পার্বত্য জেলা খাগড়াছরির দিঘীনালা উপজেলার গুচ্ছগ্রামের অসহায় গরীব মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত চাল চুরির অভিযোগ উঠেছে ১ নম্বর মেরুং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রতনের বিরুদ্ধে। শনিবার (১২ জুন) দুপুরে অসহায়দের জন্য বরাদ্দকৃত ৭০ বস্তা চুরিকৃত চাল মুদিদোকানের গোডাউন থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের ৪ নম্বর বেতছড়ি গুচ্ছগ্রামের সদস্যদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল রাতের আধারে চুরি করে গফুর সওদাগরের মুদি দোকানে রাখা হয়। এ খবর জানাজানি হলে শনিবার দুপুরে চালের বস্তাগুলো মুদি দোকান থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যায়।
তথ্যমতে জানা গেছে, মেরুং ইউনিয়নের বেতছড়িতেই ৩৯৮ জনকে কার্ড প্রদান করা হয়। অসহায় গরীবদের জন্য বরাদ্দকৃত সেই চাল চুরি করে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে রতন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রতন চেয়ারম্যান শুক্রবার (১১ জুন) দীঘিনালা খাদ্য গুদাম থেকে চাল উত্তোলন করেন এবং রাতের অন্ধকারে চেয়ারম্যানের সহযোগী সন্ত্রাসী আলী সওদাগর এর মাধ্যমে গফুর সওদাগরের মুদি দোকানে ৭০ বস্তা চাল সরিয়ে রাখে।
এ চাল চুরির ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট সূত্র প্রথমে জেলা প্রশাসকক এবং ইউএনওকে মুঠোফোনে অবগত করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু একাধিবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁরা ফোন রিসিভ করেনি। পরে ওসি দীঘিনালা এবং খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপারকে মুঠোফোনে অবগত করলে পুলিশ সুপার তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দেন।
দীঘিনালা থানার ওসি পেয়ার আহমেদ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু পুলিশ কালক্ষেপন করে ২০ মিনিটের পথ প্রায় তিন ঘন্টা সময় অতিবাহিত করে। এর মধ্যেই রতন চেয়ারম্যানের চোরাই সিন্ডিকেটের প্রধান আলী সওদাগর ও তার ছেলে মঈন গফুর সওদাগরের দোকান থেকে ৭০ বস্তা চাল অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা উপপরিদর্শক (এসআই) নোমান এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই রতন চেয়ারম্যানের বিশ্বস্ত সহযোগি আলী সওদাগর তার ছেলে দ্রুত চাল সরিয়ে ফেলেছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।
স্থানীয়দের মধ্যে অনেকে বলেন, ঘটনার প্রায় তিন ঘন্টা পর পুলিশ বেতছড়ি বাজারে আসে। ততক্ষনে গফুর সওদাগরের দোকান থেকে চুরিকৃত চালের বস্তাগুলো দ্রুত সরিয়ে ফেলেন। চাল চুরির বিষয় রতন চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে প্রতিবেদককে বলেন, ‘এখন কি করার আছে’!
বেতছড়ি গুচ্ছগ্রাম বাঙালি গুচ্ছগ্রাম নামে পরিচিত (যেটি ১ নং মেরুং ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত) অউপজাতীয়দের জন্য বরাদ্দকৃত ৩৯৮টি কার্ড দেয়া হয়। প্রতিমাসে জন প্রতি ৩৫ কেজি ৫০০ গ্রাম চাল বরাদ্দ রয়েছে। হিসেবমতে তিন মাস পর প্রতিটি কার্ডধারীকে ১০৭ কেজি চাল দেয়ার কথা থাকলেও চাল দেয়া হয় ৯০ কেজি। উত্তোলিত চালের বাকি অংশ চুরি করে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগও চেয়ারম্যান রতনের বিরুদ্ধে।
দীঘিনালা থানার ওসি পেয়ার আহমেদ বলেন, আমি তাৎক্ষণিক বিষয়টি ইউএনও সাহেবকে জানিয়েছি এবং ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে আরও বলেন, আমি নতুন এসেছি এক সপ্তাহ হয়নি। এলাকা সম্বন্ধে আমার কোন ধারণা এখনো হয়নি। তবে কোন প্রকার দুর্নীতি, অনিয়ম, মাদক বব্যসাসহ আইন ভঙ্গকারীকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।
উল্লেখ্য যে দুর্নীতিবাজ রতন চেয়ারম্যানের কুকর্মের সহযোগি সংঘবদ্ধ চক্রের সক্রিয় সদস্য ও সন্ত্রাসী ইউপি সদস্য সজীব এই প্রতিবেদককে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় মুঠোফোনে। তার বিরুদ্ধে বিভন্ন প্রকার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ রয়েছে।
ই বাংলা/ আমিনুল/ ১২ জুন, ২০২১