ইউক্রেনে নিহত বরগুনার ইঞ্জিনিয়ারের লাশ পেতে আকুতি পরিবারের

গোলাম কিবরিয়া, বরগুনা

বাংলাদেশি এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে ইউক্রেনে রকেট হামলায় নিহত ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফের গ্রামে চলছে শোকের মাতন। নেমে এসেছেন শোকের ছায়া। তার লাশ পেতে পরিবারের আকুতি, সরকারের কাছে এ দাবী রয়েছেন পরিবারের।নিহত হাদিসুর রহমান আরিফের বয়স হয়েছিলো

২৯ বছর। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নে। তিনি বাংলাদেশি ওই জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন বলে জানা যায়। কদমতলা বাজারসংলগ্ন চেয়ারম্যান বাড়ির বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক (অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক) ও আমেনা বেগম দম্পতির বড় ছেলে হাদিসুর। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা-বাবা। ছেলের লাশ দেশে আনার জন্য সরকারের আকুতি জানিয়েছেন।

গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় ভোর ৫ টা ১০ মিনিটে ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের এ হামলা হয়। নিহত হাদিসুর জাহাজের সামনে বাইরে অবস্থান করায় রকেট হামলায় তিনি নিহত হন।

বাংলাদেশি এ জাহাজটিতে হামলার খবর গণমাধ্যমকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে নিশ্চিত করেন জাহাজটিতে থাকা একজন নাবিক। তিনি বলেন, ইউক্রেনের সময় ৫টা ১০ মিনিটের দিকে আমাদের জাহাজে বিমান হামলা হয়েছে। আগুন নেভানোর চেষ্টা করছি। আরেক নাবিক লিখেছেন বোমা পড়ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত মেধাবী ছিরেন হাদিস। এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ পাওয়া আরিফ চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমির ৪৭তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন,লেখাপড়া শেষ করে তিনি এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি নেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তার নিহত হবার খবর শুনে গ্রামের মানুষ বাড়িতে ভরে গেছেন। তারা এসে বাকরুদ্ধ বাবা,মাসহ পরিবারকে শান্তনা দিচ্ছেন। ইউক্রেনে জাহাজটি আটকা পরার পর থেকেই তাদের পরিবারের সকলের দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে দিন কাটছিলেন। নানা শঙ্কার মধ্যে ছিলেন তারা। তাদের সেই শঙ্কাই সত্যি হলো।

সন্তানের লাশ ফেরা নিয়ে এখন আশঙ্কায় রয়েছেন তারা।এমভি বাংলার সমৃদ্ধি এ জাহাজটিতে পাঁচ বছর যাবৎ চাকরি করছিলেন আরিফ। এ জাহাজে হাদিসুর রহমান আরিফসহ বাংলাদেশের ২৯ জন নাবিক ছিলেন। বাকিরা সুস্থ আছেন বলে জানা যায় ।

নিহত হাদিসের ছোট ভাই তারেক বলেন, আমরা জাহাজে থাকা আরিফের সহকর্মীদের কাছেই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছি। এরপর থেকেই আমার বাবা বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন আর মা অজ্ঞান হয়ে গেছেন ।

তিনি আরো বলেন, নিহত হবার দিনই বুধবার সকালেও ভাই আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেই সময়ে ফোনে ভাই বলেন, এ ভাই আমাদের আর ভাঙ্গা ঘরে থাকতে হবে না। বাড়িতে এসেই যেভাবে হোক নুতন ঘরের কাজ শুরু করবো। ফোনালাপে ইউক্রেনে বোমা, গুলির শব্দ ও যুদ্ধের অবস্থা নিয়েও কথা হয়। ভীতিকর পরিস্থিতি নিয়ে আরিফ শঙ্কিত ছিলেন বলেও জানান তিনি।

তারেক কান্না জড়িত কন্ঠে আরো বলেন, আমরা এক নজরের জন্য হলেও আমার ভাইয়ের লাশটা শুধু দেখতে চাই। ভাইকে হারিয়ে আমাদের পরিবারটি পথে বসে গেলেন।

এ বিষয়ে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুহৃদ সালেহীন ইবাংলাকে বলেন, আমরা জেলা প্রসাশন প্রবাসী কল্যান মন্ত্রনালয়ের সহযোগিতার মাধ্যমে নিহত হাদিসুর রহমান আরিফের লাশটি দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো।

প্রসঙ্গত যে , সিরামিকের কাঁচামাল ‘ক্লে’ পরিবহনের জন্য জাহাজটি তুরস্ক থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় পৌঁছায়। তবে যুদ্ধাবস্থা এড়াতে জাহাজটিকে সেখানে পৌঁছানোর পরই পণ্য বোঝাই না করে দ্রুত ফেরত আসার জন্য নির্দেশনা দেন শিপিং করপোরেশনের কর্মকর্তারা।

শেষ মুহূর্তে বন্দরের পাইলট না পাওয়ায় ইউক্রেনের জলসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশী এ জাহাজ টি।

ইবাংলা/আরকে/০৩/মার্চ/২০২২

আকুতি পরিবারইউক্রেনে নিহতইঞ্জিনিয়ারের লাশবরগুনা
Comments (0)
Add Comment