রাজধানীর মিরপুর পল্লবীতে ইভটিজিং, মারধর, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই এমনকি খুনের মতো অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে কিশোর গ্যাং। তাদের উৎপাত আর অপরাধ কর্মকাণ্ড দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। রাজধানীর পল্লবী এলাকার এমনই এক ত্রাস কিশোর গ্যাং মুসা-হারুন গ্রুপ ওরফে ভাই-ভাই গ্রুপ।
এই বাহিনীর সদস্যরা দলবেঁধে দাপিয়ে বেড়ায় সারা পল্লবী এলাকা। ওই গ্যাংয়ের লিডার মুসা-হারুন দুই ভাই। স্থানীয়দের কাছে এই বাহিনীর সদস্যরা ভাই-ভাই গ্রুপ নামে পরিচিত। পল্লবী বাউনিয়াবাঁধ এলাকার বাসিন্দা মুসা-হারুন। এলাকায় মুসা ওরফে গাঁজা মুসা ও হারুন ওরফে ইয়াবা হারুন নামে পরিচিত।
জানা গেছে, আন্ত:জেলা ডাকাত দলের লিডার হিসেবে চিহ্নিত পেশাদার অপরাধী, খুনসহ বহু মামলার আসামি, পল্লবী থানার তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী স্বপন ওরফে চোরা স্বপনের দুই ছেলে মুসা ও হারুন। স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত স্বপন ওরফে চোরা স্বপন কিশোর গ্যাং ভাই-ভাই গ্রুপের মদদ দাতা।
পল্লবীর বাউনিয়াবাঁধ, পলাশনগর, আর্দশনগর, কালশী এলাকায় মুসা-হারুন দুই ভাইয়ের রয়েছে বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং। এই গ্যাংয়ের সদস্যরা চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক পরিবহন, খুন, ধর্ষণ, হাঙ্গামা, বিভিন্ন দোকানে ফাও খাওয়া, মাদক সেবন, যৌন হয়রানিসহ নানা অপরাধে জড়িত। গ্যাংয়ের বেশিরভাগ সদস্যই বখে যাওয়া কিশোর ও তরুণ, যাদের অনেকেই স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারেনি। হ্যানো কোন অপরাধ নেই যা তারা করে না। বয়স দেখলে বুঝার কোনও উপায় নেই, এদের সংঘটিত অপরাধ কী ভয়ঙ্কর হতে পারে।
তাদের অত্যাচারের অতিষ্ঠ এলাকার সাধারণ মানুষ। এদের নির্যাতনের শিকার হলেও ভয়ে অনেকে প্রতিবাদ করতে সাহস করেন না। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতায় তাদের অপকর্ম চলমান থেকে ক্রমেই বেড়ে চলছে অপ্রতিরোধ্যভাবে।
স্থানীয় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্রয়ে মূলত নিম্নবিত্ত পরিবারের বখে যাওয়া সন্তানদের নিয়ে গড়ে উঠেছে এ সব গ্যাং। রয়েছে প্রভাবশালীদের বখে যাওয়া কিশোর সন্তানরাও।
ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রাথমিকভাবে বড় অপকর্ম করার সাহস থাকে না। কিন্তু প্রভাবশালী নেতারা যখন তাদের কাজকর্ম করার জন্য প্রশ্রয় দিয়ে থাকে তখন সে সব গ্যাংয়ের সদস্যরা ধীরে ধীরে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আর এ ভাবে গ্যাংগুলো মারাত্মক অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। গ্যাংয়ের সদস্যরা যে কোনো তুচ্ছ ঘটনায় চড়াও হচ্ছে যে কারো ওপর। অনেকের কাছে এরা এখন মূর্তিমান আতঙ্ক। এদের শাসন করতে গিয়ে এলাকার সম্মানিত মানুষও লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন।
পুলিশের নিজস্ব গোয়েন্দা শাখার তালিকায় রাজধানীতে রয়েছে ৭৮ কিশোর গ্যাং। সবচেয়ে বেশি কিশোর গ্যাং মিরপুর এলাকায় ২৩টি। পল্লবী থানা এলাকায় অন্যতম ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং মুসা-হারুন গ্রুপ ওরফে ভাই-ভাই গ্রুপ। এই গ্রুপের লিডার মুসা-হারুন। তাদের অন্যতম সহযোগীরা হচ্ছে- আসিফ, হোসেন, সোহরাব, শাওন, আরিফ, হারুন ওরফে কট্টর হারুন (সোর্স), রিপন (পলাশ নগর), আলী আকবর (পোড়া বস্তি), জুবরাজ (পোড়া বস্তি), সাগর ও হিরন ফারুকসহ প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন কিশোর।
মঙ্গলবার (৬ জুলাই) ইয়াবা বিক্রি অবস্থায় হাতেনাতে ভাই-ভাই গ্রুপের লিডার মুসাকে গ্রেফতার করে পল্লবী থানা পুলিশ। থানায় মামলা নম্বর-১৫। বর্তমানে গাঁজা মুসা মাদক মামলায় শ্রীঘরে আছেন। কিন্তু ভাই-ভাই বাহিনীর আরেক লিডার ইয়াবা হারুন ও তাদের মদদদাতা বা গডফাদার স্বপন ওরফে চোরা স্বপন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও অপকর্ম করে যাচ্ছেন।
জানা যায়, ২০১৯ সালে ধর্ষণে সহায়তা ও ভিডিও ধারণ করার জন্য এক পোশাক কারখানার শ্রমিক হারুন-মুসাসহ কয়েকজনকে আসামি করে পল্লবী থানায় মামলা করেন। মামলা নম্বর- ৮/৬৯। এই মামলায় মুসা পুলিশের কাছে গ্রেফতার হয়। প্রায় ৪ মাস পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন।
এছাড়াও ২০১৫ সালে এক নারীকে শীলতাহানী করার অভিযোগে হারুন-মুসাসহ কয়েকজনকে আসামি করে পল্লবী থানায় মামলা হয়। মামলা নম্বর- ৮০।
আরও জানা যায়, ২০১৪ সালে মুসা-হারুন গ্রুপ ছালেহা নামের এক মহিলাকে তার বাসায় ঘুমন্ত অবস্থায় কুপিয়ে জখম করে। ওই বাসায় থাকা স্বর্ণ, টাকা-পয়সা সহ বিভিন্ন জিনিস লুটপাট করে। এই ঘটনায় মুসা-হারুনসহ কয়েকজনকে আসামি করে পল্লবী থানায় মামলা হয়। মামলা নম্বর-১৬/৪০৯।
স্থানীয় সূত্র জানায়, করোনাকালেও কিশোর গ্যাং ভাই ভাই গ্রুপের সদস্যরা মারামারি, মাদক সেবনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে যাচ্ছে। তাদের এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ফলে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসিদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, পল্লবীতে কোনো কিশোর গ্যাং থাকবে না। গ্যাং কালচার দমনে অভিযান চলমান। পল্লবী এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সন্ধ্যান পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ই-বাংলা/ আইএফ/ ১৫ জুলাই, ২০২১