতিকেজি। আজ সেই ডালই কিনতে হয়েছে ১১৫ টাকা। তাহলে বলুন বেচবো কত করে।
অভিযোগ রয়েছে: দেশে এক বছরে যে পরিমাণ ছোলা বিক্রি হয় তার অর্ধেকই হয় কেবল রমজান মাসে। এ কারণে বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে আমদানিকারক ও মজুদদার ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। অনেক সময় পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও বড় ব্যবসায়ীদের বেঁধে দেয়া দামের সঙ্গে সমন্বয় করতে ছোলার দাম বাড়ানো হয়। দেশে মুষ্টিমেয় কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ছোলা আমদানির সঙ্গে যুক্ত থাকায় সহজেই পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে সরকার যদি শক্ত হাতে বাজার মনিটরিং না করে তাহলে শবে বরাতের পর আরেক দফা দাম বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে ছোলাসহ ডালের বাজারে।
এদিকে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছে: বাজারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হলে সরকার কঠোর হবে। শিগগির নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি আগামী ১ মার্চ থেকে চালু হবে ৩৩৩ হটলাইন। কোনো ব্যবসায়ী নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করলে ভোক্তারা হটলাইনে অভিযোগ জানাতে পারবেন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.