গোপনে বিয়ে, স্বামীর প্রতারণায় অঙ্কনের ‘আত্মহত্যা’

রিসাত রহমান, জবি প্রতিনিধি:

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইংরেজি বিভাগের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী অংকন বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) আইসিউতে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। রোববার (৮মে) রাত সাড়ে ১১ টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মেধাবী এই শিক্ষার্থী।

জানা যায়, হার্ট অ্যাটাক ও পরে ব্রেন স্ট্রোক করেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ কেন এমন হলো সেই বিষয়ে ওই সময় কিছুই জানা যায়নি। তবে গতকাল রাতে তার অকাল মৃত্যুর পরে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। আত্মহত্যা নাকি হত্যা? এই প্রশ্ন এখন সামনে এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রেমঘটিত কারণে বিষপান করেছিল অংকন বিশ্বাস। তিনি জবির ইংরেজি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম অঙ্কন ভালো বিতার্কিক ছিলেন।

বিতর্কের সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সভাপতি ও আইন বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাকিলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। কয়েক মাস ধরে এ সম্পর্কে বিপত্তি দেখা দেয়। শাকিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

অঙ্কনকে এড়িয়ে চলেন এবং অন্য ধর্মের হওয়ায় বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। গত ২৪ এপ্রিল ‘বিষপান’ করে প্রেমিকের বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় রেখে পালিয়ে যান ওই শিক্ষার্থীর প্রেমিক শাকিল আহমেদ।

এই বিষয়ে ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবদুল মুকিত চৌধুরি সানি জানায়, ২৪ এপ্রিল দুপুর দেড়টার দিকে আজগর আলী হাসপাতাল থেকে অঙ্কন অসুস্থ বলে একটা ফোন আসে। পরে সেখানে গিয়ে অঙ্কনকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখতে পাই।

ডাক্তাররা তার শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় হাসপাতালে শাকিল ও তার ভাই হিমেলকে দেখতে পাই। শাকিল ভাই ও বন্ধুর পরিচয়ে ভর্তি করাতে চাইলে প্রথমে ভর্তি করায়নি কর্তৃপক্ষ। পরে স্বামী পরিচয়ে ভর্তি করান।

মুকিত আরও জানায়, শাকিল প্রথমে ঘটনা বলতে চাইছিলেন না। শাকিলের ভাষ্যমতে অংকনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল সে কিছু খেয়েছিল কি না, সে অস্বীকার করেছিল। ঘটনার প্রায় ১ঘন্টা পর আমায় খবর দিলে আমি হাসপাতালে ছুটে আসি এবং ডাক্তারদের সাথে কথা বলে জানতে পারি তারা কোন উৎস ধরতে পারছে না যে আসলে সে কি খেয়েছিল।

এক পর্যায়ে আমি তার বন্ধুকে দিয়ে অংকনের ব্যাগ থেকে বিষের বোতল সংগ্রহ করি, যেখানে খুবই অল্প পরিমাণ অবশিষ্ট ছিল। প্রথম থেকে তার অবস্থা গুরুতর ছিল। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১ মে আজগর আলী হাসপাতাল থেকে বিএসএমএমইউ এর আইসিউতে ট্রান্সফার করা হয়।

এদিকে, দেখা যায় কথিত প্রেমিক শাকিল কেবল প্রেমিকই নয় তার স্বামীও বটে! গত ২২ মার্চ তাঁরা ২ লক্ষ টাকা দেনমোহরে কোর্ট ম্যারিজ করেন।

এই বিষয়ে জানতে অঙ্কনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অঙ্কনের বাবা তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমি তো শুনছি কিন্তু জানিনা কি হয়েছে। আমার সামর্থ্য নেই কিছু করার। আমি অসুস্থ, পঙ্গু। ২৫ বছর ধরে সুগার। অঙ্কনের মা পাগলের মতো হয়ে গেছে। আমার আরেকটা মেয়ে আছে। আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার দিলাম।’

অন্যদিকে, অঙ্কনকে হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে পলাতক রয়েছেন তার প্রেমিক শাকিল। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল জানান, অংকনের পরিবার থেকে কেউ যদি কোন ধরনের আইনি সহায়তা চায় তাহলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।

এদিকে অকাল মৃত্যুতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক এবং ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু সাঈদ আল মামুন বলেন, এ ঘটনায় একটা পুলিশ ফাইল হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কোনো অভিযোগ দেওয়া হয় তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।

ইবাংলা/টিএইচকে/১০ মে, ২০২২

অঙ্কনেরআত্মহত্যা
Comments (0)
Add Comment