রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি মাদরাসা-ই আলিয়া ঢাকা’র ভেতরে মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর স্থাপনের সিদ্ধান্তকে অনৈতিক হিসেবে দেখছে প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন ছাত্ররা। রোববার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে মাদরাসা ই আলিয়া ঢাকা’র প্রাক্তন ছাত্র ফোরাম।
সংবাদ সম্মেলনে মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকা’র প্রাক্তন ছাত্র ফোরামের নেতারা বলেন, ‘উপ-মহাদেশের শিক্ষাঙ্গনের প্রায় ২৫০ বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরবের ধারক-বাহক সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকা। সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপুল অর্থ বরাদ্দ করলেও সরকারি মাদরাসা ই আলিয়া ঢাকা বরাবরই রয়েছে অবহেলিত ও বঞ্চিত। চার একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাটির আবাসিক হল এবং ক্যাম্পাস মিলে মাত্র দুইটি ভবন ছাড়া পুরো মাঠ এবং জমি দখলের পায়তারা চলছে।’
সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকা’র ভেতরে মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাতিল করে প্রতিষ্ঠানটির ২৫০ বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকাকে ‘ঢাকা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবি জানান মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকা’র প্রাক্তন ছাত্র ফোরামের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সদস্য সচিব মাওলানা মোহাম্মদ সুরুজুজ্জামান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন মাদরাসা ই আলিয়া ঢাকা’র আহবায়ক মাওলানা অজিজুল হক মুরাদ, অধ্যক্ষ সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য মাওলানা মো. ইসমাইল ফারুক, মাওলানা আমিনুল হক, হাফেজ মাওলানা হাবিবুল্লাহ, মাওলানা আহমাদ আবদুল কাইয়ুম,শহিদুল ইসলাম কবির ও মাওলানা মোক্তার হোসেন খান।
প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও সচিবসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফোরামের নেতারা বলেন, ‘মাদরাসা ও কারিগরী শিক্ষা অধিদফতরের জন্য ভবন আলাদা ও স্বতন্ত্র কোনো স্থানে হতে পারে। সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়ার মতো স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাসের প্রাচীরের ভিতর প্রস্তাবিত ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা শুধু অমানবিকই নয়, অনৈতিক এবং ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উচ্চ শিক্ষার এ বিদ্যাপিঠকে অবজ্ঞা, অবহেলা ও তিলে তিলে ধ্বংসের দিক ঠেলে দেওয়ার এক গভীর চক্রান্ত ও নীল নকশার অংশ।’
তারা বলেন, ‘বর্তমান সরকার মাদরাসা শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করছে। অথচ সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকা’র ছাত্রাবাসসহ এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পরিবর্তে উক্ত প্রতিষ্ঠানের ভেতর মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর স্থাপন করার পরিকল্পনা সরকারের দ্বিমুখী আচরণ ও মাদরসা শিক্ষাকে অবজ্ঞা করার শামিল।’
আমলাতান্ত্রিকতার কূটকৌশলে সরকারকে ভুল বার্তা দিয়ে মাদরাসার শিক্ষক, ছাত্র তথা সাধারণ ধর্মপ্রাণ জনতার মাঝে একটা ভুল বোঝা-বুঝি ও দূরত্ব সৃষ্টির অপকৌশল কি না- তা ক্ষতিয়ে দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ফোরামে নেতারা।
মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকা’র প্রাক্তন ছাত্র ফোরামের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে- সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকার নিজস্ব ভূমিতে মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর ভবন স্থাপন করার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, মাদ্রসার চার একর জমি দখলমুক্ত করার কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, ছাত্রদের আবাসন সংকট নিরসনে কমপক্ষে আরও দুইটি নতুন হল নির্মাণের কাজ অবিলম্বে শুরু করতে হবে, সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকার ছাত্রদের নামে দায়ের করা হয়রানীমুলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহর ও ছাত্রাবাস খুলে দিতে হবে, মাদরাসার ২৫০ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষাকল্পে সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকাকে ‘ঢাকা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়’ করতে হবে।
ইবাংলা / নাঈম/ ২৩ জানুয়ারি, ২০২২