মানুষের মনে ছিল দৃষ্টি জুড়ানো টিউলিপ ফুল। বাৎসরিক ক্যালেন্ডারে দিন পঞ্জিকার পাতায় আবার টেলিভিশন বা হিন্দি ছবির দৃশ্যে টিউলিপ দেখে মন ভরাতো দেশের মানুষ। বাস্তবে টিউলিপ দেখতে ভারতের কাশ্মীর নেদারল্যান্ডসহ শীত প্রধান দেশে হাজার টাকা খরচ করে ভ্রমণে যেতো সাধারণ মানুষ। টিউলিপ চাষের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী না হওয়ায় ফুলটি দেশে একপ্রকার স্বপ্নের মতো মনে হতো।
২০২০ সালে দেশের প্রথমবারের মতো গাজীপুরের শ্রীপুরে সেই টিউলিপের চাষ করেন এক উদ্যোক্তা। দেশের মাটিতে প্রথম টিউলিপ ফুল ফুটায় তা রীতিমত হইচই পড়ে যায়। উদ্যোক্তার টিউলিপ বাগান দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ তার শ্রীপুরের বাড়িতে ভিড় জমায়। পর্যায়ক্রমে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার বাগানে দ্বিতীয়বারের মতো টিউলিপ ফুল ফুটে। দেশের টিউলিপ নজর কেড়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার, টিউলিপ বাগান পরিদর্শনে এসেছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ কৃষি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
টিউলিপ ফুলকে বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে তিনি এবার উত্তরবঙ্গের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, রাজশাহী ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিজ উদ্যোগে বাগান তৈরী করছেন। উদ্যোক্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, দেশে টিউলিপের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। আমার বাগানে পরপর দুইবার টিউলিপ ফুটায় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। সেই চিন্তা থেকে এবার নেদারল্যান্ড থেকে হলুদ, লাল, চার ধরনের পিংক, অরেঞ্জ, সাদা, পার্পেল রংয়েরসহ ৮/১০ ধরনের ৭০ হাজার টিউলিপের বাল্ব (বীজ) আমদানি করা হয়েছে।
আমদানি করা টিউলিপ বাল্ব দিয়ে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় ৪০ হাজার, রাজশাহীতে এক হাজার ও যশোরের গদখালিতে পাঁচ হাজার বাল্ব বাগান তৈরী করে দেশের টিউলিপের এলাকা নির্ধারণে সম্ভাবতা যাচাই করা হবে। এছাড়াও অনেক ছোট উদ্যোক্তা টিউলিপের বাল্ব সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ করেছেন। ইতিমধ্যে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় বাল্ব বুনন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
ফুল চাষি দেলোয়ার হোসেন তার প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছেন “মৌমিতা ফ্লাওয়ার্স”। এর আগে জার্বেরা, চায়না গোলাপ ও বিদেশি বিভিন্ন ফুল চাষে সফল হয়েছেন তিনি। সফল ফুল চাষি হিসেবে ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক পান দেলোয়ার। দেশে প্রথমবারের মতো ভাইরাসমুক্ত সবজির চারা উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেন তিনি।
ফুল চাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের দেশে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চাহিদা মিটাতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ফুল আমদানি করা হয়। ফুল চাষে জড়িয়ে আছে কৃষি অর্থনীতির একটি অংশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ফুল চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠলেও আমরা পিছিয়ে। অর্থনীতি ও চাহিদার কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিদেশি ফুল দিয়ে আমার স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও থেমে থাকিনি। এরই মধ্যে পেয়ে যাই একটির পর একটি সফলতা। জার্বেরা, চায়না গোলাপের পর টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে গত বছর নতুন সফলতা এসেছিল।
নেদারল্যান্ডস টিউলিপ ফুল উৎপাদনকারী প্রধান দেশ। টিউলিপকে নিয়েই সেখানে গড়ে উঠেছে শিল্প। তাই দেশটি প্রতি বছর পালন করে টিউলিপ উৎসব। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে টিউলিপ ছিল স্বপ্ন। আর এই স্বপ্নই ধরা দেয় দেলোয়ারের কাছে।
ইবাংলা / নাঈম/ ০৩ জানুয়ারি, ২০২২