ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকিনের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বৈঠক শুরু হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ এই দুদেশের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির দিনে এ বৈঠকে র্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ বিনিয়োগ ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
শনিবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগের আগে ড. মোমেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বৈঠকে আমরা আগামী ৫০ বছরে আমাদের (বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র) দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কীভাবে আরও জোরদার হবে, সে ব্যাপারে আলোচনা করব।’
একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে অভ্যুদয়ের পর, ওয়াশিংটনের সঙ্গে অর্ধশত বছরে একটি ভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষপটে বাংলাদেশের সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ পুনর্বিন্যাস হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর দু’দেশের মধ্যে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ হয়েছে।
গত ১০ ডিসেম্বর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও এলিট ফোর্সটির কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর, এই প্রথমবারের মতো ড. মোমেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। ব্যাপক দ্বিপাক্ষিক ইস্যুর পাশাপাশি তিনি এই নিষেধাজ্ঞাটি পুনঃবিবেচনা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনুরোধ জানাবেন।
ড. মোমেন বলেন, ‘আমরা এই (নিষেধাজ্ঞা ) ইস্যু উত্থাপন করব।’ যেহেতু র্যাব একটি দক্ষ, কার্যকর এবং দুর্নীতিমুক্ত বাহিনী, তাই তিনি আশা করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া আসবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিরাজ করছে এবং গত এক দশকের বেশি সময় ধরে দেশ ব্যাপক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। কিন্তু কখনো কখনো আমাদের সফল ঘটনাগুলো বহির্বিশ্বে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। আমরা আমাদের সাফল্যের কথা বৈঠকে তুলে ধরব।’
ড. মোমেন বলেন, তিনি আইনের শাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মামলায় দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি রাশেদ চৌধুরীকে হস্তান্তরের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করবেন। রাশেদ চৌধুরী এখন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় দেশ এবং এ জন্য ঢাকা-যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনতে কম আগ্রহী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকা গত অংশীদারিত্ব আলোচনাকালে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেওয়া জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট (জিএসওএমআইএ)’র খসড়াটি পরীক্ষা করে দেখছে।
ওয়াশিংটন চায় ঢাকা যেন দুটি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এ দুটি হলো- জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট (জিএসওএমআইএ) এবং অ্যাকুইজিশন ক্রস সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট (এসিএসএ), যেগুলো দুদেশের মধ্যে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আরও বেশি কিছু করার প্রবেশদ্বার।
ঢাকা ওয়াশিংটনের সঙ্গে বহুমুখী বাণিজ্য বিস্তৃত করতে চায় উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, খাদ্য নিরাপত্তা, সমুদ্র অর্থনীতি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও প্রযুক্তি হস্তান্তরে সম্পৃক্ত থাকতে চায়- যা জনকল্যাণের সঙ্গে সম্পর্কিত।
বাংলাদেশ তার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আমন্ত্রণ জানাবে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি এ বৈঠককালে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের ব্যাপারেও আলোচনা করবেন।
ইবাংলা/ টিএইচ কে/ ৪ এপ্রিল, ২০২২