কিশোর গ্যাং মোকাবেলার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে প্রথাগতভাবে যেভাবে অপরাধীদের মোকাবেলা করা হয় সে রকম না করে কিশোর অপরাধীদের ক্ষেত্রে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
মাহবুব হোসেন সোমবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, আর এই কাজে অভিভাবক, শিক্ষক এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে যুক্ত হতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন…জুলাইয়ে ব্রাজিল সফরে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী
সোমবার (৮ এপ্রিল) মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় মন্ত্রিসভার বৈঠক।
মাহবুব হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, কিশোর গ্যাং বা কিশোর অপরাধীদের যখন মোকাবেলা করা হয়, সে ক্ষেত্রে যেন মনে রাখা হয় তারা ভবিষ্যতের নাগরিক। প্রথাগত অন্য অপরাধীদের সঙ্গে যেন না মিলিয়ে ফেলা হয়। তাদের জন্য বিশেষ কাউন্সিলিয় করার ব্যবস্থা, কিছু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা- এই ধরনের সুযোগ-সুবিধাগুলোও যেন রাখা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এদের (কিশোর অপরাধী) ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। তাদের যেন দীর্ঘ মেয়াদে অপরাধী বানিয়ে ফেলা না হয়, সংশোধনের সুযোগ যেন থাকে। কারাগারে যেন অন্য আসামিদের সঙ্গে তাদের না রাখা হয়, সে বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প নিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কেও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। তারা এ ব্যাপারে কাজ শুরু করবে।
বর্তমানে তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র (গাজীপুর, টঙ্গী ও যশোর) রয়েছে জানিয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, এই সংখ্যাটি বাড়াতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়াও আরও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে বলেছেন, যাতে তারা (কিশোর অপরাধী) সংশোধন হতে পারে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইন তার স্বাভাবিক গতিতে চলবে। কিন্তু এদের (কিশোর অপরাধী) যখন মোকাবেলা করা হবে তখন যেন মনে রাখা হয়, তাকে যেন আরও অপরাধী না বানিয়ে ফেলা হয়। সংশোধন করার একটি পরিবেশ যেন থাকে।
আরও পড়ুন…চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে সরকারের অত্যাচার-নির্মমতা: মির্জা ফখরুল
মাহবুব হোসেন বলেন, মন্ত্রিসভায় ‘জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি ২০২৪’ এর খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পণ্য পরিবহনে খরচ ও সময় কমানো এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখাসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে নিয়ে দেশের প্রথমবারের মতো এই নীতিমালা করেছে সরকার।
তিনি বলেন, আমদানি-রপ্তানিসহ সামগ্রিক বাণিজ্যে লজিস্টিক্স সহায়তার গুরুত্ব অপরিসীম। মোট খরচের একটি অংশ এখানে হয়। তাই নির্ধারিত সময় বা স্বল্পতম সময়, স্বল্পমতো ব্যয়, পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা যাতে স্বাভাবিক হয় সেটি নিশ্চিত করার জন্য সব মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। কী কী কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে তার দিক নির্দেশনা রয়েছে নতুন এই নীতিমালায়।
খসড়া নীতি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের একটি কাউন্সিল থাকবে। তাতে আটজন মন্ত্রী ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা থাকবেন। এই কাউন্সিল সামগ্রিক দিক নির্দেশনা দেবেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে সমন্বয় কমিটি থাকবে।
পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তার বিষয়ে দিক নির্দেশনার কথা রয়েছে এই নীতিমালায়। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভা মনে করে এই নীতি সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
আরও পড়ুন…হজ-ওমরা সহজ করতে ডিজিটাল ব্যাগ চালু করল সৌদি
মন্ত্রিসভার বৈঠকে নাটোরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ‘ ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে প্রস্তাবিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের খসড়াটি গত বছরের অক্টোবরেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সময়ের অভাবে তখন জাতীয় সংসদে সেটি উপস্থাপন করা হয়নি। তাই নিয়ম রক্ষার জন্য এখন আবার এই খসড়াটি নতুন করে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও আজকের বৈঠকে বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে চুক্তি করার জন্য দুটি খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ইবাংলা/ বাএ
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.