বাইক্কা বিলে কমেছে ‘খয়রা কাস্তেচরা’

ইবাংলা ফিচার ডেস্ক

বাইক্কা বিলে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে নানা পরিযায়ীরা পাখিরা এক সময় ছুটে আসতো। পাঁচ থেকে সাত বছর আগেও পরিযায়ীরা তাদের মিলন মেলার আসর বসাতো। শত-সহস্র পাখিদের কলতানে মুখরিত থাকতো এই জলাভূমি।

কিন্তু গত দু-এক বছর ধরে বাইক্কা বিলে পরিযায়ী পাখিদের আগমন তুলনামূলকভাবে অনেক কমে গেছে। বর্তমানেও চলতি বছরের নভেম্বরে পরিযায়ী পাখিরা বাইক্কা বিলে আসেনি অন্যান্য বছরগুলোর তুলনায় অধিক হারে। এর অন্যতম কারণ ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতা।

জাল, বিষটোপসহ নানা পদ্ধতিতে বাইক্কা বিলের পার্শ্ববর্তী বিলে লুকিয়ে পাখি শিকার, বিলের ভাসমান জলজ উদ্ভিদের কমে যাওয়া, মানুষ কর্তৃক এসব জলজ উদ্ভিদ আহরণ, বিনষ্ট করার পাখিরা বাইক্কা বিলে আসতে ভয়ভীতি বোধ করছে।

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অবস্থিত বাইক্কাবিল জলাভূমির জলধারায় পরিযায়ীদের মিলনমেলা আজ হয়। তবে সেরকমভাবে না। প্রতিবছর চার-পাঁচ মাস এই জলকেলি ও কলকাকলিতে পূর্ণ থাকে এ জলাধার। এখানেই দেখা মেলে পৃথিবীর বিপন্ন পাখিদের বিরল মুহুর্তগুলো। তবে তা খালি চোখে ভালোভাবে দেখা কখনো সম্ভব নয়।

বাইক্কাবিলের টাওয়ার পাখিদেখার অসাধারণ উপকরণগুলোর একটি। এর উপর থেকে টেলিস্কোপে চোখ রাখলেই চমৎকৃত লেন্সের ফাঁক দিয়ে পাখিরা দৃশ্যমান হতে শুরু করে। ভালো লাগার বিস্ময়কর অনুভূতির জন্ম নেয়।

পাখি শুমারিতে অনেক জলচর পাখিদের ভিড়ে অনিয়মিত পরিযায়ী পাখি ‘খয়রা কাস্তেচরা’দের খুঁজে পাওয়া গেছে। তাদের সংখ্যা দুই শত অষ্টআশি। এদের ইংরেজি নাম Glossy Ibis এবং বৈজ্ঞানিক নাম Plegadis falcinellus।

আন্তর্জাতিক পাখি বিশেষজ্ঞ ড. পল থমসন দীর্ঘদিন এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে বসবাস করে বাংলাদেশের পাখি ও প্রকৃতিসংশ্লিষ্ট গবেষণার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তিনি বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সাথেও নিজের সংশ্লিষ্টতা ধরে রেখেছেন। পরিযায়ী পাখি শুমারি, জলচর পাখিশুমারিসহ বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের নানান কর্মসূচিতে ছুটে যান দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

পাখি বিষয়ক গবেষণার কাজে ড. পল থমসন অজস্রবার বাইক্কা বিলে এসেছেন। ‘গ্লোসি আইভিস’ সম্পর্কে তিনি বলেন, পৃথিবীব্যাপী বিপন্ন পাখিদের তালিকাভুক্ত পাখি ‘গ্লোসি আইভিস’। তাদের বাইক্কা বিলের জলাভূমিতে দেখতে পেয়ে আমার খুব ভালো লাগছে। জলবায়ু পরিবর্তন, আবাসস্থল বিপন্নসহ নানা কারণে এরা মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখিন। ফলে আগে মতো ওরা আসেনা তাদের প্রিয় জলাভূমিগুলোতে।

তিনি আরো বলেন, ‘গ্লোসি আইভিস’ মাঝারি আকারের জলচর পাখি। এদের দেহ কালচে ও খয়েরি। গলা ও মাথা পালকপূর্ণ। এদের ঠোঁট লম্বা, বাঁকা ও সরু। পা এবং পায়ের অঙ্গুলও লম্বা। এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৫ সেন্টিমিটার এবং ওজন প্রায় ৭৫০ গ্রাম।

পাখির বৈশ্বিক বিস্তৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, উত্তর আমেরিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত উপমহাদেশ এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় তাদের দলগত বিচরণ রয়েছে।

ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন। তবে প্রজনন মৌসুমে ছেলে ‘গ্লোসি আইভিস’দের মাথা, ঘাড়, কাঁধ ও কাঁধর ঢাকনি পুরোপুরি গাঢ় তামাটে রঙের হয়ে উঠে বলে জানান এই আন্তর্জাতিক পাখি বিশেষজ্ঞ ড. পল থমসন।

ইবাংলা / এইচ/ ৭ ডিসেম্বর, ২০২১

‘খয়রা কাস্তেচরা’
Comments (0)
Add Comment