কুষ্টিয়ায় প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তার পাশে সন্তানসহ এক নারী ও এক যুবককে গুলি করে হত্যার করেছে পুলিশের এক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই)।
রোববার (১৩ জুন) বেলা ১১টার দিকে শহরের পিটিআই সড়কের কাস্টমস মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত এএসআই সৌমেন রায়কে সড়কের পাশের এক তিনতলা ভবন থেকে আটক করে পুলিশ। তার জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে নিহতরা হলেন: আসমা খাতুন ও তার ৬ বছর বয়সী ছেলে রবিন এবং শাকিল নামের এক যুবক। আসমার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর নাতুরিয়া গ্রামে। সন্তানকে নিয়ে তিনি কুষ্টিয়া শহরেই বাবার বাড়িতে থাকতেন। শাকিল কুষ্টিয়ায় বিকাশের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের কাস্টমস মোড়ে তিনতলা ভবনের সামনে আসমা তার সন্তানকে নিয়ে শাকিল নামে এক যুবকের সাথে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আচমকাই সেখানে উপস্থিত হয়ে সৌমেন প্রথমে আসমার মাথায় গুলি করেন। এরপর আসমার পাশে থাকা শাকিলের মাথায়ও খুব কাছ থেকে গুলি করেন তিনি। এসময় রবিন ভয় পেয়ে পালাতে গেলে তাকেও গুলি করেন সৌমেন।
এসময় আশপাশের লোকজন ছুটে এসে গুলি চালানো ব্যক্তিকে ধরতে গেলে তিনি দৌড়ে রাস্তার পাশের একটি তিনতলা ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েন। লোকজন জড়ো হয়ে ভবনটি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আসমাকে মৃত ঘোষণা করেন। জরুরী ভিত্তিতে অস্ত্রোপচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হলেও অস্ত্রোপচার কক্ষেই গুলিবিদ্ধ শাকিল ও শিশু রবিনের মৃত্যু হয়।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এসপি) মোস্তাফিজুর রহমান এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। অভিযুক্ত এএসআই সৌমেন রায় খুলনার ফুলতলা থানায় কর্মরত ছিলেন বলেও জানান তিনি। তার বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার আসপা গ্রামে।
পুলিশের ধারণা, এএসআই সৌমেন সরকারী (সার্ভিস) পিস্তল দিয়েই তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। পিস্তলটি জব্দ করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে আসমার মা হাসিনা খাতুন জানান, সকালে সৌমেন স্ত্রী-সন্তানকে খুলনায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। পরে এ হত্যাকাণ্ডের কথা জানতে পারেন তারা। শাকিল আসমার সঙ্গে নিয়মিত ফোনে কথা বলতেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
নিহত আসমার ভাই হাসান জানায়, পাঁচ বছর আগে এএসআই সৌমেনের সঙ্গে তার বোনের বিয়ে হয়। তার বোনের আগেও একটি বিয়ে হয়েছিল।
এদিকে বিকেলেই নিহতদের লাশের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে লাশগুলোর ময়নাতদন্ত করার পর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার জানান, তিনজনকেই দুটি করে গুলি করা হয়েছে খুব কাছ থেকে। এতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।
শাকিলের মাথার বাম পাশে গুলি করা হয়েছে। এ ছাড়া তার ডান পায়ের ঊরুতেও রয়েছে গুলির চিহ্ন। আসমার মাথা ও গলায় চালানো হয়েছে গুলি। রবিনের মাথায় ও পিঠে গুলির চিহ্ন রয়েছে। তবে কারও শরীরেই গুলি পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, গুলিগুলো শরীর ভেদ করে বেরিয়ে গেছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হত্যার ঘটনায় আটক এএসআই সৌমেন রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় খুলনা রেঞ্জ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুলনা রেঞ্জের দুজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ কুষ্টিয়ার এক পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন তদন্ত কমিটিতে।
খুলনার পুলিশ সুপার মাহবুব রহমান বলেন, ঘটনা জানার পরপরই সৌমেন রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সৌমেন রায় কনস্টেবল থেকে এএসআই পদে উন্নীত হন ২০১৫ সালে। এরপর কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানায় যোগ দেন ২০১৬ সালে। জেলার অন্যান্য থানায়ও কর্মরত ছিলেন তিনি। কুষ্টিয়ায় সবশেষ মিরপুর থানার হালসা ক্যাম্পে কর্মরত ছিলেন সৌমেন। এরপর বাগেরহাট জেলা এবং সর্বশেষ খুলনার ফুলতলা থানায় নিযুক্ত হন তিনি।
শাকিলের বাবা মেজবার রহমান বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় সৌমেন রায়কে আসামি করে মামলা করেছেন। কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম জানিয়েছেন,মামলা রেকর্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। <<