অধিগ্রহণ করা জমিতে থাকা অবকাঠামো ও গাছপালার নিলাম মূল্যের ১০ শতাংশ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। সড়ক বিভাগের দেয়া এমন শর্তের কারণে আটকে আছে শরীয়তপুর-নাওডোবা পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক ও শরীয়তপুর-ইব্রাহিমপুর সড়কের উন্নয়ন কাজ।
প্রকল্পের মেয়াদ এক দফা বাড়ানো হলেও কাটেনি জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা। এই অতি গুরুত্বপূর্ণ সডক দুটি নির্মাণ ছিল শরীয়তপুর বাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি।
ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত আইনে এ ধরনের শর্তের কথা উল্লেখ না থাকায়, সড়ক বিভাগ ও শরীয়তপুর জেলা প্রশাসনের মধ্যে চলছে চিঠি চালাচালি। বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় বাড়ছে জেলা বাসীর ভোগান্তি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ভূঁইয়া রেদওয়ানুর রহমান বলেন, প্রাক্কলন মূল্য থেকে ১০ শতাংশ কাটার বিষয়টি ভূমি অধিগ্রহণ আইনে না থাকলেও, আমাদের প্র্যাকটিসে আছে। মন্ত্রণালয়ের অর্ডারে এখন ডিসি অফিস যে ব্যবস্থা নেবে সেটাই হবে।
তিনি জানান, সড়ক বিভাগ থেকে প্রকল্প দুটির সব ধরনের কাজ শেষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে শরীয়তপুর-ইব্রাহীমপুরের আলুবাজার ফেরিঘাট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ৪টি টেন্ডার করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। তবে শরীয়তপুর-জাজিরা-নাওডোবা সড়কের একটি টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন থাকলেও, অধিগ্রহণ জটিলতায় কাজের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর-ইব্রাহিমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন এবং শরীয়তপুর-জাজিরা-নাওডোবা (পদ্মা সেতু সংযোগ) সড়ক উন্নয়ন নামে ৪ লেন সড়কে উন্নীতকরণের ২টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
এর মধ্যে ৮৫৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের শরীয়তপুর-ইব্রাহিমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ১২ মার্চ একনেকে অনুমোদন হয়। এ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
অপরদিকে শরীয়তপুর-জাজিরা-নাওডোবা (পদ্মা সেতু সংযোগ) সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০২০ সালের ১৮ ফেরুয়ারি একনেকে অনুমোদন পায়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন ২০২২ পর্যন্ত। এর মধ্যে সড়ক বিভাগ থেকে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাাব পাঠানো হয়েছে।
সড়ক বিভাগের উপসচিব অপূর্ব কুমার মালের সই করা চিঠিতে শরীয়তপুর-ইব্রাহিমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের অধিগ্রহণ করা জমির জন্য ৯৩ কোটি ১ লাখ ৯৫ হাজার ৫৬৯ টাকা প্রাক্কলন শর্ত সাপেক্ষে দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে চিঠিতে জমিতে থাকা অবকাঠামো ও গাছপালার নিলাম মূল্য হিসেবে ১০ শতাংশ হারে টাকা কেটে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে।
এর জবাবে জেলা প্রশাসক মো: পারভেজ হাসানের চিঠিতে বলা হয়, স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন ২০১৭ অনুযায়ী নিলাম মূল্যের ১০ শতাংশ কাটার বিষয় উল্লেখ নেই। শর্তটি বাস্তবায়ন হলে জনরোষ সৃষ্টি হতে পারে।
এ চিঠি পাওয়ার পরও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় বিষয়টি সমাধান না করে, শরীয়তপুর-জাজিরা-নাওডোবা (পদ্মা সেতু সংযোগ) সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ দিতে একই শর্ত আরোপ করে ৯ ফেরুয়ারি আরও একটি চিঠি দেয়।
চিঠিতে সড়কটির উন্নয়ন প্রকল্পের অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ২১ ক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয়েছে। সেখানেও ১০ শতাংশ হারে নিলাম মূল্য কেটে রাখার কথা বলা হয়। বিষয়টি নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকদের মধ্যেও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
জাজিরা উপজেলা সেনেরচর এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম অধিগ্রহণকৃত জমির বিষয়ে নোটিশ পেয়েছেন। তিনি বলেন, সরকার আমার যেই জমি রাস্তার জন্য নিয়েছে, তার চেক নিতে আজ ডিসি অফিসে এসেছিলাম। এসে শুনি সড়ক বিভাগ নাকি চিঠি দিয়েছে আমার জমির দামের ১০ শতাংশ টাকা কেটে রাখবে। আমি এই টাকা দিতে চাই না।
নওডোবা এলাকার ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, বাপ দাদার সম্পত্তি সরকারকে দিয়ে দিয়েছি। তাছাড়া তারা জমি অধিগ্রহণের সময় আমাদের বলেনি যে ১০ শতাংশ টাকা কাটে রাখবে। তাহলে এখন কেনো কম টাকা নেবো ? আমার পুরো টাকাটাই চাই। তাই এখন চেক না নিয়েই চলে যাচ্ছি।
শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসমাউল হুসনা লিজা বলেন, সড়ক বিভাগ থেকে আমরা যে চিঠিটা পেয়েছি, আমাদের ভূমি অধিগ্রহণ আইন সেটা পারমিট করে না। যেহেতু ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াটি আইনের মাধ্যমেই চলে, সেহেতু আইনের বাইরে জেলা প্রশাসন থেকে কিছু করার সুযোগ নেই।’
‘বিষয়টি জানিয়ে আমরা সড়ক ও জনপদ বিভাগের সচিব স্যারকে চিঠি দিয়েছি। যেহেতু চিঠিতে ১০ শতাংশ কাটার শর্ত উল্লেখ করা আছে, তাই এটা নিয়ে সিদ্ধান্তের বিষয় আছে। এ জন্য একটু বিলম্ব হচ্ছে, বলেন তিনি।
ইবাংলা/ ই/ ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২