করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও এতে মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় সারা দেশে কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হচ্ছে সোমবার থেকে। এ সময় সব ধরনের সরকারি–বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। জরুরি পণ্যবাহী ছাড়া সব ধরনের গাড়ি চলাচলও বন্ধ থাকবে। শুধু অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
শুক্রবার (২৫ জুন) রাতে সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, সোমবার (২৮ জুন) থেকে পরবর্তী ৭ দিন পর্যন্ত সারা দেশে কঠোর বিধিনিষেধ পালন করা হবে। এ সময় জরুরি কারণ ছাড়া বাড়ির বাইরে কেউ বের হতে পারবেন না।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আপাতত সাত দিনের জন্য কঠোর এই বিধিনিষেধ পালন করা হবে। পরে প্রয়োজন হলে আরও বাড়ানো হবে। তিনি বলেন এবার এই সিদ্ধান্ত কঠোর ভাবে মানার জন্য পুলিশ থাকবে, বিজিবি থাকবে।
পাশাপাশি সেনাবাহিনীও থাকতে পারে ।কঠোর লকডাউনের বিষয়ে আরও বিস্তারিত তুলে ধরে শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে আজকের তথ্যবিবরণীতে বলা হয়েছে।
এক বছরের বেশি ধরে করোনা মহামারিতে ধুঁকছে বাংলাদেশ। গত বছরের শেষ দিক থেকে কয়েক মাস করোনার প্রকোপ কিছুটা কমেছিল। তবে এ বছরের মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় ৫ এপ্রিল থেকে আবার বিধিনিষেধের আওতায় আসে দেশ।
প্রথমে সাত দিনের জন্য গণপরিবহন চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। পরে তা আরও দুই দিন বাড়ানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আরও কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হয়। পরে তা আরও বাড়িয়ে ১৫ জুলাই পর্যন্ত করা হয়েছে। কিন্তু দেশে এখন সংক্রমণ পরিস্থিতি এপ্রিলের মতো ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে।
এবার করোনার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয় গত ঈদুল ফিতরের পরপরই। ভারত সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে রোগী দ্রুত বাড়তে থাকে। পরে তা আশপাশের জেলায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা, মৃত্যু ও শনাক্তের হার কয়েক গুণ বেড়েছে।
গত ১ জুন যেখানে আগের ২৪ ঘণ্টায় ৪১ জনের মৃত্যু ও ১৭৬৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়, সেখানে শুক্রবার (২৫ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০৮ জনের মৃত্যু এবং ৫ হাজার ৮৬৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
বর্তমানে দেশের অধিকাংশ জেলা করোনার ভয়াবহতার ঝুঁকিতে রয়েছে। গত ১৪ থেকে ২০ জুন নমুনা পরীক্ষা ও রোগী শনাক্তের হার বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাপ্তাহিক রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪০টিই সংক্রমণের অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হওয়ায় গত ২২ জুন থেকে ঢাকাকে সারা দেশ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই প্রচেষ্টায় ঢাকার আশপাশের চারটি জেলাসহ মোট সাতটি জেলায় জরুরি সেবা ছাড়া সব ধরনের চলাচল ও কার্যক্রম ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
এই সাত জেলা হলো মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ। তবে দেশে করোনা পরিন্থিতি মারাত্মাক আকার রূপ নেওয়ায় এখন সারা দেশই কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় আসছে।
ই আই/ সেনা/ ২৬ জুন, ২০২১