বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় বলেছেন, সদ্য সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এটা আসলে কারোরই কাম্য নয়। সেই জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এটি একটি সামগ্রিক বিষয়। একটি ঘটনা দিয়ে সকলকে বিচার করা যাবে না। করলে সেটি সঠিকও হবে না। রাজনীতিতে আমরা একে অপরের সমালোচনা করবো। কিন্তু সমালোচনার ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবসময় আমাদের মতো অপেক্ষাকৃত তরুণ রাজনীতিবিদদের যুক্তির সঙ্গে পরিশীলিতভাবে সমালোচনা করার আদেশ, উপদেশ এবং একই সঙ্গে নির্দেশ দেন। এটি তিনি সংসদের ভেতরে-বাইরে যেখানেই দেখা হয়, মনে করিয়ে দেন। আমরা সে শিক্ষাই নিয়েছি এবং সেভাবেই চলার চেষ্টা করছি।
রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইবাংলার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেছেন তরুণ এই সাংসদ। পাঠকদের জন্য সাংসদ তানভীর শাকিল জয়-এর সাক্ষাৎকার নিয়েছে টিম ইবাংলা।
তানভীর শাকিল জয় বলেন, দেশে ও বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনায় বেশ পার্থক্য আছে। ওখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রচুর গবেষণার সুযোগ আছে। গবেষণার সুযোগ থাকার কারণে তাদের পাঠদানসূচি বাস্তবায়ন খুবই গোছানো প্রকৃতির হয়। যেসব শিক্ষক পাঠদান করেন, তার বিভিন্ন বিষয় শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরেন। বইয়ে যে বিষয়টি আছে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা বা ছাত্রকে একটু গবেষণার সুযোগ করে দেওয়ার বিষয়টি তুলনামূলকভাবে বিদেশেই বেশি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশ। আমেরিকায় মতো জায়গায় একটি ক্লাস রুমে ১০ থেকে ১৫ জনের শিক্ষার্থীকে নিয়ে ক্লাস নেন একজন শিক্ষক। আর বাংলাদেশে ২০০-৩০০ শিক্ষার্থী দিয়ে একটি শ্রেণীকক্ষ ভর্তি থাকে। সুতরাং তাদের অবদানকে অস্বীকার করা উচিত নয়। আমরা অনেক সময় শিক্ষকদের সমালোচনা করি। এটি ঠিক নয়।
সংসদ সদস্য জয় বলেন, আমাদের শিক্ষার অনেকগুলো মাধ্যম। আপনি চাইলেই একদিনে এগুলো বন্ধ করতে পারবেন না। ধীরে ধীরে তাদেরকে মূল ধারায় আনতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এটিই করছেন। আমরা শুধু রাজনীতি নিয়েই বলি, কিন্তু রাজনীতি শিক্ষা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ফলে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে আমি মনে করি, শিক্ষা নিয়েও কথা বলতে হবে।
উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতিতে আসা প্রসঙ্গে তানভীর শাকিল জয় বলেন, উত্তরাধিকারের রাজনীতিকে আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখি। এখানে নেতিবাচকের কিছু নেই। এই যে অনেকে আমাকে বলে আমি নাসিম সাহেবের ছেলে। এতে আমি গর্বিত। কারণ আমি তো আর খন্দকার মোশতাকের ছেলে না। আমি মনসুর আলীর নাতি, মোহাম্মদ নাসিম সাহেবের ছেলে। এটা আমাকে শক্তি যোগায়। এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়। অনেক সময় এটি বলা হয়, শুধু বাংলাদেশে এবং ভারতে উত্তরাধিকারের রাজনীতি। এটি ঠিক নয়।
তিন পুরুষের উত্তরাধিকারী এই তরুণ রাজনীতিক বলেন, উত্তরাধিকারের রাজনীতি সব দেশেই আছে। আপনি যদি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকান, সিনিয়র বুশ, জুনিয়র বুশ, বুশের ভাই জেবা বুশ। এরা সবাই কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছে। বিল ক্লিনটনের বউ হিলারি ক্লিনটনও কিন্তু একই ধারায়ই রাজনীতিতে এসেছে। ব্যবসার ক্ষেত্রে যেমন যার বাবা, সে হয়ত চিন্তা করে আমিও ব্যবসায়ী হবো। যার বাবা শিক্ষক, সে চিন্তা করে শিক্ষক হবে। ফলে যার বাবা বা মা রাজনীতিবিদ, সেও চিন্তা করে রাজনীতিবিদ হওয়ার।
তিনি বলেন, আমার দাদা এবং পিতার জন্য আমার একটি রাজনৈতিক পরিচিতি আছে। কিন্তু আমি সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর যদি জনগণের সেবা করতে না পারি, তাহলে কি আমি উত্তরাধিকারের রাজনীতি ধরে রাখতে পারবো? মানুষ আপনাকে নাসিম সাহেবের ছেলের জন্য বা মনসুর আলীর নাতি হিসেবে একবার ভোট দেবে, বারবার কি ভোট দেবে? আপনি কাজ না করলে কখনোই দেবে না। সুতরাং উত্তরাধিকারের রাজনীতি একটি ইতিবাচক দিক, যদি কাজে লাগান। আমার বাবা ও দাদার জন্য আমি এলাকায় অপরিচিত কেউ না। সবাই আমাকে চেনে, ভালোবাসে। এটাকে কাজে লাগাতে হবে।
উত্তরাধিকারের রাজনীতি করতে গিয়ে কোনো চাপ অনুভব করেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাবা ৪০ বছর রাজনীতি করেছেন। তিনি মানুষের সাথে মিশে গিয়েছিলেন, আমাদের জন্য আমাদের এলাকার মানুষের জন্য এত কিছু করেছিলেন। যখনই আমি সামনে এগিয়ে যাই তখন আমাকে পদে পদে তার সাথে তুলনার সম্মুখীন হতে হয়। আপনার বাবা এইগুলো করে দিয়ে গেছে। ফলে আমরা আশা করি আপনিও এগুলো করে যেতে পারবেন।
সিরাজগঞ্জ-১ আসনের এই তরুণ এমপি বলেন, মোহাম্মদ নাসিমের মতো লোক তো আর যুগে যুগে আসবে না। এটা ঠিক যে, চাপ অনুভব করি কিন্তু এই চাপটাই মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে গেলে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আপনি যদি আপনার কাজে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে পারেন, তবে মানুষ অন্তত মনে করবে, আপনি তো চেষ্টা করে যাচ্ছেন আন্তরিকভাবে, আর এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
তরুণ রাজনীতিবিদদের যে নৈতিক স্খলন তা কাটিয়ে উঠার ব্যাপারে তানভীর শাকিল জয় বলেন, একটা জিনিস কিন্তু ভালোভাবে মাথায় রাখতে হবে আর সেটা হলো ডিজিটাল বাংলাদেশের যেমন সুবিধা আছে ঠিক তেমনি কিন্তু অসুবিধাও আছে। যে কেউ যে কোনো কিছু বলে দিচ্ছে, করে দিচ্ছি, ভিডিও করে ছেড়ে দিচ্ছে। আর তা অনলাইন মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে, সত্যি-মিথ্যার যাচাই কিন্তু পরে করা হচ্ছে।
যতক্ষণে আপনি সত্যি-মিথ্যা যাচাই করতে পারছেন, ততক্ষণে আপনি কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। আর এটাও হুট করে বন্ধ করা কিন্তু সম্ভব না। সবার ভেতর এটা নিয়ে একটা সচেতনতা তৈরি করা উচিৎ। রাজনীতিবিদদের মাঝেও এটা নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা উচিৎ। তাহলেই আমরা এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে পারবো।
ইবাংলা/টিআর/ ১২ ডিসেম্বর, ২০২১