রাত পোহালেই ভারতে লোকসভা নির্বাচন

রাত পোহালেই শুরু ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ। এই পর্বে মোট ২১টি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের ১০২ টি কেন্দ্রের লড়াই হবে। এদিন সকাল ৭টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে তা শেষ হবে সন্ধ্যা ৬ টায়। যেখানে মোট ১৬ দশমিক ৬৩ কোটি ভোটার নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করবেন।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দেশটির তামিলনাড়ুর ৩৯টি, রাজস্থানের ১২ টি, উত্তর প্রদেশের ৮ টি, মধ্যপ্রদেশের ৬টি, উত্তরাখণ্ডের ৫টি, মহারাষ্ট্রের ৫টি, আসামের ৫টি, বিহারের ৪টি, পশ্চিমবঙ্গের ৩ টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। এছাড়া অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর ও মেঘালয়ে দুই করে আসনে, ছত্রিশগড়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম, ত্রিপুরা, আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, লাক্ষাদ্বীপ, পদুচেরি ও জম্মু-কাশ্মীরের একটি করে আসনে প্রার্থীদের মধ্যে লড়াই হবে।

প্রথম দফায় মোট ৮ দশমিক ৪ কোটি পুরুষ এবং ৮ দশমিক ২৩ কোটি নারী ভোটার রয়েছেন। আর তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ১১ হাজার ৩৭১ জন। জীবনে প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন (১৮-১৯ বছর) এক কোটি ৮০ লাখ ভোটার।

দেশটিতে প্রথম দফার এই ভোটগ্রহণে মোট এক দশমিক ৮৭ কোটি কেন্দ্র থাকছে। যেখানে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেয়া হবে। আর ভোটারদের সুষ্ঠুভাবে ভোটদানের জন্য মোতায়েন থাকবে প্রায় ১৮ লাখ ভোট কর্মী।

এ দফায় দেশ জুড়ে এক হাজার ৬২৫ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। এদের মধ্যে এক হাজার ৪৯১ জন পুরুষ প্রার্থী, বাকি ১৩৪ জন নারী প্রার্থী। প্রথম দফায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রার্থী ৮৮৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে স্বতন্ত্র দলের হয়ে। অন্যদের মধ্যে বহুজন সমাজ পার্টির ৮৬ জন, বিজেপির ৭৭ জন, কংগ্রেসের ৫৬ জন, এআইএডিএমকের ৩৬ জন, ডিএমকের ২২ জন, তৃণমূলের ৫ জন প্রার্থী লড়াই করছেন।

প্রথম দফায় দেশে হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ৮ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, দুইজন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং একজন সাবেক রাজ্যপাল। এদের মধ্যে অন্যতম সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীত প্রামাণিক, কেন্দ্রীয় ভূ-বিজ্ঞান ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী কিরেন রিজিজু প্রমুখ

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মোট ৪২ লোকসভার আসনের মধ্যে শুক্রবার প্রথম দফায় ভোট নেয়া হবে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে। তিনটি কেন্দ্রেই ত্রিমুখী লড়াই (তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি ও বাম-কংগ্রেস জোট) হলেও নজর থাকবে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও প্রধান বিরোধী দল বিজেপির মধ্যে।  গত নির্বাচনে এই তিনটি আসনই বিজেপির দখলে ছিল, আর দ্বিতীয় স্থানে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস।

পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়া, বিজেপির নিশীথ প্রামাণিক, কংগ্রেসের পিয়া রায় চৌধুরী এবং বামফ্রন্টের শরিক ফরোয়ার্ড ব্লকের নীতীশ চন্দ্র রায়। এছাড়া অন্য ছোটখাটো দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও আছেন। আর জলপাইগুড়ি আসনে লড়ছেন তৃণমূলের নির্মল চন্দ্র রায়, বিজেপির জয়ন্ত কুমার রায়, বামফ্রন্টের সিপিএম প্রার্থী দেবরাজ বর্মণ। পাশাপাশি আছেন অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এদিকে আলিপুরদুয়ার আসনে লড়ছেন তৃণমূলের প্রকাশ চিক বরাইক, বিজেপির মনোজ টিগ্গা, বামফ্রন্টের মিলি ওঁরাওসহ অন্যান্য ছোট দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

২০১৯ সালের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে ভারতের ৫৪৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছিল ৩০৩টি, কংগ্রেস ৫২টি, সমাজবাদী পার্টি ৫টি, বহুজন সমাজ পার্টি ১০, তৃণমূল ২২, ডিএমকে ২৩, ওয়াইএসআর কংগ্রেস ২২ এবং টিডিপি দুইটি আসনে জিতেছিল। আর পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জিতেছিল ২২, বিজেপি ১৮ এবং কংগ্রেস ২টি আসনে। বামফ্রন্ট ছিল শূন্য।

পশ্চিমবঙ্গে এবার ভোট দেবেন ৭ কোটি ৬৯ লাখ ভোটার। এর মধ্যে পুরুষ ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৩০ হাজার ৯৮১ জন। নারী ৩ কোটি ৭৩ লাখ ৪ হাজার ৯৬০ জন। রাজ্যে ট্রান্সজেন্ডার ভোটার ১ হাজার ৮৩৭ জন।

লোকসভা নির্বাচনের পাশাপাশি শুক্রবার অরুণাচল প্রদেশ এবং সিকিমে একটি মাত্র দফায় বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ক্ষেত্রে সিকিমে ৩২ আসনে এবং অরুণাচল প্রদেশে ৬০ আসনের জন্য ভোট নেওয়া হবে।

নির্বাচন কেন্দ্রিক সব জরিপ বলছে ১০২ টি আসনের অন্তত ৬৫ থেকে ৭০ টি পেতে পারে বিজেপি। আর পশ্চিমবঙ্গের তিনটি আসনের সবই যেতে পারে বিজেপির দখলে। প্রথম দফায় গোটা দেশে যে কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচন হতে চলেছে, তার প্রচারণা শেষ হয়েছে বুধবার সন্ধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী, কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবসহ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা দলীয় প্রার্থীদের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।

ইতোমধ্যেই ভোটগ্রহণের কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছে গেছে ভোট কর্মীরা। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনের তরফেও একাধিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের মোতায়েন করার পাশাপাশি ক্যুইক রেসপন্স টিম, আর্টি মোবাইল বা হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড, ওয়েবক্যাম, ড্রোনের মাধ্যমেও ভোট প্রক্রিয়ার ওপরে নজর রাখবে কমিশন। ভোটারদের ভোট দানে উৎসাহিত করতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

 

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us