দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশের নারী আন্দোলনের অন্যতন পুরোধা-আইকন, লেখক-কবি কমলা ভাসিন উপমহাদেশের স্বাধীনতার প্রাক্কালে ১৯৪৬ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি জন্মগ্রহণ করেন। রাজনৈতিক সঙ্কুলকালের জাতিকারূপে নিজেকে তিনি বলতেন, ‘The Midnight Generation’.
ভারতের রাজস্থানে জন্ম নেয়া কবি কমলা ভাসিন চিকিৎসক পিতার সঙ্গে ঘুরেছেন রাজস্থান, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। দেখেছেন দেশভাগ, উদ্বাস্তুকরণ, নারীর প্রতি সহিংসতা, যা তাকে মানবিক চৈতন্যে ও নারীবাদী দর্শনে উদ্বুদ্ধ করে।
উত্তর ভারতের উর্দু-হিন্দি বলয়ে কাজ করলেও কমলার কণ্ঠস্বর দক্ষিণ এশিয়া এবং সারা বিশ্বে উচ্চকিত হয়েছিল। গবেষণা, লেখালেখি, সাহিত্য সাধনা এবং অ্যাক্টিভিস্ট রূপে তিনি নিজের জীবন ও কর্মকে প্রসারিত করেছিলেন মানুষের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের মর্মমূলে।
নারী আন্দোলনের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৬ সালে নারীর প্রতি সহিংসতাকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ’ আখ্যা দিয়ে এই অবস্থার পরিবর্তনে ভয়মুক্ত হয়ে নিজেদের বদলে ফেলার আহ্বান জানিয়ে ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত নারী অধিকার নেত্রী কমলা ভাসিন, যা সারা বিশ্বের নজর কাড়ে।
কমলা ভাসিন বিশ্বাস করতেন, ‘তোমার-আমার ব্যক্তিগত জীবন না বদলালে পিতৃতন্ত্র চলে যাবে না। সুতরাং আমি নিজের দিকে আঙুল রাখছি, তোমরা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নিজের দিকে আঙুল রাখো।’ এসব কথা তিনি তার লেখায়, বক্তৃতায় বার বার বলেছেন।
কিঁউকি ম্যায় লডকি হুঁ, মুঝে পঢ়না হ্যায় ইত্যাদি কবিতার জন্য তিনি সুপরিচিত। ১৯৯৫ সালে তিনি একটি সম্মেলনে জনপ্রিয় কবিতা আজাদীর (স্বাধীনতা) একটি পরিমার্জিত, নারীবাদী সংস্করণ আবৃত্তি করেন। তিনি ওয়ান বিলিয়ন রাইজিংয়ের দক্ষিণ এশিয়ার সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৪৭ সালের দেশভাগে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতনের ইতিহাস উন্মোচনে তিনি ছিলেন সরব। বিশ্বায়নের প্রক্রিয়ায় নারীর বিঘ্ন ও বিপদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার অবস্থান ছিল অগ্রণী। তিনি স্বপ্ন দেখতেন নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্যহীন ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ কাঠামোর।
কমলা ভাসিনের মৃত্যতে নারী আন্দোলনে আপাত ছেদ পড়লেও তার অবদান শেষ হয়ে যাবে না। দক্ষিণ এশিয়ার নারীবাদী প্রচেষ্টায় জ্বলজ্বল করবে তার নাম, কর্ম ও কীর্তি।
গত বছরের শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১) ভারতীয় সময় পৌনে ৩টার দিকে তিনি মারা যান।
ইবাংলা /এইচ/ ৮ জানুয়ারি, ২০২