জনগণের ভাগ্য ফেরাতে বাবার মতো জীবন উৎসর্গ করব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে প্রয়োজনে বাবার মতো জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কক্সবাজারবাসী এবং সমগ্র বাংলাদেশের জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে প্রয়োজনে আমি আমার বাবার মতো জীবন উৎসর্গ করব।’

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁরা সব বাধা অতিক্রম করে দেশবাসীর জন্য একটি সুন্দর ও উন্নত জীবনের ব্যবস্থা করে যাবেন। তিনি গণভবন থেকে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত ‘উন্নয়নের নতুন জোয়ার : বদলে যাও কক্সবাজার’ কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে এ কথা বলেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের আনুষ্ঠানিক উদযাপনের অংশ হিসেবে কক্সবাজারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ তার সবচেয়ে কাছের ও প্রিয়জন। কারণ তিনি ১৯৮১ সালে নির্বাসন থেকে দেশে ফেরার পর বৃষ্টি ও ঝড় উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষকে স্বাগত জানাতে দেখেছিলেন।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ আমার সবচেয়ে কাছের এবং তারাই আমার পরিবার। আমি আপনাদের মধ্যে আমার হারিয়ে যাওয়া বাবা, মা ও ভাইয়ের ভালোবাসা ও স্নেহ খুঁজে পেয়েছি।” বাংলাদেশের জনগণের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে তিনি এক মুহূর্তের জন্যও দ্বিধা করেন না। আমি শেষ নিশ্বাস থাকা পর্যন্ত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন এবং তাদের উন্নয়নের জন্য কাজ করব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের অক্লান্ত পরিশ্রমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার ফলে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের মানুষ মাথা উঁচু করে ঘুরে বেড়াবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার ওপর আপনাদের আস্থা ও বিশ্বাস না থাকলে এ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হতো না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস হচ্ছে তাদের কল্যাণে কাজ করার জন্য সরকারের চালিকাশক্তি। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের দিক থেকে এমন অবস্থানে পৌঁছেছে যে, এ দেশকে কেউ পিছনে ঠেলে দিতে পারবে না। “এখন, আমরা একটি উন্নয়নশীল জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি এবং তা বজায় রেখে আমাদেরকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে হবে।”

বাংলাদেশ ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে স্বীকৃতি লাভের জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

কক্সবাজার থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও যুব প্রতিমন্ত্রী মো. এবং ক্রীড়া মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল নিজ নিজ খাতের সার্বিক উন্নয়নে গৃহীত ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন কক্সবাজার প্রান্তে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন শরণার্থীদের জন্য গৃহীত আবাসন প্রকল্পের কিছু সুবিধাভোগীর সঙ্গেও মতবিনিময় করেন।
তারা উন্নয়নশীল দেশ গড়ার স্থপতি শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান এবং তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন।

অনুষ্ঠানে “জোরছে চলো বাংলাদেশ” শিরোনামের একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। প্রধানমন্ত্রীকে উৎসর্গ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি গান “ও জোনাকি, কি সুখে ঐ ডানা দুটি মিলেছো” বাজানো হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
কক্সবাজারে মন্ত্রীবর্গ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাসহ সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

রবার্ট ফ্রস্টের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎকারের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার বাবা বাংলাদেশের মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফ্রস্ট বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তার দুর্বলতা কী, উত্তরে জাতির পিতা বলেছিলেন, তিনি বাংলাদেশের মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন।

তিনি আরো বলেন, “বঙ্গবন্ধু যাদেরকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন সেই দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তন করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তার পাওয়ার কিছু নেই বরং দেশবাসীর মুখে হাসি ফোটানোই তার জন্য সবচেয়ে বেশী মূল্যবান।

তার সরকার বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছে, প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, এখন তার অগ্রাধিকার হচ্ছে প্রতিটি ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে বিদ্যুৎ দেয়া। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার পিতা বঙ্গবন্ধু তার সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন মানুষের কল্যাণে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাকে তার জীবনে অনেক বাধা এবং আক্রমণের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জনগণের উন্নতির জন্য কিছু করার কাজে তাকে কিছু কিছুই বাধা দিতে পারে না।

কক্সবাজারে বাস্তবায়িত বিশাল উন্নয়ন কাজের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলোর মধ্যে রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিমানবন্দর, মেরিন ড্রাইভ, সড়ক ও রেল অবকাঠামো নির্মাণ। ক্রীড়া কমপ্লেক্স ও একটি ফুটবল একাডেমি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে এবং প্রতিটি এলাকাকে উন্নয়নের আওতায় আনা হবে।

ইবাংলা/ জেএন/ ১ এপ্রিল, ২০২২

উৎসর্গ করবজীবন
Comments (0)
Add Comment