রাষ্ট্রায়াত্ত মালিকানাধীন লাভজনক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের কাড়ি কাড়ি টাকা ব্যাংকে এফডিআর করা রয়েছে। কিন্তু বকেয়া কর পরিশোধ করা হয় না। এক, দুই বছর নয়-অন্তত ৯ বছর ধরে বকেয়া করের টাকা পরিশোধ করে না প্রতিষ্ঠান। অবশেষে ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। শুধু ব্যাংক হিসাব জব্দ নয়, প্রতিষ্ঠানের ১০টি এফডিআর ভেঙ্গে প্রায় ৮৬ কোটি টাকার বকেয়া কর আদায় করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি হলো-সরকারি মালিকানাধীন যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড।
দুইদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে কর অঞ্চল-১৫, ঢাকার কর্মকর্তারা বকেয়া করের এই টাকা উদ্ধার করেছেন। এই কর অঞ্চলের কর্মকর্তারা সম্প্রতি ব্র্যাক ব্যাংক থেকে দুই জুয়াড়ি কোম্পানির ব্যাংক হিসাব জব্দ করে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বকেয়া কর আদায় করেছেন।
আরও পড়ুন…বাজেটের পরে যেসব নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় হতে পারে
কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশনা অনুযায়ী বকেয়া কর আদায়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আর প্রথমবারের মতো কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ ও এফডিআর ভেঙ্গে বকেয়া করের এত টাকা আদায় করা হয়েছে। কর অঞ্চল-১৫, ঢাকার একাধিক কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন।
কর অঞ্চল-১৫, ঢাকার কর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড। জামালপুরে অবস্থিত এই সার কারখানার আয়কর ফাইল কর অঞ্চল-১৫, ঢাকার সার্কেল-৩১০ (কোম্পানি) রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ২০১৩-১৪ করবর্ষ থেকে ২০২১-২২ করবর্ষ পর্যন্ত বকেয়া করের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১৪ কোটি টাকা। কর অফিসের বকেয়া দাবি ছিলো প্রায় ১১৪ কোটি টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের দাবি ছিলো, তাদের বাড়তি কর দাবি করা হয়েছে।
অজুহাত দেখিয়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বছরের পর বছর কর পরিশোধ করেনি। শেষে বকেয়া কর আদায়ে কর অঞ্চল-১৫, ঢাকার বর্তমান কর কমিশনার আহসান হাবিব সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও আইনজীবীর সঙ্গে দফায় বৈঠক করেন। প্রতিষ্ঠানের দাবি অনুযায়ী করফাইল পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা হয়। এতে বকেয়া করের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৬ কোটি ৪১ হাজার ৯০৫ টাকা। এই টাকা পরিশোধ করবেন বলে প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা কমিশনারের কাছে অঙ্গীকার করে যান। কিন্তু পরবর্তীতে আবারো বকেয়া কর পরিশোধে গড়িমসি শুরু করেন।
আরও পড়ুন…৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি ঘোষণা, আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৪১ হাজার
কর্মকর্তারা আরো জানিয়েছেন, যমুনা ফার্টিলাইজার একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। সারাদেশে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ব্যাংকে অসংখ্য ব্যাংক হিসাব রয়েছে। যাতে প্রায় ১৫৩০ কোটি টাকা এফডিআর করা রয়েছে। অথচ সরকারি বকেয়া কর প্রতিষ্ঠানটি বছরের পর বছর পরিশোধ করছে না। অবশেষে কর কমিশনার আহসান হাবিব এর নির্দেশনা অনুযায়ী ৫ জুন বুধবার প্রতিষ্ঠানের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে দেশের সব ব্যাংকে চিঠি দেয়া হয়।
একইসঙ্গে এফডিআর ভেঙ্গে বকেয়া করের টাকা পরিশোধ করতে ব্যাংকে অনুরোধ করা হয়। ৫ জুন বুধবার সার্কেল-৩১০ এর উপকর কমিশনার মো. নেফাউল ইসলাম সরকারের নেতৃত্বে ছয়জন কর পরিদর্শকের একটি টিম বেসিক ব্যাংক লিমিটেড ও যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের ছয়টি শাখায় বকেয়া কর আদায়ে যান, যেখানে যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের দুইটি ব্যাংক হিসাব ও এফডিআর রয়েছে।
অবশেষে ৫ জুন বুধবার ও ৬ জুন বৃহস্পতিবার দুইদিন পরিশ্রম শেষে এই টিম বেসিক ব্যাংকের চারটি শাখা (গুলশান, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট ও কাকরাইল) ও জনতা ব্যাংক লিমিটেডের দুইটি শাখা (মতিঝিল কর্পোরেট শাখা ও বংশাল) হতে যমুনা ফার্টিলাইজারের ১০টি এফডিআর ভেঙ্গে বকেয়া কর হিসেবে ৮৬ কোটি ৪১ হাজার ৯০৫ টাকার পে-অর্ডার নিয়ে আসে। সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ ও এফডিআর ভেঙে এত বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় প্রথম বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
এই বিষয়ে কর অঞ্চল-১৫, ঢাকার কর কমিশনার আহসান হাবিব বলেন, লাভজনক প্রতিষ্ঠান। প্রায় ১৫৩০ কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। অথচ বকেয়া কর পরিশোধ করে না। আমি তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছি। তাদের কিছু দাবি ছিলো, সে অনুযায়ী যাচাই করা হয়েছে। এতে কর কমেছে।
প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা কর পরিশোধে অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু পরে টাকা পরিশোধে গড়িমসি করে। তারা বলে, সরকারি টাকা। এফডিআরগুলো কিছুটা ম্যাচুরেট হোক। আমাদের তাদের বলেছি, সরকারি টাকা সরকারের ঘরে যাবে। ট্যাক্স না দিলে কর জিডিপি বাড়বে কি করে। গড়িমসি করায় শেষে ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। আমাদের কর্মকর্তারা দুইটি ব্যাংকের ছয়টি শাখা থেকে যমুনা ফার্টিলাইজারের ১০টি এফডিআর ভেঙে প্রায় ৮৬ কোটি টাকা আদায় করেছে।
আরও পড়ুন…বাজেটে মোবাইল টকটাইম ও ইন্টারনেটের দাম বাড়ছে
উল্লেখ্য, এর আগে কর ফাঁকির ৫০ কোটি টাকা আদায়ে ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান-১ শাখায় অভিযান পরিচালনা করেছে কর অঞ্চল-১৫, ঢাকার কর্মকর্তারা। ৩০ এপ্রিল দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অভিযান চালানো হয়। তবে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকায় প্রথমে ওই টাকা আদায় সম্ভব হয়নি। শেষে উচ্চ আদালতে প্রতিষ্ঠান হেরে গেলে বকেয়া করের সেই টাকা দিতে বাধ্য হয় ব্র্যাক ব্যাংক।
ইবাংলা/ বা এ
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.