বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে সমস্যার কারণে হাতিলঝিলে গড়ে ওঠা বিজিএমইএ বহুতল ভবন ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এরপরও খিলক্ষেত ও নিকুঞ্জসহ আশপাশের এলাকার বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হওয়া কুড়িল উড়ালসড়ক এলাকায় জলাধারে পাঁচতারকা হোটেল ও শপিং কমপ্লেক্সের জন্য বরাদ্দ দিচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়।
বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) জলাধার উদ্ধার অভিযানে খিলক্ষেত এলাকায় গিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
এ সময় বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদারকে মেয়র আতিকুল ইসলাম ফোন করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আপনারা জলাধারে পাঁচতারকা হোটেল ও শপিং কমপ্লেক্সের জন্য বরাদ্দ দিচ্ছেন। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোনো ধরনের জলাধার ভরাট করা যাবে না। সেখানে কীভাবে বরাদ্দ দিলেন? আপনি কি জানেন না এটা জলাধার? খবর নেন, দ্রুত এই বরাদ্দ বাতিল করেন।
রেলের ডিজিকে মেয়র আরও বলেন, আপনি তাদের (বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠান) বলে দেন এখানে আমি কোন কাজ করতে দেব না। আমি এটা ভেঙে দিচ্ছি। পরে তিনি বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনহীন বিশালাকার একটি সাইনবোর্ড ভাঙার নির্দেশ দেন।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কুড়িল উড়ালসড়ক-সংলগ্ন এলাকায় বিশালাকার একটি জলাধার রয়েছে। এই জলাধারের একপাশে রেললাইন ও কুড়িল উড়ালসড়কের খিলক্ষেত-প্রগতি সরণি অংশ। অন্যপাশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ চলছে। এই জলাধারে খিলক্ষেত ও নিকুঞ্জসহ আশপাশের এলাকার বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হয়।
জায়গাটি বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। গত ডিসেম্বরে নিজেদের অব্যবহৃত ১ দশমিক ৮৪ একর রেলভূমি মিলেনিয়াম হোল্ডিংস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দিয়েছে। মিলেনিয়াম সেখানে একটি পাঁচতারকা হোটেল ও শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য জলাশয়টি ভরাটের কাজ করছে।
বালু ও মাটি দিয়ে জলাধার ভরাট করা হচ্ছে। একটি অস্থায়ী কার্যালয় করেছে মিলেনিয়াম কর্তৃপক্ষ। সিটি করপোরেশনের অনুমোদনহীন প্রকল্পের সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন মেয়র।
এর আগে মেয়র আতিকুল ইসলাম রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। তিনি মন্ত্রীকে বলেন, কুড়িল বিশ্বরোড উড়ালসড়কের নিচে বিশালাকারের জলাধার আছে। এখানে খিলক্ষেত ও নিকুঞ্জের বৃষ্টির পানি নামে। খোলা জায়গায় শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করে। কিন্তু হঠাৎ জলাধার ভরাট করা হচ্ছে। রেলমন্ত্রী এ বিষয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলেও মেয়র জানান।
পরে সাংবাদিকদের মেয়র বলেন, এই জলাধার ভরাট হলে আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট হবে। তা ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে ৩০০ ফুট সড়কের দুই পাশে যেখানে খাল খনন করা হচ্ছে, এর পাশেই জলাধার ভরাট করে হোটেল ও শপিং মল বানানো হলে, সেটা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে।
নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের অবৈধ সাইনবোর্ড নিয়ে তিনি বলেন, ‘করপোরেশনের অনুমতি ছাড়া এত বড় সাইনবোর্ড লাগানোর স্পর্ধা তারা কোথায় পায়? এটা আমি ভেঙে ফেলব। আর কাদের ম্যানেজ করে জলাধারের জায়গায় হোটেল নির্মাণের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে?’ মাঠপর্যায়ে এসে যাচাই না করে এভাবে বরাদ্দ দেওয়ার কারণেই নগর অপরিকল্পিত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইবাংলা/ ই/ ২৭ জানুয়ারি, ২০২২