দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৫০৯ জন, মারা গেছেন সাত জন। দেশে একদিনে ৫০০ জনের বেশি শনাক্ত হওয়ায় নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত ১০ সপ্তাহে এটা সর্বোচ্চ শনাক্ত। এর আগে ১৩ অক্টোবর ৫১৮ জন শনাক্ত হয়েছিলেন। দেশে ইতোমধ্যেই করোনার অতিসংক্রামক ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে শনাক্ত হয়েছেন সাত জন। তাদের মধ্যে সবাই রাজধানীর বাসিন্দা।
এদিকে, ওমিক্রন ও ডেল্টার দাপটকে এরইমধ্যে ‘সুনামি’ আখ্যা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপজুড়ে একদিনে রেকর্ড নতুন রোগী শনাক্তের খবরের মধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধান এই শঙ্কা জানিয়েছেন।
বিবিসি জানিয়েছে, ফ্রান্সে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ইউরোপের রেকর্ড রোগী শনাক্ত হয়েছে বুধবার। একদিনেই ধরা পড়েছে প্রায় দুই লাখ মানুষের। জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৪২৭ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছেন। যা এ যাবৎকালের রেকর্ড। ডেনমার্ক, পর্তুগাল, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াতেও বুধবারের শনাক্ত রোগী আগের রেকর্ড ভেঙেছে। পোল্যান্ডে একদিনেই মারা গেছেন ৭৯৪ জন।
মাত্র একমাসের মধ্যে প্রাধান্য বিস্তার করা ওমিক্রন ধরনটি ডেল্টার চেয়ে কম গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি তৈরি করে বলে প্রাথমিক গবেষণায় বলা হলেও দুই ডোজ টিকা এ ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারছে না বলে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বিদ্যুৎগতিতে। ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অলিভার ভেরান বলেছেন, ওমিক্রন যা ঘটাচ্ছে, তাকে সংক্রমণের ঢেউ বলা চলে না, এটা রীতিমতো ‘জলোচ্ছ্বাসে’ পরিণত হয়েছে।
দেশে বিগত এক সপ্তাহের চিত্র দেখে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সপ্তাহের ব্যবধানেই নতুন শনাক্ত রোগী দ্বিগুণ হয়েছে। বেশিরভাগই ঢাকা জেলার। স্বাস্থ্যবিধি না মানা, রাজনৈতিক জনসমাগম, বিয়েসহ বিভিন্ন পারিবারিক উৎসব, পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে উপচেপড়া ভিড়, পর্যাপ্ত আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টিনের অভাব, রোগীদের আইসোলশনে বাধ্য না করতে পারার কারণে বাংলাদেশ ওমিক্রনের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর করোনার শুরুতে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর-এর তৎকালীন পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছিলেন, ‘যদি কোথাও একই জায়গায় কম দূরত্বের মধ্যে একাধিক রোগী থাকে, তখন ওই জায়গাকে ক্লাস্টার হিসেবে চিহ্নিত করে অনুসন্ধান করা হয়।’
করোনায় রোগী বাড়ার এই ঊর্ধ্বগতি আরেকটা সপ্তাহ দেখতে চান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগে সাবেক প্রধান এবং কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামী সপ্তাহের মধ্যেই প্যাটার্নটা বোঝা যাবে। তবে শনাক্ত ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এটা খুবই আশঙ্কাজনক। আমরা বুঝতে পারছি না, ওমিক্রন কোনদিক থেকে আসছে, এটাই ভয়ংকর। ঢাকায় এত রোগী কোথা থেকে এলো, সেটা আগে খুঁজে বের করা দরকার।’
এক সপ্তাহের ব্যবধানে রোগী দ্বিগুণ হয়ে গেলো মন্তব্য করে আইইডিসিআর-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘এটা ওমিক্রনের প্রভাব। বাংলাদেশে এর শুরু, এতে সন্দেহ নেই। ওমিক্রনের ক্লাস্টার ট্রান্সমিশন হচ্ছে ঢাকায়।’
ইউরোপ-আমেরিকা থেকে অনেকে এসেছেন গত কয়েকদিনে। সামাজিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলছেই। এতে ওমিক্রন এসেছে এবং ঢাকাতেই গুচ্ছ সংক্রমণ হয়েছে, বলেন ডা. মুশতাক। এটা যখন স্থানীয়দের মধ্যে যাবে তখন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে ঢাকার বাইরেও যাবে । তিনি আরও বলেন, ‘আগে ছিল স্পোরাডিক ট্রান্সমিশন (বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্ন সংক্রমণ)। এখন সেটা ক্লাস্টারে গিয়েছে। এরপর যাবে কমিউনিটিতে।’
তার মতে -‘দেশে আইসোলেশন সবচেয়ে বেশি দরকার। আক্রান্তদের ঘরে রাখতে হবে। তাদের জন্য সহযোগিতামূলক ব্যবস্থা করতে হবে। সামাজিক সমর্থন যদি তাদের না দেওয়া হয়, তবে রোগী হু হু করে বেড়ে যাবে।’
ইবাংলা/ টিপি/ ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১