বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’র আত্মপ্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্য অর্জনে আত্মপ্রকাশ হলো ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারে প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে এ কমিটি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে আহ্বায়ক ও আখতার হোসেনকে সদস্যসচিব করে ৫৫ সদস্যের জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর আগে শনিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

আরও পড়ুন…স্বপ্ন বাস্তবায়নে ছাত্রদের সার্বক্ষণিক কাজ করে যাওয়ার আহবান ড. ইউনূসের

এতে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে দেশের সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ এবং সহস্রাধিক শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ফ্যাসিস্ট শাসক শেখ হাসিনার পতন ঘটেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের এক দফার দ্বিতীয় ধাপ তথা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটিয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান যে নতুন রাজনৈতিক ভাষা ও জনগোষ্ঠীর সম্ভাবনা হাজির করেছে, তা বাস্তবায়ন করতে হলে বাংলাদেশকে নতুন করে গঠন করতে হবে। গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়নের ব্যাপারে সমাজে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক উদ্যোগের সঙ্গে মত আদান-প্রদানের মাধ্যমে নতুন ঐতিহাসিক বোঝাপড়ায় উপনীত হওয়া এবং সেই মোতাবেক বাংলাদেশের জনগণকে সংগঠিত করা আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। এ লক্ষ্যে রোববার বিকেল সাড়ে চারটায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জাতীয় নাগরিক কমিটির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। এ অনুষ্ঠানে সবাইকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

জেলা, মহানগর ও থানা পর্যায়েও কমিটি হবে: কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পর দেশের ৬৪ জেলা ও ১২ মহানগর ও থানা পর্যায়ে নাগরিক কমিটি গঠন করা হবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা বহন করে এর ধারাবাহিকতায় জাতীয় নাগরিক কমিটি করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পর দেশের ৬৪ জেলা ও ১২ মহানগর এবং এরপর থানা পর্যায়ে নাগরিক কমিটি গঠন করা হবে। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারে প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে এ কমিটি।

আরও পড়ুন…ভারত ভূখণ্ডের ৬০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে চীনা সেনাবাহিনী

বিজ্ঞপ্তিতে এই কমিটির আটটি প্রাথমিক কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে—
১. ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হওয়া সামষ্টিক অভিপ্রায় ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখা। ২. ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত নির্মম হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা। ৩. রাষ্ট্রের জরুরি সংস্কার ও পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে সহযোগিতা ও জবাবদিহিতার পরিসর তৈরি করা।

৪. বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের সাথে আলোচনা, মতবিনিময় ও গণমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে সর্বস্তরের জনতাকে সংহত করার লক্ষ্যে কাজ করা।
৫. দেশের সর্বস্তরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে সংহত করে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত করে রাখার লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদী কাঠামো ও শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা।

৬. জনস্বার্থের পক্ষে নীতি নির্ধারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাথে বিষয়ভিত্তিক সংলাপের আয়োজন করা। ৭. রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিনির্ধারণী প্রস্তাবনা তৈরি ও সেটা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক পদক্ষপে গ্রহণ করা। ৮. গণপরিষদ গঠন করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির জন্য গণআলোচনার আয়োজন করা।

ইবাংলা/ আই আর

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us