শেখ হাসিনা ও সহযোগীদের পাচারকৃত অর্থ নিয়ে ব্রিটিশ তথ্য প্রকাশ

জোসেফ

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে এমন সব তথ্য উঠে এসেছে। সংবাদমাধ্যমটিতে আহসান এইচ মনুসর বলেছেন, তিনি এই বিষয়ে যেসব দেশের সাহায্য চেয়েছেন যুক্তরাজ্য এদের অন্যতম। তিনি জানান, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে যে, এসব সম্পদ জব্দ করা যাবে। তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও এ ধরনের সম্পদ পাচার হয়ে থাকতে পারে।

Islami Bank

গভর্নর বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার এ বিষয়ে একান্ত সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব দেখিয়েছে। দেশটির হাইকমিশনার আমার অফিসে এসেছিলেন এবং তারা ব্যাপক প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রীর মালিকানাধীন ১৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পত্তির অর্থের তহবিলের উৎস শনাক্ত করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, এই সম্পদ যেন পুনরুদ্ধার করা যেতে পারে তার জন্য আমরা যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে সহায়তা চাইব।

ব্রিটিশ সরকারি কর্মকর্তারাও বাংলাদেশ সরকারের সাহায্য চাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এই বিষয়ে তারা বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের পাশাপাশি বিভিন্ন গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে। যদিও বাংলাদেশের কঠোর মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ নীতি রয়েছে যার অধীনে নাগরিকেরা প্রতি বছর মাত্র কয়েক হাজার ডলার বিদেশে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। এ বিষয়ে গভর্নর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অজান্তে এত বিপুল আকারের চুরি সংঘটিত হতে পারে না। তবে এই বিষয়ে হওয়া তদন্তগুলো এখনও ‘বেশ প্রাথমিক পর্যায়ে’ রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান। কিন্তু ওই দেশে তার অবস্থান ঠিক কোথায় তা অজানা এবং এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি বলছে, (বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আসা) এই অভিযোগগুলো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের নতুন লেবার সরকারের জন্য জটিল সমস্যাকর বিষয় হয়ে উঠতে পারে।

one pherma

কারণ, ব্রিটেনের নতুন এই লেবার সরকারের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি। টিউলিপ সিদ্দিক এই অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত এমন কোনো ইঙ্গিত দেয়া হয়নি। আবার এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের অনুরোধে জবাব দেননি টিউলিপ সিদ্দিকি।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ বিষয়ে ব্রিটেনের সহায়তার জন্য ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ ‘বাংলাদেশ থেকে চুরি করা এবং বিদেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধার করতে যাচ্ছে। এটি এই সরকারের অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে একটি।

১৭ কোটি মানুষের দেশ এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশে শেখ হাসিনা দুই দশক ক্ষমতায় ছিলেন। ভোটে কারচুপি, অধিকার লঙ্ঘন এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে তাঁর সরকার অভিযুক্ত ছিল এবং সর্বশেষ গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে তাঁর সরকারের পতন হয়।

হাসিনার দল আওয়ামী লীগের মিত্রদের বৈদেশিক সম্পদের বিষয়টি বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপকভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-ইউকে বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোর মালিকানাধীন ব্রিটিশ রিয়েল এস্টেট পোর্টফোলিওকে ‘অব্যক্ত সম্পদের’ উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছিলেন, কর্তৃপক্ষের বিষয়টি তদন্ত করা উচিত।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ব্লুমবার্গের বিশেষ এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এই রাজনীতিবিদের অবৈধ সম্পদের বিশাল সাম্রাজ্যের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী প্রায় ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ৩৫০ টিরও বেশি সম্পত্তি নিয়ে গড়ে তুলেছেন রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us