স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে রাঙামাটিতে কোটি কোটি টাকার অবৈধ পণ্যের জমজমাট ব্যবসা দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে এক শ্রেণীর চোরা চালানী সিন্ডিকেট চক্র। সকল পক্ষকে ম্যানেজ করেই এসব চোরাচালান চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট্য চোরাকারবারিরা।
এদিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাঙামাটি সদর জোন ও বিজিজির সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করে কোটি টাকার অবৈধ সিগারেট জব্দ করেছে। এই ঘটনার সাথে জড়িত একজনকে আটক করার তথ্যও নিশ্চিত করেছে রাঙামাটি সদর জোন কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন…ফুলবাড়ীতে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ
জোন থেকে প্রদত্ত তথ্যানুসারে রোববার (৮সেপ্টেম্বর) ভোরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ আনোয়ার হোসেন এর নেতৃত্বে সেনা-বিজিবি’র যৌথ টহলদল রাঙামাটি শহরের তবলছড়ি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আব্দুর ছাত্তার ওরফে তাহেরকে আটক করে হেফাজতে নেয়। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে একটি পরিত্যক্ত ঘরে রক্ষিত ৪৫ হাজার প্যাকেট অরিসম ৬ হাজার প্যাকেট ওমেগা সিগারেট উদ্ধার করা হয়।
এসব ভারতীয় সিগারেট চোরাইপথে রাঙামাটিতে আনা হয়। এগুলোর বাজার মূল্য ১ কোটি দুই লক্ষ টাকা। উদ্ধারকৃত সিগারেট রাঙামাটিস্থ বিজিবি সেক্টর সদর দপ্তরের প্রতিনিধির নিকট হস্তান্তর করা হয়। রাঙামাটি জোন কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বজায় রাখতে নিরাপত্তা বাহিনীর এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে রাঙামাটি সদর জোন কর্তৃপক্ষ।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, রাঙামাটির জেলার দূর্গম হরিণা ও জুরাছড়ি সীমান্তের ওপার ভারত থেকে কালো টাকা ও শুল্কবিহীন ভারতীয় মুন, সিলভার, অরিস ও ওমেগা সিগারেট বিশেষ কায়দায় রাঙামাটিতে এনে সেগুলোতে কুরিয়ার সার্ভিস, অটোরিক্সা ও পিকআপ ভ্যানের মাধ্যমে প্রকাশ্য দিবালোকে চট্টগ্রাম পাচার করছে চোরাকারবারিরা। সাম্প্রতিক সময়ে ছদ্মবেশে অনুসন্ধান করে এর সত্যতা নিশ্চিত করেছে এই প্রতিবেদক। বার্মিজ বোটে করে এসকল ভারতীয় সিগারেট রাঙামাটি শহরের অদূরে কাপ্তাই হ্রদের সুবলং এলাকায় এনে সেগুলো অন্যবোটে করে রাঙামাটিতে নিয়ে আসে।
জানাগেছে, বাংলাদেশী বসুন্ধরা টিস্যু পেপারের বড় কার্টুন দিয়ে বিশেষভাবে প্যাকেট করে কসমেটিকের ড্যামেজ মালামাল উল্লেখ করে, রাঙামাটি বিভিন্ন কসমেটিক দোকানের মেমো ও আইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়ে বহুল পরিচিত কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়িতে করে শুল্কবিহীন ভারতীয় সিগারেট, আমুল দুধ পাউডার, চা’পাতাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নির্ধিদায় পাচার করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে এসকল ব্যবসায়িদের কাছ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিকদলের নাম ভাঙ্গিয়ে আদায় করা হয়েছে প্রায় কোটি টাকার চাঁদা। রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি, বনরূপা, ভেদভেদী এলাকায় বেশ কয়েকটি ঘটনার মাধ্যমে প্রকাশ্যে চোরাচালানের বিষয়টি সবার নজরে আসে।
আরও পড়ুন…“COP29 প্রেসিডেন্সি জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সাম্প্রতিক বৈঠককে স্বাগত
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বনরূপায় অবস্থিত বহুল পরিচিত একটি কুরিয়ার সার্ভিসের ম্যানেজার প্রতিবেদকের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজ প্রদর্শন করে জানান, আমরা ন্যাশনাল আইডি কার্ড, দোকানের চালান মেমোর কপি নিয়ে তারপর মালামাল বুকিং করি।
কি মালামাল আপনাদের মাধ্যমে পাঠাচ্ছে; এগুলো দেখে নেওয়া কি দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না?? এমন প্রশ্নের জবাবে ম্যানেজার জানান, অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখিনা এটা সত্য।
পার্বত্যাঞ্চল একটি বিশেষ অঞ্চল; এই অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে অস্ত্রের চালানও তো পাচার হতে পারে তাহলে সেক্ষেত্রে আপনারা এসব কার্টুন কেন চেক না করেই বুকিং নিলেন এবং চট্টগ্রাম পাঠাচ্ছেন?? এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোনো সদুত্তুর দিতে পারেন নি।
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতির সুযোগে রাঙামাটির বরকলের হরিণা ও জুরাছড়ির ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে শুল্কবিহীন ভারতীয় সিগারেটসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র শুল্ক ফাঁকি দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই আদান প্রদান করছে একটি চক্র।
খোঁজনিয়ে জানাগেছে, রাঙামাটি শহরেই এই চক্রের প্রায় ১৫জন সদস্য সক্রিয় রয়েছে এই চোরা-চালানকান্ডে। চোরাকারবারি এই সিন্ডিকেট চক্র ভারতীয় সিগারেটসহ বিভিন্ন ধরনের ভারতীয় জিনিসপত্র চট্টগ্রাম পাচারের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। এই চক্রের সাথে জড়িত অন্তত চারজন প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, রাঙামাটির সংশ্লিষ্ট্য সকলকে ম্যানেজ করেই তারা এসব অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে নিচ্ছেন। সম্প্রতি এই সিন্ডিকেট চক্র থেকে রাঙামাটি শহরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা চাঁদা আদায় করে এবং নিরাপদে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে নিতে সহযোগিতার আশ^াস প্রদান করে।
বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ আহাম্মেদ বলেন, অবৈধ চোরাচালানকারিদের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা আমাদের সকল চেকপোষ্টগুলোকে সতর্ক করে দিয়ে নজরদারি বৃদ্ধি করেছি এছাড়াও আমাদের সংশ্লিষ্ট্য থানাগুলোকে চোরাচালানকারি ও অবৈধ ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেছি।
এদিকে, রাঙামাটিস্থ বিজিবি সেক্টরে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছেন, গত দুই মাসে আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে প্রায় ৭৬ লাখ টাকা মূল্যের সিগারেট আটক করা হয়। এসকল ভারতীয় সিগারেট চট্টগ্রামের কাষ্টমসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে বিজিবি কর্তৃপক্ষ।
ইবাংলা/ আর আর
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.