করোনা মহামারিতে যখন জনজীবন বিপর্যস্ত, প্রতিদিন সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে, তখন ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের খবরটি বাড়তি উদ্বেগ তৈরি করে বটে। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। কিন্তু সজাগ না হলে যেকোনো সময় সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে বলে জনস্বাস্থ্যবিদেরা আশঙ্কা করছেন।
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরে যত ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন, তার ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশই জুন মাসে। ৩০ জুন পর্যন্ত এই সংখ্যা আরও বাড়বে নিশ্চয়ই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন মোট ২৪৭ জন। তাঁদের মধ্যে জুন মাসে সর্বোচ্চ ১৪৭ জন।
আর ২৩ জুন এক দিনেই আক্রান্ত হলেন ১২ জন। অন্যদিকে মে মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৩। মার্চ-এপ্রিলে আরও কম। এর অর্থ যতই দিন যাচ্ছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে ডেঙ্গু ও করোনার উপসর্গ প্রায় অভিন্ন। জ্বর, শ্বাসকষ্ট দুই রোগেরই উপসর্গ।
তবে করোনা শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে যেভাবে অকেজো করে দেয়, ডেঙ্গু তা করে না। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা। সাধারণত ভবন বা সড়কের পাশে জমে থাকা নোংরা ও ময়লাযুক্ত পানিতে এডিস মশা জন্ম নিয়ে থাকে।
তাই এডিস মশা যাতে জন্মাতে না পারে, সে জন্য কার্যকর ও টেকসই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হয়েছে।
মশা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মাস কয়েক আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ওয়েবিনার আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল; যাতে দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
ওই আলোচনায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম মশার উপদ্রব বাড়ার বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ সবার সমন্বিত ও কঠোর উদ্যোগের ফলে ২০২০ সালে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ছিল।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। স্বাস্থ্য পরিষেবা অধিদপ্তরের মতে, তখন ১৯ হাজার ৫১৩ জন আক্রান্ত হন। সরকারি হিসাবে ১৯ জন মারা গেছেন, বেসরকারি হিসাবে ৫০ জন।
ঢাকার খাল ও পয়ঃপ্রণালি পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব সম্প্রতি ওয়াসার কাছ থেকে নিয়ে সিটি করপোরেশনের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।
এরপর তারা খাল উদ্ধার অভিযানে থমকে থাকলেও পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। এখনো ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। অঙ্কুরেই এর বাহন এডিস মশা বিনাশ করতে হবে। বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে ডোবা–নালা কোথাও ময়লা পানি জমতে দেওয়া যাবে না।
ঢাকা দক্ষিণের সিটি মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেছেন, কোনো ভবনের নিচে পানি ও ময়লা-আবর্জনা জমে থাকলে সেই ভবনের মালিকই দায়ী থাকবেন। অনেক সময় মালিকেরা ভবনে থাকেন না বলে কর্মচারীদের ওপর দায় চাপানো হয়। কিন্তু মূল দায় মালিকেরই।
কেবল ব্যক্তিমালিকানাধীন বা বেসরকারি ভবন নয়, সরকারি ভবনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অফিসের প্রধান নির্বাহীকেও দায় নিতে হবে। করোনাকালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়লে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে। তাই ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে সংক্রমণ বাড়ার আগেই।