চলছে শাবান মাস আর কদিন পরই মুসলিম উম্মাহর জন্য সবচেছে ফজিলতপূর্ন মাস রমজানের আগমন হতে চলেছে। আর এই মাসকে কেন্দ্র করে মুমিনদের দায়িত্ব অনেক। রমজান মাসকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে এর পূর্ব প্রস্তুতি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। রমজান মাসে সিয়াম পালন ও অন্যান্য ইবাদত বন্দেগীর চেয়ে এই মাসকে নানা রকম পানাহার, মিষ্টি ও হালুয়া-রুটি বিতরণ, রাতজাগা ও স্যাটেলাইট চ্যানেল উপভোগ করার মৌসুম বানিয়ে ফেলেছে।
এর জন্য তারা রমজান মাসের প্রস্তুতি বলতে আগে থেকে খাদ্যদ্রব্য কেনায় ব্যস্ত হয়ে ওঠে এই আশংকায় যে- এসময় খাদ্যদ্রব্য মুল্য বৃদ্ধি পেতে পারে। আর ব্যবসায়িরা খাদ্য মজুত করতে শুরু করে লাভের আশায়। অথচ রমজান মাসের তাৎপর্য সম্পর্কে সত্যিকার অর্থেই তারা অজ্ঞ। তারা এ মাসকে ইবাদত ও তাকওয়ার পরিবর্তে উদরপূর্তি ও চক্ষুবিলাসের মৌসুমে পরিণত করে।
রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে কি কি করনীয় সে বিষয়ে জেনে নিন।
একনিষ্ঠভাবে তওবা করা : তওবা করা সব সময় ওয়াজিব। তবে ব্যক্তি যেহেতু এক মহান মাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তাই অনতিবিলম্বে নিজের মাঝে ও স্বীয় রবের মাঝে যে গুনাহগুলো রয়েছে এবং নিজের মাঝে ও অন্য মানুষের মাঝে অধিকার ক্ষুণ্ণের যে বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলো থেকে দ্রুত তওবা করে নেওয়া উচিত। যাতে করে সে পূত-পবিত্র মন ও প্রশান্ত হৃদয় নিয়ে এ মুবারক মাসে প্রবেশ করতে পারে এবং আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতে মশগুল হতে পারে।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আর হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্র কাছে তওবা কর; যাতে করে সফলকাম হতে পার। (সুরা আন-নুর, আয়াত : ৩১)
দোয়া করা : কিছু কিছু সালফে সালেহিন হতে বর্ণিত আছে যে, তারা ৬ মাস আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন— যেন আল্লাহ তাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছান। রমজানের পর পাঁচ মাস দোয়া করতেন— যেন আল্লাহ তাদের আমলগুলো কবুল করে নেন। তাই একজন মুসলিম তার রবের কাছে বিনয়াবনতভাবে দোয়া করবে— যেন আল্লাহ তাআলা তাকে শারীরিকভাবে সুস্থ রেখে ও উত্তম দ্বীনদারির সাথে রমজান পর্যন্ত হায়াত দেন। সে আরো দোয়া করবে— আল্লাহ যেন তাকে নেক আমলের ক্ষেত্রে সাহায্য করেন। আরও দোয়া করবে আল্লাহ যেন তার আমলগুলো কবুল করে নেন।
এই মাসের আগমনে খুশি হওয়া : রমজান মাস পাওয়াটা একজন মুসলিমের প্রতি আল্লাহ তাআলার বিশেষ নেয়ামত। যেহেতু রমজান কল্যাণের মৌসুম। যে সময় জান্নাতের দরজাগুলো উন্মুক্ত রাখা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ রাখা হয়। রমজান হচ্ছে- কোরআনের মাস, সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য রচনাকারী জিহাদি অভিযানগুলোর মাস। রোজার মাসয়ালা-মাসায়েল জানা ও রমজানের ফজিলত অবগত হওয়া
আল্লাহ তাআলা বলেন, “বলুন, ‘এটি আল্লাহ্র অনুগ্রহে ও তার দয়ায়। সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হোক ।এটি তারা যা সঞ্চয় করে রাখে তা থেকে উত্তম।” (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৫৮)
কোনো ওয়াজিব রোজা নিজ দায়িত্বে থেকে থাকলে তা হতে মুক্ত হওয়া : আবু সালামাহ্ হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন আমি আয়েশা (রা.)কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন- ‘আমার ওপর বিগত রমজানের রোজা বাকি থাকলে শাবান মাসে ছাড়া আমি তা আদায় করতে পারতাম না।’ ( বুখারি, হাদিস : ১৮৪৯; মুসলিম, হাদিস : ১১৪৬)
যে কাজগুলো রমজান মাসে একজন মুসলমানের ইবাদত বন্দেগীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে সেগুলো দ্রুত সমাপ্ত করার চেষ্টা করা।
স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসে রমজানের মাসয়ালা-মাসায়েল আলোচনা করা এবং ছোটদেরও রোজা পালনে উদ্বুদ্ধ করা।
যে বইগুলো ঘরে পড়া যায় এমন কিছু বই সংগ্রহ করা অথবা মসজিদের ইমামকে হাদিয়া দেওয়া— যেন তিনি মানুষকে পড়ে শুনাতে পারেন।
রমজানের রোজার প্রস্তুতি স্বরূপ শাবান মাসে কিছু রোজা রাখা। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) এমনভাবে সিয়াম পালন করতেন যে, আমরা বলতাম–তিনি আর সিয়াম ভঙ্গ করবেন না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম কে রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসের গোটা অংশ রোজা পালন করতে দেখিনি এবং শাবান ছাড়া অন্য কোন মাসে অধিক সিয়াম পালন করতে দেখিনি।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৬৮; মুসলিম, হাদিস : ১১৫৬)
উসামাহ ইবনে যায়েদ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, “আমি বললাম- হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনাকে শাবান মাসের মত অন্য কোন মাসে এত রোজা পালন করতে দেখিনি। তখন তিনি বললেন, ‘এটি রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী মাস। এ মাসের ব্যাপারে মানুষ গাফেল। অথচ এ মাসে বান্দাদের আমল রাব্বুল আলামিনের কাছে উত্তোলন করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে, রোজা পালনরত অবস্থায় আমার আমল উত্তোলন করা হোক।” (নাসায়ি, হাদিস : ২৩৫৭
কোরআন তেলাওয়াত করা : সালামাহ ইবনে কুহাইল বলেছেন, ‘শাবান মাসকে তেলাওয়াতকারীদের মাস বলা হত।’ শাবান মাস শুরু হলে আমর ইবনে কায়েস তার দোকান বন্ধ রাখতেন এবং কোরআন তিলাওয়াতের জন্য অবসর নিতেন।
আবু বকর আল-বালখি বলেছেন, ‘রজব মাস হলো- বীজ বপনের মাস। শাবান মাস হলো-ক্ষেতে সেচ প্রদানের মাস এবং রমজান মাস হলো- ফসল তোলার মাস।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘রজব মাসের উদাহরণ হলো- বাতাসের ন্যায়, শাবান মাসের উদাহরণ হলো- মেঘের মতো, রমজান মাসের উদাহরণ হলো বৃষ্টির মতো। তাই যে ব্যক্তি রজব মাসে বীজ বপন করল না, শাবান মাসে সেচ দিলো না, সে কীভাবে রমজান মাসে ফসল তুলতে চাইতে পারে?’
ইবাংলা/ এশো/ ১৪ মার্চ, ২০২২