মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শপথগ্রহণ করবেন সোমবার (২০ জানুয়ারি)। তার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানটি দেশটির স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার দিকে ক্যাপিটল ভবনে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে প্যারিসভিত্তিক পৃথিবীর প্রাচীনতম সংবাদমাধ্যম এএফপি।
এদিন নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও শপথ নেবেন। এর মাধ্যমে ট্রাম্প-ভ্যান্সের নেতৃত্বাধীন নতুন মার্কিন প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে।
সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে প্রত্যাবর্তন করবেন।
২০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে এ শপথ অনুষ্ঠানের নিরাপত্তায় রাজধানীতে দায়িত্ব পালন করছেন ন্যাশনাল গার্ডের ৭৮০০ সদস্যসহ ২৫ হাজার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য।
এতে বিশ্বের অনেক সরকারপ্রধান ও রাজনীতিবিদকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে তীব্র শীতের মধ্যে হালকা বরফের কারণে এবার পরিবর্তন আনতে হচ্ছে স্থান নির্বাচনে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠিত হবে ক্যাপিটল ভবনের অভ্যন্তরে (ইনডোরে)। যা হবে গত ৪০ বছরের মধ্যে প্রথম। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠিত হতো বাইরে (আউটডোরে)।
এরই মধ্যে ট্রাম্প ওয়াশিংটনে এসে পৌঁছেছেন। শপথ অনুষ্ঠানের আগে তিনি রাজধানীতে ক্যাম্পেইন স্টাইলে একটি সমাবেশ করেছেন। সেখানে তিনি একটি ভাষণও দিয়েছেন। এতে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি, টিকটক, প্রথম দিনের কার্যক্রম ও সফর নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পর প্রথম দিনই রেকর্ড সংখ্যক নির্বাহী আদেশ জারি করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরেকটি টেলিভিশন চ্যানেল এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, অভিষেক ভাষণের পরপরই এসব আদেশ জারির প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে ঠিক কতগুলো আদেশ জারি করবেন তা এখনো নির্ধারিত হয়নি।
এদিকে এএফপি, সিএনএন, স্কাই নিউজ, আলজাজিরা, রয়টার্সের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ২০০ মিলিয়ন ডলারের অভিষেক অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। এর মধ্যে অ্যাপলের টিম কুক এর আগে ক্যাপিটল হিলে ৬ জানুয়ারির তাণ্ডবকে ‘লজ্জাজনক দিন’ বলে উল্লেখ করলেও তিনি ট্রাম্পের অভিযোগের জন্য ১ মিলিয়ন অনুদান দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
কেবল কুক একা নন। আগামী ট্রাম্প প্রশাসনের অনুগ্রহ পেতে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টায় ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত রেকর্ড ১৭০ মিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছে।
উৎসবের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এ অর্থের পরিমাণ ২০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে বলে অনেকে আভাস দিয়েছেন। এই তহবিল অভিষেক অনুষ্ঠানের ব্যয়, সেই সঙ্গে প্রাইভেট বলপার্টি এবং কুচকাওয়াজের মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ব্যয় করা হবে।
এ ছাড়া গুগল, অ্যামাজন, মাইক্রোসফ্ট এবং মেটা জানিয়েছে, তারা ১ মিলিয়ন ডলার করে তহবিল সরবরাহ করবে। সেই সঙ্গে ওপেন আইয়ের সিইও স্যাম অল্টম্যানও ১ মিলিয়ন ডলার দিয়েছেন।
অন্যান্য বড় অর্থদাতার মধ্যে রয়েছে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার, আর্থিক পরিষেবা কোম্পানি ইনটুইট, স্টক-ট্রেডিং অ্যাপ রবিনহুড এবং ফোর্ড ও জেনারেল মোটরসের মতো অটোমোবাইল কোম্পানি।
ট্রাম্পের আগের অভিষেকেও রেকর্ড পরিমাণ ১০৬.৭ মিলিয়ন ডলার অনুদান সংগ্রহ হয়েছিল। অন্যদিকে বাইডেন ২০২১ সালের অনুষ্ঠানের জন্য অনুদান হিসাবে মাত্র ৬১.৮ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন।
সাধারণত, মার্কিন সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি নতুন প্রেসিডেন্টের শপথবাক্য পাঠ করান। এবার জন রবার্টস দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাম্পের শপথবাক্য পাঠ করাবেন।
মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের প্রথম ধারায় নেওয়া শপথে তিনি বলবেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে শপথ করছি, বিশ্বস্ততার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের দায়িত্ব সম্পাদন করব এবং আমার সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান রক্ষা, সংরক্ষণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করব।’
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.