লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় পুত্রবধূকে ধর্ষণকারী সেই লম্পট শ্বশুর মোকসুদার ও তার সহযোগীকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকালে উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মহিষাশ্বহর গ্রাম থেকে তাদের আটক করা।
আটকরা হলেন- উপজেলার উত্তর তালুক পলাশী গ্রামের মৃত বদিয়ার রহমানের ছেলে মকসুদার রহমান (৪৮) ও তার ভাই সহযোগী মনসুর আলী (৫২)। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, উত্তর তালুক পলাশী গ্রামের মোকসুদার রহমানের ছেলে অটোচালক হাবিবুর রহমান তিন মাস আগে প্রতিবেশী এক মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে নববধূ শ্বশুর বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন।
স্বামী দিনের বেলায় অটো চালাতে বাইরে ব্যস্ত থাকেন। তার শাশুড়িও অন্যের বাড়িতে কাজে যান। এ অবস্থায় শ্বশুর মোকসুদার রহমানসহ পুত্রবধূ বাড়িতে থাকেন। গত সপ্তাহে নববধূ জ্বরে আক্রান্ত হলে ওষুধ এনে দেন শ্বশুর মোকসুদার রহমান। এ সময় নববধূকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে ধর্ষণ করেন তিনি।
পরের দিনও শ্বশুর তাকে কু প্রস্তাব দিলে পুত্রবধূ নারাজী জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শ্বশুর নববধূকে মারধর করলে চোখে আঘাত পান তিনি। অবশেষে দ্বিতীয় দফায় পুত্রবধূকে ধর্ষণ করেন লম্পট শ্বশুর মোকসুদার রহমান। এভাবে সপ্তাহ ধরে লাগাতার ধর্ষণের শিকার নববধূ বিষয়টি তার স্বামী ও শাশুড়িকে জানান।
শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) হাবিবুর অটোরিকশা নিয়ে বাইরে গিয়ে কিছুক্ষণ পর বাড়ি ফিরে এসে নিজ চোখে অপকর্ম দেখে বাবার ওপর ক্ষিপ্ত হন। এসময় লম্পট বাবাকে ধাওয়া করেও ধরতে পারেননি। রোববার (৫ ডিসেম্বর) বিষয়টি নিয়ে বাবা ছেলের মাঝে পুনরায় বাগবিতণ্ডা হলে নিজ বাড়িতে প্রকাশ্যে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান অটোচালক হাবিবুর রহমান। এসময় চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এসে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এ ঘটনায় নির্যাতিতা নববধূর অভিযোগের ভিত্তিতে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে ঘটনা তদন্তে নামে পুলিশ। এদিকে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় একটি মহল নির্যাতিতা নববধূকে জিম্মি করে রাখে। অবশেষে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার (৬ নভেম্বর) পুলিশ অভিযান চালিয়ে নির্যাতিতা নববধূকে উদ্ধার করে। পরে মঙ্গলবার (০৭ ডিসেম্বর) সকালে মহিষাশ্বহর গ্রামের বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপনে থাকা ধর্ষক লম্পট শ্বশুর মোকসুদার রহমান ও তাকে পালাতে সহায়তাকারী বড় ভাই মনসুর আলীকে আটক করে পুলিশ।
নির্যাতিতা নববধূর দেওয়া জবানবন্দি মূলে এ ঘটনায় ওই নববধূর বাবা বাদী হয়ে লম্পট শ্বশুর মোকসুদার রহমানকে প্রধান করে চারজনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) আদিতমারী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আটক দুজনকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী জানান, লম্পট মোকসুদার রহমান অনেক মেয়ের এমন সর্বনাশ করেছেন। একাধিক গ্রাম্য বিচারে তাকে সতর্ক করা হলেও তার চরিত্রের কোনো সংশোধন হয়নি।
আদিতমারী থানা ওসি মোক্তারুল ইসলাম বলেন, শ্বশুর কর্তৃক নববধূ ধর্ষণের মামলায় প্রধান আসামি শ্বশুর মোকসুদার ও তাকে পালাতে সহায়তাকারী তার বড় ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি দুই আসামি একই গ্রামের মৃত মাহাতাব উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩২) ও আলম মিয়াকে (৬০) গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ইবাংলা / নাঈম/ ৭ ডিসেম্বর, ২০২১