দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে কে নিয়োগ পাচ্ছেন, এ নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা। গুঞ্জন রয়েছে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের অবসরের পর চলতি সপ্তাহে কিংবা জানুয়ারির প্রথম দিকেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।
বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় আগামী ৩০ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। তবে সাধারণত কোনো প্রধান বিচারপতির চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েকদিন আগেই পরবর্তী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে থাকে।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পদ শূন্য ঘোষণা করে চলতি সপ্তাহে বা আগামী মাসে নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এখন রাষ্ট্রপতির দিকে তাকিয়ে আছেন সবাই, কাকে কবে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছেন তিনি।
এদিকে জানা গেছে, অবসরে যাওয়া বিচারকদের শূন্যস্থানে সময়মতো নতুন বিচারক নিয়োগ না পাওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেও বিচারপতির সংকট প্রকট হচ্ছে। বর্তমানে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে মোট বিচারপতির সংখ্যা পাঁচজন। অথচ একযুগ আগে ২০০৯ সালেও আপিল বিভাগে এ সংখ্যা ছিল ১১ জন। এর আগে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে। এটা চলমান প্রক্রিয়া।
দেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অতীতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করার প্রথা যেমন রয়েছে তেমনি তাকে ডিঙিয়ে অপেক্ষাকৃত কনিষ্ঠ বিচারপতিকেও নিয়োগ দেওয়ার নজির রয়েছে। যদিও সংবিধানে এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। রাষ্ট্রপতি যাকে চাইবেন, তাকেই তিনি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিতে পারেন।
নিয়ম অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি পদে সাধারণত জ্যেষ্ঠতা অনুসারে নিয়োগ হয়ে থাকে। সে হিসেবে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ হলেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী। তিনি নিয়োগ না পেলে এর পরে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে রয়েছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ননী ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। এই চারজন বিচারপতির মধ্যে থেকে যেকোনো একজনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিতে পারেন রাষ্ট্রপতি।
প্রধানবিচারপতি নিয়োগ নিয়ে আইনজীবীদের অনেকেই মনে করছেন, জ্যেষ্ঠতা এবং যোগ্যতা অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি হতে পারেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী। আবার কেউ কেউ বলছেন, সার্বিক বিশ্লেষণে দেশের পরবর্তী প্রধান বিচারপতি করা হতে পারে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে।
জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার বিচারপতির তিনজনের অবসরে যাওয়ার মেয়াদ ২০২৩ সালের মধ্যে। সংবিধান অনুযায়ী ৬৭ বছর পর্যন্ত বিচারপতি পদে থাকা যায়। বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী অবসরে যাবেন ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর মেয়াদ ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এছাড়া বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ননী অবসরে যাবেন ২০২৩ সালের ১ জুলাই। এ ক্ষেত্রে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী একটু বেশি সময় পাবেন। অন্যদিকে আপিল বিভাগের অপর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান অবসরে যাবেন ২০২৬ সালের ১১ জানুয়ারি।
সংবিধানে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে যা আছে
সংবিধানের ৯৪ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণ ও নিয়োগ করে থাকেন। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি যিনি “বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি” নামে অভিহিত হইবেন এবং প্রত্যেক বিভাগে আসন গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি যে সংখ্যক বিচারক নিয়োগের প্রয়োজনবোধ করবেন, সেই সংখ্যক অন্যান্য বিচারক লইয়া সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হইবে।’ সংবিধান অনুযায়ী ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত বিচারপতি পদে থাকা যায়।
ইবাংলা / টিপি/ ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১