বীর বাঙালি ও শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস স্মরণ

আমিনুল ইসলাম

বাংলাদেশে পালিত উল্লেখযোগ্য দিবস গুলোর মধ্যে বিশেষ স্থান দখল করে আছে শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ চূড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধিকার আন্দোলনের মাধ্যমে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

ভারত ভাগের পর ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি দেশ আত্মপ্রকাশ করে বিশ্ববুকে। এই পাকিস্তান দুটি খন্ড ছিল। একটি ছিল পশ্চিম পাকিস্তান ও অপরটি ছিল পূর্ব পাকিস্তান পরবর্বীতে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসাবে বিশ্বের বুকে স্বীকৃতি লাভ করে। পশ্চিম পাকিস্তান শুধু আয়তনে বৃহত হলেও সমগ্র পাকিস্তান অর্থনীতির চালিকা শক্তি ছিল পূর্ব পাকিস্তান।

পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষের ভাষা ছিল বাংলা। এটি বঙ্গদেশ নামেও পরিচিত ছিল। পশ্চিম পাকিস্তানিরা নানা ভাবে পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ ও শাসন করত। এদেশের মানুষের কোনও অধিকার ছিল না। এখানকার অর্থনীতি দিয়েই চলত পশ্চিম পাকিস্তান আর এই দেশের মানুষের ভাগ্যে শোষণ ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
দীর্ঘ সংগ্রামের পর অবশেষে ১৯৭১ সালে ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়।পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীরা বিজয়ের প্রাক্কালে অর্থাৎ ১৪ই ডিসেম্বর দেশের বুদ্ধিজীবি ও সচেতন মানুষের উপর এক ধ্বংসযোগ্য হত্যা চালায়, যাতে বাংলাদেশ বুদ্ধিহীন এক দেশে পরিণত হয়! এই দিনটিকে তাই বাঙালী জাতি শহীদদের স্মরণে শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস হিসাবে পালন করে।

দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর যখন চুড়ান্ত বিজয় অর্জিত হতে যাচ্ছে ঠিক তখনি অর্থাৎ ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার বাহিনী, আল বদর, আল সামস বাহিনী এদেশকে মেধাশুন্য করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়। দেশের অসংখ্যা শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও দেশের জন্য সচেতন নিবেদিত প্রাণ দেশপ্রেমিকদের চোখ বেধে ধরে নিয়ে যায় এবং নির্যাতনের পর তাদের হত্যা করা হয়। তাই ১৪ই ডিসেম্বর তাদের স্মরণে এই দিনটি পালিত হয় শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস হিসাবে।

১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আমরা সেইসব মহান সন্তানদের স্মরণ করি, শ্রদ্ধা জানাই যাঁরা নিজেদের জ্ঞান, বুদ্ধি, অধ্যবসায়ের মাধ্যমে জাতিকে পথ দেখিয়েছেন, আলোকিত করেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয়ের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা হারিয়েছি অধ্যাপক জি সি দেব, মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশীদুল হাসান, ড. আনোয়ার পাশা, সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, নিজামুদ্দীন আহমদ, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, সেলিনা পারভীনসহ আরও অনেককে। তাঁরা সবাই ছিলেন চিন্তা ও মানবতার দিশারি। জাতীয় জীবনের সব ক্ষেত্রে সেই শূন্যতা আমরা আজও অনুভব করে চলেছি। তাঁদের হারিয়ে বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তাঁদের স্বজনেরাও বয়ে চলেছেন এক খণ্ডিত জীবনের ভার। আমরা তাঁদের শোকের সমব্যথী, আমরা তাঁদের ত্যাগের উত্তরাধিকারী।

দিবসটি আমাদের শিক্ষা দেয় যে, নিজে দেশের প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালন করা, যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের গুনাবলী ধারণ করে দেশের যেকোন প্রয়োজনে তাদের সাহায্য সহযীতা করা, নিজেও অন্যদের নেত্রীত্ব দিয়ে দেশ গড়ার কাজে নিজকে নিয়জীত করা। তবেই আমাদের এই জ্ঞান মেধা ও কর্মের উপর ভর করে দেশ হয়ে উঠবে এক আদর্শ সুন্দর ও শান্তির সোপান।

স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের মতই বুদ্ধিজীবিরাও জীবন দিয়েছেন। বীর যোদ্ধারা দেশকে শত্রুমুক্ত করতে সম্মুখ যুদ্ধে তাদের জীবন দিয়েছেন।

ইবাংলা / নাঈম/ ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১

বীর বাঙালিশহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসস্বাধীনতা অর্জন
Comments (0)
Add Comment