বান্দরবানের গোয়ালিয়া খোলা এলাকায় প্রায় সব ধরনের সবজির চাষ হয়। পাহাড়ি জেলা হলেও বান্দরবান সদর উপজেলার ৩নং সদর ইউনিয়নের গোয়ালিয়া খোলা এলাকা সমতল। সমতল জেলার মতই এই গঠন প্রকৃতি হওয়ায় এখানে প্রায় প্রতি ইঞ্চি জমিতেই চাষাবাদ হয়।
গোয়ালিয়া খোলা এলাকায় বর্তমানে শিম চাষের মৌসুম চলছে। শীত মৌসুমের অন্যতম সবজি শিম। গোয়ালিয়া খোলা এর আশে পাশের এলাকায় যত দূর চোখ যায়, শিম আর শিমের ক্ষেতে চোখ জুড়িয়ে যায়। তবে সদর উপজলার গোয়ালিয়াখোলা এলাকা ছাড়াও ডলুপাড়া, কুহালং, গুংগুরু পাড়া, ক্যামলংপাড়া, ভরাখালী, রেইচা, রেইচা লম্বা ঘোনা, থলিপাড়া, রেইচা লম্বা রাস্তা, মুসলিম পাড়া, সুয়ালক, মাঝের পাড়া, ছাইঙ্গা এলাকায় ব্যাপক ভাবে শিমের আবাদ হয়। শিম চাষে খরচের তুলনায় ফলন ভালো ও লাভ ভালো হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা শিম চাষের প্রতি বেশি আগ্রহী।
বান্দরবান কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান জেলার ৭ উপজেলায় প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে শিমের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে বান্দরবান সদর উপজেলাতে ১০৮ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ করা হয়।
কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক একর জমিতে গড়ে ২৫ মণ বা ৮০০ কেজি’র মত শিমের ফলন হয়েছে এবার।
কৃষক দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিমের একটি ক্ষেত থেকে মৌসুমে অন্তত ৫ বার শিম উত্তোলন করা হয়। চলতি মৌসুমে কোনো কোনে শিমের ক্ষেতে তিন, কোনো ক্ষেতে চার বার ফলন তোলা হয়েছে। আরও দুই মাস শিমের ফলন থাকবে। এতে আরও অন্তত দু বার শিম উত্তোলন করা যাবে।
কৃষকরা বলেন, এই মৌসুমে অনুকূল আবহাওয়া থাকায় বান্দরবানে শিমের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরাও ভালো লাভ পাচ্ছেন।
সরেজমিন বান্দরবান সদর উপজেলার গোয়ালিয়াখোলা, রেইচা, রত্নাপুর পাড়া এলাকা গিয়ে কয়েকজন শিম চাষীর সাথে কথা হয়। তাঁরাব লেন, এবার শিমের ফলন ভালো হয়েছে এ এলাকায়। সেখানে কথা হয় শিমচাষী মো. রুবেল, মো. মুছা, আবদুর রাজ্জাক, হরিপদ দাশের সাথে। তাঁরা বলেন, তাঁরা চলতি সবজি মৌসুমে শিমের চাষ করেছেন। আবার কেউ কেউ পেঁপে, গোল আলু, ফেলেন শিম (প্লাসশিমবলে স্থানীয়ভাবে) চাষ করেছেন। তবে বেশির ভাগ জমিতেই শিম চাষ করেছেন। প্রথমে বাগান হতে শিমতুলে সেখানেই পাইকারী ৪০ টাকা কেজি দরে শিম বিক্রি করলেও বর্তমানে পাইকারী শিমের চাম অনেক কম।
ক্ষেতের পাশে পাইকারী প্রতি কেজি শিম বিক্রি হয়েছে ১৬ টাকা দরে। তবে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন সামনে (আগামীতে) শিমের দাম আবারও বাড়বে।
গোয়ালিয়াখোলা এলাকার রেইচা লম্বা ঘোনায় শিমের জমিতে কথা হয় মো. রুবেল নামে এক চাষী। তিনি বাগানে শিম গাছের পরিচর্যা করছেন। জমিতেই রুবেলের সাথে হয়। তিনি জানান, তিনি পুরো পুরি কৃষি কাজের উপরনির্ভর শীল। কৃষি কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়েই পুরো বছর সংসার চলে। তিনি বলেন, কৃষি কাজ হতে তাঁর ভালো আয় হয়। মোটামুটি সারা বছর সাচ্ছন্দ্যেই জীবন যাপন করেন। চলতি মৌসুমে তিনি তিন একার ৬০ শতক (৩৬০ শতক) জমিতে এবার শিমের চাষ করেছেন। এছাড়া ৭০ শতক জমিতে বেগুন ও প্লাস শিম চাষ করেছেন। এছাড়া ১০০টি হাইব্রিড রেড লেডি পেঁপে চাষ করেছেন।
কৃষক রুবেল জানান, প্রায় চার মাস শিমেরফলন উত্তোলনকরা যায়। প্রথমে প্রতি কেজি শিম পাইকারী ৪০ টাকা দরে বিক্রি করে ছিলেন। এরপর পর্যায়ক্রমে এতি কেজি শিম ৩৮, ৩৩, ২৮ টাকা দরে বিক্রি করলেও বর্তমানে মাত্র ১৬ টাকা দরে পাইকারী শিম বিক্রি করছেন। এক একর জমিতে কমপক্ষে ২৫ মণ শিমের ফলন হয়। এক একরে শিম চাষে খরচ হয় ৪০ হাজার টাকা, শিম বিক্রি করেন প্রায় ৮০ হাজার টাকার। ১০০টি রেড লেডি জাতের পেঁপের চাষ করেছেন। একটি পেঁপে গাছে খরচ ৩০০ টাকা, প্রতিটি পেঁপে গাছে ১২০ কেজির মত পেঁপের ফলন হয়। এছাড়া বেগুন, শসা ও প্লাস শিম বিক্রি করেও তাঁর ভালো আয় হয়। বছরে তাঁর খরচ প্রায় দুই লাখ টাকা, আর সবজি বিক্রি হতে তাঁর আয় চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা। সবজি চাষহতে তাঁর বছরে লাভ দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। এতে তাঁর পরিবার মোটা মুটি ভালো ভাবে চলতে পারছে। এতে তিনি খুব খুশি।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বান্দরবানে চাষ করা শিমের বেগুনি ও সাদা রঙের ফুল জাতীয় শিমের চাষ বেশি হয়। তবে সাদা ফুলেরও কিছু শিমের বাগান হয়। শিমের পুষ্টিগুণ উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন। ১০০ গ্রাম শিমে ৮৫ গ্রাম পানি ও ৪৮ কিলো ক্যালরি রয়েছে।
বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানান, সদর উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১০৮ হেক্টর জমিতে শিমের চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টও জমিতে অন্তত ১৫ টন শিমের ফলন হচ্ছে। তিনি বলেন, এবার বান্দরবানে আবহাওয়া ভালো থাকায় শিমের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ শিমচাষীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়ায় শিমের ফলন ভালো হয়েছে বলে কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা জানান।
ইবাংলা /এইচ/ ২৯ জানুয়ারি, ২০২২