আকস্মিক বন্যা ও ভাঙন আতঙ্কে উত্তরাঞ্চলবাসি

উত্তরাঞ্চল ব্যুরো :

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদনদীতে পানি ক্রমাগত বেড়েই চলছে। ঐসব অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও নদনদীর পানি কমতে শুরু করায় তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন।

বগুড়া, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম এবং সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেভাবে পানি বাড়ছে, তাতে মাঝারি ধরনের বন্যা হতে চলেছে। ইতিমধ্যে বন্যার পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে কিছু সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার পরিস্থিতি হয়েছে। লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বেড়ে পূর্ব খড়িবাড়ি টাপুরচর এলাকায় বালুর বাঁধ ভেঙে গ্রামের ৫০০ পরিবার পানিবন্দি। বগুড়ার যমুনা নদী তীরবর্তী সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট ও গাবতলীর অনেক এলাকা বন্যায় তলিয়ে গেছে।

চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদে গত ১২ ঘণ্টায় ১৪ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।

কমছে বন্যার পানি বাড়ছে দুর্ভোগ : সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীতে পানি আবারও বেড়েছে। ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষাবাঁধের (হাট পয়েন্টে) ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সোমবার (৫ জুলাই) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উত্তরাঞ্চলের নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। আকস্মিক বন্যা হতে পারে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং এর কাছাকাছি ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয় প্রদেশের সব স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে।

গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদের ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তাঘাট পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদের জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ও করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাখালী পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার বেড়েছে।

নওগাঁর নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যাপ্রবণ এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে, তবে তা বৃষ্টির পানি বা বাংলাদেশের পানি না। এটা ভারতের অরুণাচল, মেঘালায় এবং আসাম প্রদেশের বৃষ্টিপাতের পানি। এসব পানি যমুনা দিয়ে বয়ে যায়।

রোববার (৪ জুলাই) দুপুরে রৌমারীর চরশৌলমারী ইউনিয়নের ঘুঘুমার এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের বাম তীরে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধের কাজ উদ্বোধন করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় গত বুধবার ভোগাই নদের তিন কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে যায়। এতে দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এখন নদের পানি কমে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা কমলেও নদের ভাঙন অংশ মেরামত না করায় দুশ্চিন্তায় এলাকাবাসী।

ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলার পানি কমেছে। কিন্তু মানুষের ভোগান্তি এখনো কমেনি। বন্যাকবলিত সুনামগঞ্জে নদনদী ও হাওরে পানি কমছে। জেলার সব নদীর পানিই এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ই-বাংলা/ বন্যা/ ৬ জুলাই, ২০২১

আতঙ্কেউত্তরাঞ্চলবাসিবন্যাভাঙন
Comments (0)
Add Comment