বগুড়ার আদমদীঘিতে প্রায় অসম্ভব কে সম্ভব করেছেন শাহরিয়ার ইসলাম সজীব নামের এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তার এই অদম্যশক্তি অন্যদের জন্য হতে পারে একটি বিরল দৃষ্টান্ত। দিয়েছেন একটি মাল্টিমিডিয়ার দোকান। দোকানে বসে অন্য সাধারণের মতোই অবিরাম কাজ করে চলেছে সজীব।
আর এই মাল্টিমিডিয়ার দোকান থেকে উপার্জনের অর্থ দিয়ে চালাচ্ছে সংসার।তার কাজের দক্ষতা দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। চোখে দেখতে না পারলেও অনায়াসে করতে পারে কম্পিউটারের সব কাজ, চালাতে পারে স্মার্টফোনও।জানা যায়, উপজেলার সান্তাহার নতুন বাজার এলাকার সেনাবাহীনির অবসরপ্রাপ্ত রেজাউল করিমের বড় ছেলে শাহারিয়ার ইসলাম সজীব।
জন্মগতভাবেই সজীবের একটি চোখ ছিল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। অপর চোখ দিয়ে ১০ বছর পর্যন্ত দেখেছে পৃথিবীর আলো। লেখা পড়া করেছে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত। এরপরেই একদিন ক্রিকেট খেলতে গিয়ে বল লেগে নষ্ট হয় ভালো চোখটিও।চিরজীবনের জন্য পৃথিবীর আলো নিভে যায় তার। কিন্তু দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও থেমে যায়নি সে। অদম্য ইচ্ছে শক্তির জোরেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে সজীব।
সান্তাহার ডিজিটাল পোস্ট অফিস থেকে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। তার মাতাসছিলা বানু নানা বাড়ির অংশের জমি বিক্রি করে ২ লাখ টাকা দিয়ে নিয়েছেন মাল্টিমিডিয়ার দোকান। সে অন্য দশজনের মতো অনায়াসেই করছে কম্পিউটারে টাইপিং, বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন, দিচ্ছে ফ্লেক্সিলোড, চালাচ্ছে স্মার্ট
ফোনও।
সজিবের ব্যবহৃত স্মার্ট ফোন ও কম্পিউটার যান্ত্রিক কণ্ঠের মাধ্যমে তাকে তার কাজের বিস্তারিত বর্ণনা দিতে পারে। অনলাইনে চাকরির আবেদনসহ নানা কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছে দৃষ্টিহীন সজীব। পবিত্র কোরআন শরিফের ৫প্যাড়ার হাফেজও তিনি। তবে বয়স বাড়ছে শাহারিয়ার হোসেন সজীবের। তাই দুশ্চিন্তা বাড়ছে পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য।
সহায়সম্বলহীন পরিবারের ভবিষ্যৎ কী হবে? পার্শ্ববর্তী দোকানদার রকিসহ একাধিক দোকানদাররা বলেন, সজীব চোখে দেখতে না পেলেও অন্ধকারেই নিজের মেধা শক্তিতে বিভিন্ন পরিচিত জনের মোবাইল কল রিসিভ এবং কল দিতে পারে। কারো কারো কণ্ঠ একটু শুনেই ওই ব্যক্তির নাম বলে দিতে পারে।
এছাড়া সে কারো সহযোগিতা ছাড়াই রাস্তায় চলাফেরা করতে পারে। মসজিদে গিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজও আদায় করে সে। অন্ধত্ব বাধাকে তুচ্ছ করে তার এগিয়ে চলার এ উদাহরণ এলাকাবাসীর কাছে অনুকরণীয় এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। সজীবের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চোখ নষ্ট হওয়ার পর থেকেই আমি মোবাইল ব্যবহার করতে পারতাম। সেই ইচ্ছে শক্তির জোরেই কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে এই দোকান দিয়েছি।
সরকারি বা বেসরকারি অনুদান পেলে ভবিষ্যৎ জীবনে আমার এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে আরও বড় করতে চাই। সান্তাহার ডিজিটাল পোস্ট অফিসের ট্রেইনার মিজানুর রহমান বলেন, আমরা নানাভাবে বিভিন্ন প্রতিবন্ধীদের ভিন্ন ভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। এই পোস্ট অফিসে সজীবসহ আরও ২ থেকে ৩ হাজার লোকদের কম্পিউটার ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে।
এদের মধ্যে অনেক প্রতিবন্ধী ছিল। সজিব ছিল অত্যন্ত মেধাবী ছেলে।এজন্য তাকে প্রশিক্ষন দিতে আমাদের তেমন কোন সমস্যা হয়নি। প্রশিক্ষন নিয়ে সে কাজ করছে এজন্য তাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি।
ইবাংলা/ ই/ ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২