রাজধানীর হাতিরঝিলে ফ্ল্যাট নিয়ে বিরোধের জেরে দীপ্ত টিভির সম্প্রচার বিভাগের কর্মকর্তা তানজিল জাহানকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ডেভেলপার কোম্পানির বিরুদ্ধে।প্লেজেন প্রোপার্টিস লিমিটেড নামে ওই ডেভেলপার কোম্পানির মালিক বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবি বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিহতের হাতিরঝিলের মহানগর প্রজেক্টের বাসায় এ ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনার চারজনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত তানজিলের বাবা সুলতান আহমেদ জানান, তিনিসহ তিনজন মালিকের জমি নিয়ে প্লেজেন প্রোপার্টিস লিমিটেড একটি ভবন নির্মাণ করে। ৯ তলা ওই ভবনে ২৭টি ফ্ল্যাট রয়েছে। প্রত্যেক জমির মালিককে পাঁচটি করে ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা ছিল। তাকে দুটি ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হয়। বাকি তিনটির মধ্যে একটি ফ্ল্যাট মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মামুন সাহেবের শ্বশুরের কাছে বিক্রি করেন প্লেজেন প্রোপার্টিস নামের ডেভেলপার কোম্পানির কর্ণধার শেখ রবিউল আলম রবি।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বাকি দুটি ফ্ল্যাটের অভ্যন্তরীণ কাজ শুরু করেন তানজিলের বাবা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তানজিলের বড় ভাই। পরে সকাল ১০টার দিকে ২০-২৫ জন দুর্বৃত্ত ভবনের সিসি ক্যামেরা ভেঙে সেই ফ্ল্যাটে হামলা চালায়। পরে তানজিল নিচ থেকে ওই ফ্ল্যাটের দিকে এগিয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা তার ওপর হামলা চালায়। গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেলে।
সুলতান আহমেদ বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ আমাদের জিডিও নিত না। এমনকি পরশু রাতেও হামলার আশংকায় থানায় গিয়েছি। থানার ওসি আমার অভিযোগ রাখেনি। বলেছে, হামলা হলে তাদের জানাতে। আজ (বৃহস্পতিবার) হামলার কথা জানালে ঘটনার প্রায় ২০ মিনিট পর পুলিশ পাঠিয়েছে।
পুলিশ গিয়ে ডেভেলপার কোম্পানির লোকদের সঙ্গে কথা বলছিল। অথচ তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমার ছেলেকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিতে চাইলে সেখানেও তারা দেরি করায়। হামলাকারীরা আমার ছেলের গলা চেপে ধরেছে। বুকে আঘাত করেছে।
হামলার অভিযোগের বিষয়ে প্লেজেন প্রোপার্টিস লিমিটেডের মালিক ও বিএনপি নেতা রবিউল আলম রবি বলেন, তিন চার বছর আগে ভবনের কাজ শেষ করে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি। মূলত এই ভবনের জমির মালিক তিনজন। তারা প্রত্যেকে সাড়ে চারটি করে ফ্ল্যাট পেয়েছেন।
দুজন মালিক অর্ধেক অংশ কিনে নিয়েছেন। কিন্তু সুলতান সাহেব ফ্ল্যাটের অর্ধেক অংশ অর্থাৎ সাড়ে ৬শ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটি কেনার কথা বললেও কিনছেন না। বরং তিনি দখলের চেষ্টা করছেন। তাই আমরা আদালত থেকে একটা নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়েছি। সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তিনি কয়েকদিন ধরে কাজ করছিলেন। এটা বন্ধ করতেই আমার লোকজন সেখানে গিয়েছিল। মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে মিলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মামুন হামলায় অংশ নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণীতভাবে আমাকে চাপে ফেলা হচ্ছে। আমি এই ভবনের মালিক কিংবা ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে জড়িত না। ভবনে আমার শ্বশুর একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। আমি শ্বশুরের বাসায় থাকি।
আজকের ঘটনার সময় আমি বাসায় ছিলাম না। কি হয়েছে আমার জানা নেই। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই আপনারা বুঝতে পারবেন। সুলতান সাহেব লোকজন নিয়ে আমার বাসায় ভাঙচুর চালিয়েছেন। আমার বাসার দরজা ভেঙে বাসায় প্রবেশ করেছেন। সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে নিয়ে গেছেন।
এ বিষয়ে হাতিরঝিল থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, এই ফ্ল্যাট নিয়ে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। ঘটনার পর আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্লেজেন প্রোপার্টিস লিমিটেড কোম্পানির লোকজন ওই বাড়ির মালিকের ছেলের ওপর হামলা করেছে। আমরা ওই কোম্পানির সাইট ইঞ্জিনিয়ারসহ চার জনকে আটক করেছি। এ ঘটনায় মামলা হবে।
ইবাংলা/ আইএইচ
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.