বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাচন চেয়ে বাণিজ্য সচিবকে চিঠি দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বৈষম্যের শিকার বিকেএমইর সাধারণ সদস্যদের পক্ষ থেকে প্রিতম নিটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু জাফর আহমেদ ও কেএএস নিটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমগির কবির এই চিঠি দিয়েছেন বলে জানা যায়।
চিঠিতে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে টানা চৌদ্দ বছর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সভাপতির পদ আঁকড়ে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। প্রথমবার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নামকাওয়াস্তে কয়েকটি নির্বাচন হলেও পরবর্তীতে ‘তথাকথিত সমঝোতা’র মাধ্যমে পর্ষদ করে নিজের অনুগতদের নিয়ে সংগঠন পরিচালনা করেছেন। বিকেএমএইতে সব কিছুই চলতো সেলিম ওসমানের নির্দেশনা অনুযায়ী। এমনকি কে কোন পদে থাকবেন সেটাও নির্ধারণ করে দিতেন তিনি। সরকারের পটপরিবর্তনের পর গত ২৪ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সভাপতির পদ থেকে সেলিম ওসমান পদত্যাগ করেন।
তবে তিনি কমিটি পুনর্গঠন করার ঘোষণা না দিয়ে নতুন সভাপতি নির্বাচন করেন এবং তার প্রতি সমর্থন জানিয়ে পর্ষদকে অনুরোধ করেন যা এই ধরনের নেতৃস্থানীয় সংগঠনটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সেলিম ওসমান তার পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন, ‘বর্তমান নির্বাহী সভাপতি হাতেম দীর্ঘদিন ধরে আমাকে, বিকেএমইকে ও নিট সেক্টরের উন্নতির জন্য সহায়তা করে গেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমি পরিচালনা পর্ষদের সকলের কাছে অনুরোধ রাখতে চাই, আমার বিদায়ের পর পর বিকেএমইএ ও নিট সেক্টরের উন্নয়নকল্পে মোহাম্মদ হাতেম এর অবদান এবং প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করে তাকে এই নতুন বিকেএমইএ পরিচালনার জন্য সভাপতির দায়িত্বভার অর্পণ করা হোক।’
অনুগত পর্ষদও বিনা বাক্যব্যয়ে তার কথা মেনে নিয়েছেন এবং মোহাম্মদ হাতেমকে সভাপতি, সাবেক স্বৈরশাসকের দোসর সেলিম ওসমানের অনুগতদের নিয়েই গঠিত হয়েছে প্রহসনের বর্তমান পর্ষদ।
উল্লেখ্য, মোহাম্মদ হাতেম বিগত তিন বছর যাবত নির্বাহী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাকে সুযোগ্য উত্তরাধিকারী হিসেবে তৈরি করার লক্ষ্যে ২০২১ সালে নির্বাহী সভাপতির একটি নতুন পদ সৃষ্টি করে সেখানে তাকে বসান সেলিম ওসমান। বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলের পুরোটাই সেলিম ওসমানের অনুগত থেকে মোহাম্মদ হাতেমও পুরোপুরি ক্ষমতার সদ্বব্যবহার করেছেন। তিনি সরকারের কতটা আজ্ঞাবহ সর্বশেষ তার প্রমাণ দিয়েছেন গত ২২ জুলাই। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেশের ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠক করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওই বৈঠকে বিকেএমইর তৎকালীন নির্বাহী সভাপতি (বর্তমান সভাপতি) মো. হাতেম বলেন, ‘এরকম একটি সঙ্কটকালে আমরা এমন সিচুয়েশন দেখবো সেটা আশা করিনি। যে তান্ডব আমরা গত কয়েক দিনে দেখেছি, আমরা আশা করব, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্য যারা আছেন, তারা তা উদযাঘটন করবেন এবং আইনের আওতায় আনবেন। আমরা সরকারের পাশে সবসময়ই ছিলাম, এখনো আছি ভবিষ্যতেও থাকবো।’
অভিযোগ রয়েছে মোহাম্মদ হাতেম নারায়ণগঞ্জের বিসিক অঞ্চলে ঝুট (গামেন্টসের পরিত্যক্ত অংশ) নিয়ন্ত্রণ ও জোরপূর্বক জায়গা-জমি দখল করে ভীতিকর এক পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছেন, যা একটি সংগঠনের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি হিসেবে কখনোই কাম্য নয়। সেলিম ওসমান ও তার অনুগতদের নেতৃত্বে বিকেএমইএতে কোটি কোটি টাকা লোপাট ও দুর্নীতি হয়েছে বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। আমরা বৈষম্যের শিকার সাধারণ সদস্যরা সংগঠনটিকে সেলিম ওসমানের অনুগত ও আওয়ামীলীগ সরকারের দোসরদের রাহুমুক্ত দেখতে চাই।
বিগত চৌদ্দ বছরে সংগঠনটির নেতৃত্বে যারা ছিলেন তাদের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা অনুসন্ধানকল্পে বর্তমান সরকারের মদদপুষ্ট পর্ষদকে বাতিল করে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা জরুরি বলেও আমরা মনে করি। এবং দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন করে সংগঠনটির কার্যক্রম পরিচালনায় সুযোগ্যদের অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.