‘আমার মাইয়াডারে আমনেরা আইন্যা দেন’

জেলা প্রতিনিধি, বরগুনা

আড়াই বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে তাবাসসুমের শোকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন বাবা নাসরুল্লাহ তুহিন এই আকুতি করছিলেন।

‘লঞ্চে আগুন দেইখ্যা মাইয়াডারে কোলে লইয়া নদীতে লাফ দিছি। কয়েক মিনিট পর হাত থেইক্যা ঘুমাইন্যা মাইয়াডা ছুইটা যায়। মোর মাইয়াডারে পাই নাই, মোর মাইয়াডারে আমনেরা (আপনারা) আইন্যা দেন।’

পাশের বেডে সন্তানের শোকে অজ্ঞান তার স্ত্রী তানিয়া বেগম। তুহিনের বাড়ি পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের ঘুটাবাছা গ্রামে। তিনি ঘুটাবাছা বাজার জামে মসজিদের ইমাম তিনি ফোনে জানান, ঢাকা থেকে পাথরঘাটার উদ্দেশে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে এম‌ভি অভিযান-১০ লঞ্চে উঠেন তুহিন।

রাত প্রায় তিনটার দিকে লঞ্চে আগুন লাগে। এ সময় প্রাণে বাঁচতে অনেকে নদীতে লাফ দিচ্ছিলেন। তাদের দেখে স্ত্রী-সন্তানসহ নদীতে লাফ দেন তুহিন। কিন্তু নদীতে কিছুক্ষণ সাঁতার কাটার পর হাত থেকে ছুটে যায় তাবাসসুম। এরপর আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জ্ঞান ফেরে তুহিনের। তার স্ত্রী তানিয়ার এখনও জ্ঞান ফেরেনি।

এদিকে ঢাকায় চিকিৎসা শেষে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পাথরঘাটার উদ্দেশে লঞ্চে উঠেছিলেন পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা দাখিল মাদ্রাসার ইংরেজি শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক। আগুন লাগার কিছুক্ষণ পর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি নদীতে লাফ দিয়ে পড়ে নিখোঁজ রয়েছেন, নাকি আগুনে পুড়ে গেছেন তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার স্ত্রী হনুফা বেগম ও মেয়ে রুবি আক্তার বর্তমানে শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

হনুফা বেগমের বোনের ছেলে শফিকুল ইসলাম সজিব বলেন, খালু (আব্দুর রাজ্জাক) দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বাড়ির দিকে রওয়ানা হন। খালা এবং বোনের সন্ধান মিললেও এখন পর্যন্ত খালু নিখোঁজ রয়েছেন। আমাদের আত্মীয়-স্বজনরা হাসপাতালে এবং সুগন্ধা নদীর পাড়ে তার সন্ধানে অপেক্ষায় রয়েছেন।

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৫টা থেকে ৮টা পর্যন্ত এ ঘটনায় আহত হয়ে অন্তত ৮০ জন শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, এ পর্যন্ত ৩৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক যাত্রী। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তাৎক্ষণিকভাবে মৃতদের পরিচয় জানা যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

এদিকে এ ঘটনায় দগ্ধ ৮০-৯০ জন বরিশাল, ঝালকাঠিসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে বরিশালের বার্ন ইউনিট বন্ধ থাকায় সেখানে দগ্ধ রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে সুগন্ধা নদীর পাড় এবং শেবাচিম হাসপাতালে স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

ইবাংলা /টিআর/ ২৪ ডিসেম্বর

চিকিৎসাঢাকাস্ত্রী-সন্তান
Comments (0)
Add Comment