পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড.জিল্লুর রহমান হাউজিং ব্যবসা ও নানা অনৈতিক কাজে জড়িত
বিশেষ প্রতিবেদক
ড. জিল্লুর রহমান বর্তমানে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ও যোগাযোগ (Language & Communication) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। জামাত সমর্থনপুষ্ট হওয়ার কারনে জোট সরকারের আমলে জিল্লুর রহমান লেকচারার পদে নিয়োগ পান। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ায় অধ্যায়ন কালে ছাত্র শিবিরের সভাপতি ছিলেন।
দলের প্রতি অপরিসীম আনুগত্য ও সাংগঠনিক দক্ষতার কারনে তাকে ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় শিক্ষা সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সাথে সাথে শিবিরের ক্যাডার হিসেবে দলের ভেতরে বিশেষ স্থান করে নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের দাঙ্গা হাঙ্গামার নেতৃত্ব দিয়ে স্বল্প সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে তার একচ্ছত্র প্রভাব এবং নেতৃত্ব গড়ে তোলে। তার অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে ছাত্র-শিক্ষক সবসময় আতঙ্কিত থাকতেন।
আরও পড়ুন…আট অঞ্চলে ঝোড়ো বৃষ্টির আভাস দুপুরের মধ্যে
দলবল নিয়ে অস্ত্রের মহড়াকারী জিল্লুর বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজীতে জড়িয়ে পড়ে এবং বিপুল অর্থ উপার্জনের সুযোগ পায়। তার এ অবৈধ অস্ত্রের যোগানদাতা ছিলেন খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী শিবির নেতা শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরা। আত্মস্বীকৃত খুনী, চরমপন্থী নেতা শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরার সাথে ছাত্রাবস্থায় তার বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। ক্রমান্বয়ে এ শীর্ষ সন্ত্রাসীর সাথে জিল্লুর রহমান জমির দালালী, অস্ত্র ব্যবসা, টেন্ডার ব্যবসা এবং হাউজিং ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে এবং দুজনে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক বনে যান।
ঢাকা শহরে নামে বেনামে অনেকগুলো ফ্ল্যাটের মালিক হয়ে জিল্লুর অর্থ লোভে অন্ধ হয়ে শিক্ষকতার পেশায় অমনোযোগী হয়ে উঠেন। অপরাধ জগতের ডন শাহবুদ্দিন লস্কর ধীরার সাথে জিয়ো প্রপার্টিজ নামে একটি হাউজিং কোম্পানি করেন। জিল্লুর রহমান জিয়ো প্রপার্টিজ এর চেয়ারম্যান ও শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরা ম্যানেজিং ডিরেক্টর। তারা ধানমন্ডিতে বিশাল আলিশান অফিস ভাড়া নিয়ে হাউজিং সহ অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা শুরু করে। জিয়ো গ্রুপের যে চারটি(৪) অঙ্গপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে তাহলো- ১। জিয়ো প্রপার্টিজ লিঃ ২। জিয়ো কর্পোরেশন লিঃ ৩। জিয়ো ফাউন্ডেশন ও ৪। জিয়ো ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট। একই মতাদর্শের হওয়াতে একসাথে কাজ করে তারা এগিয়ে যায় এবং তাদের অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার পরও ধীরার সাথে জিল্লুর নারী-মদ নিয়ে বেশি সময় কাটান। দুই সন্তানের জনক মোঃ জিল্লুর রহমান ঢাকায় ব্যবসা পরিচালনায় বেশী সময় ব্যয় করতেন এবং অনেকাংশে সংসার বৈরাগী হয়ে উঠেন। তার এই উদাসীনতার কারনে পরিবারের সাথে দীর্ঘদিন সম্পর্কের ফাটল ধরে। তার পানাহারের সুবাধে পুলিশ ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন আমলাদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে যার ফলে জিল্লুরের অপরাধ প্রবনতা আরও বেড়ে যায়। একজন শিক্ষক হিসেবে তার অনুশোচনাবোধ লোপ পায়। পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে রাজধানীর বিভিন্ন নামিদামি হোটেলে আড্ডা বেড়ে যায় এবং সবার চোখের আড়ালে তার অবৈধ ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠে। ধীরার সকল অপকর্মের পরামর্শদাতা হিসেবে জিল্লুর সম্পত্তি দখল করে ফ্ল্যাট ও প্লট বিক্রির নামে প্রতারণা করে বহু নিরীহ লোকজনকে সর্বশান্ত করে।
আরও পড়ুন…কুড়িগ্রামে ফেন্সিডিল ও ইস্কাফসহ ২ মাদক কারবারি গ্রেফতার
জিল্লুর নিজে ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন জায়গায় অনেকগুলো ফ্ল্যাটের মালিক বনে ধরাকে সরা জ্ঞান করে এবং আত্মঅহমিকায় ভোগে। পুলিশের ভয় দেখিয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন লোকজনকে নানাভাবে হয়রানি ও প্রতারণা করে বিপুল অর্থকড়ি কামান।
এ অবৈধ অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে ব্যবসার বেশ প্রসার ঘটে। হাউজিং ব্যবসার অন্তরালে অস্ত্র ব্যবসাসহ অন্যান্য নানা অবৈধ ব্যবসা থেকে আয়ের একটি অংশ জামায়েত তহবিলে চলে যায় বলে বিশেষ সুত্রে জানা যায়। শিক্ষকতার আড়ালে অর্থ উপার্জন তার নেশা ও পেশায় পরিনত হয়।
তার অন্যতম সহযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরা বায়োগ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিপিএল হাউজিং এর অর্থ আত্মসাৎ ও চুরির দায়ে অভিযুক্ত এবং আরও কয়েকটি মামলার আসামী হওয়ার কারণে বর্তমানে সে কারাগারে।
তার এই বন্ধুকে সহযোগীতা করার জন্য আদালত পাড়ায় তার নিয়মিত উপস্থিতি এবং দৌড়াদৌড়ি অনেকের নজরে পড়ে। পুলিশ দিয়ে ধীরার বিরোধী পক্ষকে ঘায়েল করার জন্য তার অপচেষ্টার কোন ঘাটতি ছিলনা। আসলে পাপ বাপকেও ছাড়েনা। ধীরাকে সহযোগীতা করতে গিয়ে সে নিজেই অপরাধের জালে আটকা পড়ে যায়। তার সাথে সর্বহারা পার্টির সাথে গোপন সম্পর্ক এবং জামাত এর অর্থ যোগানদাতা হিসেবে সরকার নিশ্চিত হওয়ার কারনে বর্তমানে সে গোয়েন্দাসংস্থার কঠোর নজরদারিতে আছে বলে সুত্র জানায়।
আরও পড়ুন…কুড়িগ্রামে ফেন্সিডিল ও ইস্কাফসহ ২ মাদক কারবারি গ্রেফতার
তার এই অপকর্মের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং ৩৬ তারিখ ৫ মে’২০২৪। শিক্ষক জিল্লুর রহমানের ঘৃনিত অপরাধমুলক কাজের কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। তার এই অনৈতিক কাজের জন্য ছাত্র-শিক্ষক ও আমজনতা ক্ষুদ্ধ এবং ঘৃনা প্রকাশ করেছে বলে সূত্রে প্রকাশ। হাউজিং ব্যবসা এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা কিভাবে একসাথে চলে তা জনমনে প্রশ্ন?
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.