জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জের বিভিন্ন হাট বাজারে পান বিক্রি করেন আমেনা। একক নারী হকার হওয়ায় সমালোচনার দৃষ্টিতেও পড়তে হয় আমেনাকে। তার পেশাকে আমাদের এ ভদ্রসভ্য সমাজে সহজেই মেনে নিতে পারেনি কেউ। কিন্তু আমেনা দমাবার পাত্র নয়।
সমালোচকদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে আজ পেটের দায়ে হকারি করে পান বিক্রি করছেন। কাঁধে ডালা-ঝুড়ি ঝুলিয়ে হাট-বাজারের রাস্তায় রাস্তায় পান, সিগারেট বিক্রি করে চলেছেন। কারো ওপর ভরসা না করে পেটের দায়েই আজ ডাল-ঝুড়ি তার একমাত্র সম্বল।
হকার আমেনা বেগমের জন্মস্থান বকশিগঞ্জ পৌরসদর গোয়ালগাঁও গ্রামে। জন্মের দুই মাস পর বাবা আমুর উদ্দিনকে হারান। যার কারণে ছোট বেলা থেকেই পার্শ্ববর্তী দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ঝাউডাংগা গ্রামে নানার বাড়ি থেকে সকালের ঝাড়ু পেটা খেয়ে জীবন শুরু।
শিশুকাল পার হতে না হতেই বিয়ের পিরিতে বসতে হয় আমেনাকে। পারিবারিক আলোচনায় ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন একই উপজেলার তারাটিয়া এলাকার গ্রাম্য পশু চিকিৎসকের সঙ্গে।
আমেনা জানান, ‘বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই নানা ছলার অজুহাতে চলে শারীরিক নির্যাতন। এ অবস্থায় সে অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় তার স্বামী কৌশলে তাকে ডিভোর্স দেন। শুরু হয় নতুন করে আরেক জীবন। চারদিকে অন্ধকার নেমে আসে আলোময় জীবনে।
কোনো উপায়ন্তর না দেখে জীবনযদ্ধে নেমে পড়েন। অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ, ফসলের মাঠে কাজ। পেটের দায়ে অন্যের ছোট ছোট কাজ কোনটিই তার ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটায়নি। জমি নেই, মাথা গোজার ঠাঁইও নেই।’
স্বামী পরিত্যক্তা এই নারী জানান, দীর্ঘদিন যাবত একটি মেয়ে সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করেছেন। এলাকায় অনেক দানবীর মানবিক থাকার পরও কেউ এগিয়ে আসেনি। অভাবের হাত থেকে বাঁচাতে অল্প বয়সেই বিয়ে দিতে হয়েছে তার একমাত্র মেয়েকে। ভাগ্যে রয়েছে তার একমাত্র মাত্র জন্মদাতা মা। অনেকটা নিরুপায় হয়েই বেঁছে নেয় পান-সিগারেটের ব্যবসা। সারাদিন হাটে বাজারে পান-বিড়ি বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়েই তার সংসার চলে।
ছবি তোলার কথা বলতেই ঝড় ঝড় করে বলতে থাকেন- ‘ছবি তুইলি কি করবেন? পেপার পত্রিকায় না কি ফেসবুকে দিবেন? মাইনষেক আমার ছবি দেহাইয়ে কি লাব। আপনেরা পেপারত দিলেও আমার এল্লেই করি খাউন লাগব, না দিলেও এল্লেই করি খাউন লাগব। মধ্যেথনে খালি আমার ছবি মাইনষে দেইখে হাসাহাসি করবো। কেউ আর দুঃখ বুঝব না।’
আবেগঘন কণ্ঠে আমেনা আরো বলেন, ‘অনেকেই কিছু পায়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ছবি তোলে ফেসবুকে দেয়। মূলত তার কোনো উপকারে আসেনি কেউ। এ জন্য তিনি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন। কারো ওপর ভরসাও করেন না। যা আয় হয় তা দিয়েই চালিয়ে নেন সংসারের বোঝা।
নানা অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে আমেনা আজ হাট বাজারে পান বিড়ি বিক্রেতা। জীবনযুদ্ধে হার না মানা আমেনা সরকারি সহযোগিতায় একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই হলে হয়তো শেষ জীবনে একটু হলেও শান্তি পেতো।
বিষয়টি দেওয়ানগঞ্জের ইউএনও, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার দৃষ্টি দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার দাবি এলাকাবাসীর।