নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সুন্দরবনে পর্যটকদের প্রবেশসহ, সব ধরনের নৌ-চলাচল নিষেধাজ্ঞা বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে প্রত্যাহার করে নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সঙ্গে যৌথসভা শেষে সীমিতসংখ্যক যাত্রী পরিবহণসহ কয়েকটি শর্তে এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। এর আগে, বুধবার (১২ জানুয়ারি) বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ সুন্দরবনে সব ধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয়, যা বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
অপরদিকে, সুন্দরবনের পর্যটন ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের নেতৃবৃন্দ এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) রাত ৯টায় এ দুটি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে তাদের বিআইডব্লিউটিএ’র খুলনা আঞ্চলিক অফিসে সভা করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ। সভায় কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সীমিতসংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলাচলসহ বেশ কয়েকটি শর্তে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।
এ বিষয়ে ট্যুর এসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সভাপতি মইনুল ইসলাম জমাদ্দার বলেন, ‘সরকার যে ১১ দফা নির্দেশনা দিয়েছে, সেখানে নৌপরিবহণ বন্ধের কোনো নির্দেশনা নেই। তাহলে, আমরা এটা কেন মানব?’ তিনি বলেন, ‘আমরা সীমিতসংখ্যক যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ও জাহাজ পরিচালনা করব।’
খুলনা নদীবন্দর ও পরিবহণ বিভাগের উপপরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে, সুন্দরবনে ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সভা শেষে কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সীমিতসংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলাচলসহ আরও কিছু শর্ত দিয়ে সুন্দরবনে পর্যটন ও নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে খুলনা নদীবন্দরের বন্দর ও পরিবহণ বিভাগের উপপরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছিলেন, করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়্যান্ট ‘ওমিক্রন’-এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সুন্দরবন ভ্রমণে নৌযান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত ১০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিএ’র প্রধান কার্যালয় থেকে তাঁকে ওই নির্দেশনা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তারই ভিত্তিতে তিনি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
এর আগে বুধবার (১২ জানুয়ারি) সুন্দরবন ভ্রমণে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে একটি চিঠি দেওয়া হয় সুন্দরবন ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনকে। চিঠিতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নতুন ধরন অমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় খুলনা থেকে সুন্দরবন ভ্রমণ, শিক্ষা সফর, বনভোজন, নৌ-ভ্রমণ ও নৌ-বিহারে ট্যুরিস্টবাহী নৌযান ও লঞ্চগুলো চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হলো। বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘বন বিভাগ থেকে এখনও সুন্দরবন ভ্রমণের বিষয়ে কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। সব এখনও স্বাভাবিক নিয়মে চলছে।’ সুন্দরবনে ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন ট্যুরিস্ট অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবন-এর সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আজম ডেভিড বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত সব ট্যুর অপারেটরদের নৌযান বুকিং দেওয়া আছে।
অনেকেই অগ্রিম টাকা নিয়ে খরচও করে ফেলেছেন। এমন পরিস্থিতে ওই নিষেধাজ্ঞা ট্যুর অপারেটরদের বিপাকে ফেলবে। ওই নিষেধাজ্ঞার পর শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) যেসব নৌ-যানের সুন্দরবনে ট্যুর নিয়ে যাওয়ার কথা তাঁরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতে কী করবেন, তা কেউ বুঝে ওঠতে পারছেন না। এ ব্যাপারে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
করোনা পরিস্থিতির শুরুতে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে সুন্দরবন ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু, পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হলে ওই বছরের ১ নভেম্বর থেকে স্বল্প পরিসরে সুন্দরবন ভ্রমণের সুযোগ দেওয়া হয়। এর সাড়ে সাত মাস পর ফের করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশে ফের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। সাড়ে চার মাস বন্ধের পর ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর আবারও সুন্দরবন ভ্রমণ শুরু হয়।
ইবাংলা / টিআর / ১৪ জানুয়ারি