পাহাড়ে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হলে অত্রাঞ্চলের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান পার্বত্য জেলা পরিষদকে গণতান্ত্রিক উপায়ে চলমান আইনী ব্যবস্থার মাধ্যমে বিরাজমান জেলা পরিষদের নিজস্ব আইন মেনে অবিলম্বে সকলের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান জরুরী; এতে নতুন করে কোনো ভোটার তালিকার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. তোফায়েল আহাম্মেদ।
সোমবার ( ৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে রাঙামাটিতে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেছেন তিনি। রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে শুরু হওয়া এই সভা চলে সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত।
পাহাড়ের স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করণে কখন কোন প্রেক্ষাপটে অত্রাঞ্চলে কি চুক্তি হয়েছিলো, বর্তমানে প্রেক্ষাপটে সেটা প্রাসঙ্গিক কিনা তা পুণর্মূল্যায়ন করতে হবে।
প্রয়োজনে সেই চুক্তি সংশোধন করতে হবে। চুক্তির কোন কোন ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে কোন ধারাগুলো বাস্তবায়নযোগ্য এবং কোন ধারাগুলো এখনই বাস্তবায়ন করা দরকার সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার সংস্কার বিষয়ক কমিশনের চেয়ারম্যান ড. তোফায়েল আহাম্মেদ।
তিনি পাহাড়ি জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, তখন যারা চুক্তি করেছিলো, এই চুক্তি আদৌ বাস্তবায়নযোগ্য কিনা সেটা সেসময় ভাবেনি। পাহাড়িদের খুশি করার জন্য এমন চুক্তি করেছিলো কিনা সেটি ভেবে দেখার জন্য পাহাড়বাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি।
উক্ত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেছেন স্থানীয় সরকার বিষয়ক কমিশনের চেয়ারম্যান। এতে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইটিসি) নাসরিন সুলতানা, চাকমা সার্কেল চীফ দেবাশীষ রায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, সাবেক উপমন্ত্রী মনিস্বপন দেওয়ান, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুর রহমান, ড.ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, ইলিরা দেওয়ান, দৈনিক রাঙামাটি পত্রিকার সম্পাদক আনোয়ার আল হক, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মনিরুজ্জামান মহসিন রানা প্রমুখ।
এদিকে সভা শেষে সম্মেলন কক্ষের বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জনাব তোফায়েল বলেন, দেশে আগামীতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সম্ভাব্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন এটা কেউ চাচ্ছে না।
এদিকে, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণে সংশ্লিস্ট্য স্টেক হোল্ডারসহ সমাজ সচেতন ব্যক্তিদের মতামত গ্রহণ এই মতবিনিময় সভার অন্যতম লক্ষ্য হলেও এই মতবিনিময় সভা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।
জুলাই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি, পুলিশ সুপারসহ গুরুত্বপূর্ণ ষ্টেকহোল্ডারদের ছাড়াই বিগত পতিত স্বৈরাচারি সরকারের প্রতিনিধি ও তাদের দোসরদের এবং আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগী বিতর্কিত এনজিও প্রতিনিধিদের নিয়ে সোমবার রাঙামাটিতে বিভিন্ন তথাকথিত পেশাজীবি প্রতিনিধিদের সাথে স্থানীয় সরকার সংস্কার বিষয়ে মতবিনিময় করতে আসা সংস্কার কমিশনের সদস্যরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের তোপের মুখে পড়েছেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং আঞ্চলিক সংগঠনের ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ না জানিয়ে গুটিকয়েক রাজনীতিক ও বিতর্কিত এনজিও কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা করতে চান এ অভিযোগ এনে ছাত্ররা বিক্ষোভ করেন ও কমিশনের সদস্যদের মতবিনিময় সভা কক্ষে ঢুকতে বাঁধা দেন। পরে জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সন্মেলন কক্ষে স্থানীয় সরকার সংস্কার বিষয়ে মতবিনিময় সভা ডাকা হয়। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা সন্মেলন কক্ষে ঢুকতে চাইলে রাঙামাটির বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী জেলা প্রশাসন কার্যালয় ভবনে প্রবেশের মূল ফটকে বাঁধা দেয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ করলে কমিশনের সদস্যরা ওই স্থান ত্যাগ করে কার্যালয়ের অন্যদিকে প্রবেশ করেন। একপর্যায়ে জেলা প্রশাসক ছাত্রদের সাথে আলোচনা করার পর ও মতবিনিময় সভায় ছাত্র প্রতিনিধির উপস্থিতি নিশ্চিত করায় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ইবাংলা/ আন্ত:/ বাএ
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.