প্রতিবন্ধী তাজীন এখন সবার অনুপ্রেরণা

কুমিল্লা প্রতিনিধি

কুমিল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষাবিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাজীন রহমান। তার বাড়ি কুমিল্লা সেনানিবাস সংলগ্ন রাজেন্দ্রপুর এলাকায়। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তাজিন দ্বিতীয়। তিন মাস বয়সে হাত ও পায়ের অক্ষমতাকে কখনো এগিয়ে চলার জন্য প্রতিবন্ধক হতে দেননি তাজীন।

নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি ঘরের কোনায়।লেখাপড়ার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পেইজ পরিচালনা করেন তাজীন। পেইজটির নাম এসটি বিজনেস ক্লাব। এ পেইজটির প্রধান অ্যাডমিন হিসেবে কাজ করছেন তিনি। মাত্র দেড় বছর হলো পেইজটির।

কিন্তু এখন ৪৬ হাজারের অধিক সদস্য রয়েছে, যার মধ্যে ১০ হাজার উদ্যোক্তা সরাসরি তাদের পণ্যের প্রচার চালায় পেইজটি থেকে। নতুন উদ্যোক্তাদের দিকনির্দেশনা দেন। কীভাবে তাদের পণ্যের প্রচার করা যায়।

তাজীন বলেন, যখন আমার বয়স ৩ মাস তখন টাইফয়েড জ্বরে আমার বাম পা ও বাম হাতের কার্যক্ষমতা হারাই। আমার বাবা অনেক চিকিৎসা করিয়েছেন। কোন লাভ হয়নি। পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুরা আমাকে সর্বোচ্চ সাপোর্ট দিচ্ছে। এটা আমার জন্য খুব সুখের।

তাজীন জানান, তাকে তার পরিবারের সদস্যরা ও শিক্ষকরা সব সময় সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তাই তাকে থেমে থাকতে হয়নি। কেন এ উদ্যোগ- এমন প্রশ্নে তাজীন বলেন, ২০২০ সালে আমি অন্য একটি পেইজের অ্যাডমিন ছিলাম। তখন দেখতাম পণ্যের প্রসারে উদ্যোক্তাদের পেইজের অ্যাডমিনদের টাকা দিতে হয়।

পণ্য বিক্রির আগে বিজ্ঞাপনের জন্য অর্থ ব্যয় অনেক কষ্টের। তাই নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য আমি এ পেইজটি ওপেন করেছি।তাজীন জানান, প্রতি মাসে পেইজটি পরিচালনার জন্য ২ হাজার টাকা করে ব্যয় হয়। গত দেড় বছরে পেইজটিতে প্রায় ৪৭ হাজার সদস্য যুক্ত হয়েছেন। প্রতিদিনই সদস্য সংখ্যা বাড়ছে।

এখানে কোনো প্রতারণার সুযোগ নেই। নতুন উদ্যোক্তা যারা হবেন তাদের ব্যাপারে আগে খোঁজখবর নেয়া হয়। এভাবে পেইজটি পরিচালনার জন্য যে খরচ হয় তার ব্যয়ভার বহন করেন তাজীনের একজন বড় ভাই। তার নাম ইয়াছিন আলী। তিনি মালোশিয়া প্রবাসী।

কুমিল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষা বিজ্ঞানের প্রভাষক কাজী বেলায়েত উল্লাহ জুয়েল বলেন, মেয়েটা এত প্রতিবন্ধকতার পরও প্রতিদিন কলেজে আসছে। ক্লাসে মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করছে। এটা নিঃসন্দেহে অন্য শিক্ষার্থীদের জন্য উদাহরণ। শুধু লেখাপড়াতেই নয়, সোশ্যাল মিডিয়াতে পেজ খুলে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, খোঁজখবর নিয়ে যেটুকু জেনেছি তাজীন টাইফয়েড জ্বরে মাত্র তিন মাস বয়সে বাম পায়ের কর্মক্ষমতা হারানোর পর খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয় তাকে। বাম হাতটিও অস্বাভাবিক হয়ে যায়। কম্পিউটারের কি-বোর্ডে হাত রাখা ছাড়া তেমন কিছুই করা যায় না।

এমন পরিস্থিতিতেও নিজের জীবনের মোড় ঘুরিয়েছেন। সহজভাবে জীবনের সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছেন। এসব কারণে এখন অন্যদের জন্য পথ প্রদর্শক তিনি। আমরা শিক্ষকরা তাজীনকে নিয়ে খুবই আশাবাদী।

ইবাংলা / জেএন / ১৬ মে, ২০২২

অনুপ্রেরণাসবার
Comments (0)
Add Comment