বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গার নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন, সে দেশের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাত নিরসন ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো এবং অন্যান্য অংশীদারকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে জোর আহবান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
আরও পড়ুন…জাতিসংঘ জলবায়ু সাবসিডিয়ারি বডির ৬০তম অধিবেশন (SB60) উদ্বোধন ৩ জুন
নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় শুক্রবার (৩১ মে) বিকেলে জাতিসংঘ সদর দফতরে সাধারণ পরিষদের সভাপতি, মিয়ানমার বিষয়ে মহাসচিবের বিশেষ দূত, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার এবং জাতিসংঘের ৬ উন্নয়ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে পৃথক চার বৈঠকে সরকারি দায়িত্বে যুক্তরাষ্ট্র সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। ঢাকায় শনিবার (০১ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা বলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আওরা বলেন, ২০১৭ সালে যখন প্রায় ১০ লাখ মিয়ানমারে সহিংসতা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের মানুষ তাদেরকে মমতা দিয়ে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু ক্রমেই রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন স্থানে কর্মসংস্থান করছে, আর ক্যাম্পগুলো মানুষ পাচার, মাদক চোরাচালান, জঙ্গিনিয়োগসহ নানা অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ফলে স্থানীয়দের জীবন অতিষ্ঠপ্রায় বলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ডেনিস ফ্রান্সিসকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডির সাথে বৈঠকে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের পাশাপাশি গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রায় ৭৫০ সদস্য বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের বেশিরভাগকেই ফেরত পাঠানো হয়েছে, বাকিরাও ফেরত প্রক্রিয়ায় আছে।
শুধু তাই নয়, মিয়ানমারে বিবদমান গোষ্ঠির শেল বাংলাদেশ অংশে পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এসবের পুণরাবৃত্তি রোধ একান্ত প্রয়োজন। মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপের সাথে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান বলেন, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতি কোনো নতুন ঘটনা নয় এবং এটিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিপক্ষে ব্যবহারের অজুহাত তৈরির সুযোগ দেওয়া অনুচিত।
আরও পড়ুন…ভারতে তাপপ্রবাহে নির্বাচন কর্মকর্তাসহ ৩৩ জনের মৃত্যু
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দফতরে ‘ক্রাইসিস, কনফ্লিক্টস এন্ড ইন্টার-এজেন্সি কোলাবরেশন : নেক্সাস এপ্রোচ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন। জাতিসংঘের ৬ সংস্থা- ইউএনডিপি, ইউএনএফপিএ, ইউএনওপিএস, ইউএন উইমেন প্রধান এবং ইউনিসেফ ও ডব্লিউএফপি-এর উপপ্রধান এতে অংশ নেন।
ড. হাছান বিশেষ করে বিশ্বে সংঘাত প্রভাবিত অঞ্চলগুলোতে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর নেক্সাস বা সম্মিলিত উদ্যোগের সুবিধাগুলো তুলে ধরেন। তিনি রাখাইন ও কক্সবাজারের পরিস্থিতির কথা বলেন এবং উদ্বাস্তু সংকট নিরসন ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উন্নতির লক্ষ্যে জাতিসংঘের সকল সংস্থা, তহবিল এবং কর্মসূচিকে সুসংহতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ এ মুহিত, মন্ত্রণালয় ও মিশনের অন্যান্য সদস্যরা বৈঠকগুলোতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
ইবাংলা/ বাএ
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.